যমুনায় পানি বৃদ্ধি: সারিয়াকান্দিতে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২১:৩৭| আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২২:০৯
অ- অ+

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার শতাধিক পরিবার ভিটেহারা হয়ে এখন অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের পাশে।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই এলাকাগুলো একটু একটু করে নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। পরে বিকালে হঠাৎ করেই ভাঙনটা তীব্র আকার ধারণ করে আধাঘন্টার মধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলা হচ্ছে।

নদীগর্ভে বাড়ি হারানো রওশন আরা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাবার পর মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে তিনি থাকতেন। দিনকাল ভালোই কাটছিলো তার। কিন্তু নদীগর্ভে তাদের বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। পরিবারের সকলে মিলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাড়ি ঘর সব নদীর মধ্যে গেলো। এখন কি করে খাবো। কোথায় গিয়ে থাকবো।

আব্দুল মালেক নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, চাকচিক্য সাজানো গোছানো বাড়িঘর ছিলো। মুহুর্তের মধ্যে যমুনা নদী এসে আমার বাড়িটাকে খেয়ে ফেলেছে। আমার বাড়ির সামনে প্রায় দুই আড়াই বিঘা সম্পদ ছিলো সেটিও নেই। আমাদের এদিককার অধিকাংশ মানুষেরই সম্পত্তি নাই। যা ছিলো সব নদীগর্ভে চলে গেছে।

সালমা বেগম বলেন, বাড়িঘর শুধু দেবে যাচ্ছিলো। জিনিসপত্র যে গুছিয়ে বের করবো সেই সময়টুকুও দেয়নি। মুহুর্তের মধ্যেই সবকিছু নদীর মধ্যে চলে গেছে।

পানি উন্নয়নবোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ইউনিয়নের ইছামারা, টিটুর মোড়, ফকিরপাড়া, খোকার মোড় এই চারটি এলাকার মোট ১২০০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে টুকরো টুকরো করে ভাঙনে সৃস্টি হয়েছে। এর মধ্যে ইছামারাতেই এক জায়গাতে ২০০ মিটার আরেক জায়গাতে ২০০ মিটার। এই জায়গাগুলোতেই একবারে ২০-২৫ ফিট দেবে গেছে। বগুড়াতে মোট ৪৫ কিলোমিটার নদীর তীর। এর মধ্যে ১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্লক দিয়ে পার্মানেন্ট কাজ করা আছে। এই ১৯ কিলোমিটারে ভাঙন নেই। যে জায়গাগুলোতে অরক্ষিত আছে সেখানেই গিয়ে পানি আক্রমণ করছে। বাকিগুলো করার জন্য একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দেয়া আছে। ওটা পাশ হলেই বাকিগুলোও করা হবে। যে জায়গাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলো সেখানে আপনারা আগে থেকেই প্রিভেন্টিভ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী ভাঙনের তো পূর্বাভাস মানে কোন জায়গাটা ভাঙবে সেটা তো আমরা ওইভাবে জানি না। এরপরেও আমরা আজকে প্রায় ১০ কিলোমিটার জায়গা সার্ভে করে দেখেছি। কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা সেটা দেখছি। মনিটরিং করছি।

প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির আরো বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ আছে। আমরা ফেলছিও। কিন্তু পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পর হঠাৎ করে ম্যাসিভ আকার ধারণ করলো। এটা বিগত ১০ বছরেও এরকম নদী ভাঙন এলাকাবাসী দেখেনি। আগে যে ভাঙনগুলো ভাঙছে এবং নতুন করে যে ভাঙনগুলো দেখা দিলো সেখানেও কাজ হচ্ছে। যমুনা তো আমাদের সময় দেয় না। ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই সব শেষ করে দেয়।

নদীভাঙন রোধে আপনারা কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ২৫০ কেজি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ, ৬ মিটার লম্বা এবং ১.২৫ মিটার চওড়া বালুভর্তি জিও টিউব আমরা ব্যবহার করছি। আমরা ঘটনাস্থলগুলোতে আছি। কাজ করছি।

নদীর পানি এখন বিপৎসীমার কত সেন্টিমিটার উপরে এবং পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে আরো কতদিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২/৩ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেল বলেন, একশ পরিবাবের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, কুড়ি মিনিটের একশ পরিবারের সব কিছু ভেসে গেছে। আরও দুশ পরিবার বাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশ্রয়হীনদের ইউনিয়ন পরিষদের পাশে দড়িপাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে উদ্ধার কাজ শুরু করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’, ভয়াবহ তাণ্ডবের আশঙ্কা
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত
গরমে দিনে কতটুকু পানি পান করলে শরীর সুস্থ থাকবে
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা