মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি: আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষকদের

দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন তিন সপ্তাহে গড়াচ্ছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চান। দাবি আদায়ে আন্দোলনের একুশতম দিনে মঙ্গলবার থেকে কাফনের কাপড় পড়ে আমরণ অনশনে যাবেন।
সোমবার বাংলাদেশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া এবং সাধারন সম্পাদক কাওছার আহমেদ ঢাকা টাইমসকে এসব কথা জানান।
গত ১১ জুলাই থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ব্যানারে এই আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক সুবিধাসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্যের নিরসন চেয়ে তাদের এই আন্দোলন।
বিটিএ সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া বলেন, ‘একই কারিকুলামের অধীনে একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। এবার দাবি আদায় না করে আমরা ফিরব না।’
‘আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আজকের (সোমবার) মধ্যে আমরা কোনো সুখবর পাবো। আর তেমন কিছু না হলে আমরা শিক্ষকরা মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন করব।’
বিটিএ সাধারন সম্পাদক কাওছার আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন রয়েছে। এ জন্যই তিনি জাতীয়করণের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শর্তহীন পাঁচ মিনিটের সাক্ষাৎ চাই। আজকের (সোমবার) মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ না পেলে মঙ্গলবার থেকে কাফনের কাপড় পড়ে আমরণ অনশনে যাবো।’
কাওছার আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনেক অবহেলিত। সরকারি স্কুলে আমাদের সমকক্ষ শিক্ষকরা একই কাজ করে যে উৎসবভাতা, বাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক বেতন-ভাতা পান, তার অর্ধেকও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের দেওয়া হয় না। তাই সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক সুবিধাসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্যের নিরসন চাই আমরা।’
এদিকে প্রতিদিনের মতো সোমবারও সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির শুরুতে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২০ হাজার ৯৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে) মাধ্যমিক স্তর পড়ানো হয়। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি, বাকি ২০ হাজার ২৭৬টি বেসরকারি।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক স্তরের এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২ জন। আর মোট শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এমপিওভুক্ত। অর্থাৎ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশসহ কিছু ভাতা পান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে ‘বৈষম্য’ নিরসন চান আন্দোলনরত বেসরকারি শিক্ষকরা।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা নানা সময় উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকী অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতি করেছেন।
এছাড়া শিক্ষকেরা তাদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বারবার স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তবে কোনো ধরনের অগ্রগতি না হওয়ায় এবার তাঁরা জাতীয়করণের দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/কেআর/ডিএম)

মন্তব্য করুন