মুখ খুললেন এডিসি সানজিদা, এডিসি হারুনের সঙ্গে তার ‘বিশেষ সুসম্পর্ক’ ঘিরেই শাহবাগ থানাকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:০৮| আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:২৬
অ- অ+

সানজিদা আফরিন নিপা। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৩৩ ব্যাচের কর্মকর্তা। বর্তমানে পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার। সদ্য বরখাস্ত হওয়া পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদের সঙ্গে সানজিদার ‘বিশেষ সুসম্পর্ক’।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী সানজিদা। তবে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো নয়। এর কারণ, সানজিদার সঙ্গে এডিসি হারুনের ‘বিশেষ সুসম্পর্ক’।

সানজিদা-হারুনের এই ‘বিশেষ সুসম্পর্কের’ জের ধরেই শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নির্মমভাবে পেটানোর ঘটনা ঘটে। হারুন বরখাস্ত হলেও এই কদিন গণমাধ্যম থেকে অনেকটাই আড়ালে ছিলেন সানজিদা।

ঘটনার তিন দিন পর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কাছে ছাত্রলীগ নেতাদের থানায় নিয়ে মারধরের ঘটনার আগের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদা।

তার ভাষ্য, কার্ডিয়াক সমস্যার জন্য শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে যান তিনি। ল্যাব এইডে তার রেগুলার চিকিৎসক না থাকায় এডিসি হারুনকে বারডেমের একজন চিকিৎসকের সিরিয়াল নিয়ে দিতে বলেন। এরপরই এডিসি হারুন সেখানে যান ও চিকিৎসক ম্যানেজ করে দেন।

সানজিদা বলেন, ‘পরে চিকিৎসকের কথা মতো ব্লাড টেস্ট, ইকো ও ইসিজি করতে থাকি। সেসময় আমার হাসব্যান্ড ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এডিসি হারুনের ওপর হামলা চালান। তারা আমার গায়েও হাত তোলেন। তারা তার স্বল্প বসন দেহের ভিডিও করেন। পরে থানা থেকে পুলিশে এসে এডিসি হারুনকে উদ্ধার করে।

নিচে তার বক্তব্য তুলে ধরা হলো—

বেশ কিছুদিন ধরে আমার কিছু কার্ডিয়াক প্রবলেম হচ্ছিল। ২০১৯ সাল থেকে আমি হাইপার টেনশনের রেগুলার মেডিসিন খাচ্ছি। লাস্ট ৪-৫ মাস ধরে একটু প্রবলেমটা বেড়েও যায়। লাস্ট দুই তিন সপ্তাহ ধরে একটু চেস্ট স্পিনটা বেড়ে যাচ্ছিল। লাস্ট শনিবার ব্যথাটা একটু বাড়ে, ওই দিন আমার মনে হলো একটু ফ্রি সময় আছে আজ। টাইমও বের করতে পারছি, তো আজকেই ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে কোনো ডাক্তার আমি দেখাতে চাচ্ছি। একটু আর্জেন্টও ছিল। ল্যাবএইডে যে স্যারকে আমি দেখাই সে স্যার দেশে নেই। ওইদিন অফিস থেকে যাওয়ার সময় আমার মনে হলো ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের কোনো ডাক্তার আমি দেখাতে পারি। ইমারজেন্সি যেহেতু আমার একটা ডক্টর অ্যাপয়েন্টমেন্ট দরকার ছিল সেজন্য আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে যে স্যার... আছে সে স্যার পরিচিত, এজন্য আমি সিরিয়ালের জন্য এডিসি হারুণ স্যারকেই বলি। আমার একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেয়া সম্ভব কিনা? আনসার মাধ্যমে আমাকে একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন, সন্ধ্যার পরে সেই সিরিয়ালটা ছিল। আমি সন্ধ্যা ৬টার পর সেখানে যাওয়ার পরে জানতে পারি ড. স্যার কোনো একটা কনফারেন্সে আছেন। একটু আর্জেন্ট হওয়ার কারণে আমি আবার হারুন স্যারকে কল দিয়ে বলি যে স্যার একটু কনফারেন্সে আছে হয়তো আজকে উনি দেখবেন না। আর্জেন্ট যেহেতু দরকার সেজন্য অন্য কাউকে ম্যানেজ করে দেয়া যায় কিনা। তখন মনে হয় উনি আশেপাশে ছিলেন সেজন্য আমাকে বললেন আপনি একটু বসেন আমি এখানে এসে কথা বলে দেখি। বেশ কিছুক্ষণ পর স্যার সেখানে আসেন এবং ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন ও একজন ডক্টর ম্যানেজ হয়। ডাক্তার আমাকে দেখে বেশ কিছু টেস্ট দেন। ব্লাড টেস্ট করানো হয়েছিল, ইকো করানো হয়েছিল, ইসিজি করানো হয়েছিল।

যে সময় আসলে ইন্সিডেন্ট (ঘটনার সূত্রপাত) সেসময় আমি ইটিটি করাচ্ছিলাম। করাতে ২০-২৫ মিনিটের মতো সময় লেগে যায়। তখন আমি ইটিটি রুমেই ছিলাম। ইটিটির যখন শেষ পর্যায়ে তখন আমি বাইরে একটা হট্টগোল শুনতে পাই।

প্রথম তখন আমি চেচামেচির শব্দ শুনতে পাই, তখন যে শব্দটি আমার কানে আসে, তখন স্যারই চিৎকার করে বলছিলেন ভাই আপনি আমাকে গায়ে হাত তুললেন কেন। আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না

আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল ওখানকার অন্য কারো ঝামেলা বা কিছু হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে আমি দেখতে পাই যে হাজবেন্ডকে। ওখানে উনি কেন গিয়েছেন, কী করতে গিয়েছেন আমি জানি না।

সেসময় উনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিলো এবং উনি খুব উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। সেসময় তার সঙ্গে আরও বেশি কয়েকজন ছেলেও ছিল আমি তাদেরকে চিনি না। তারা স্যারকে মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে রুমের ভেতরে নিয়ে আসেন। রুমের ভেতরে এসেও তারা স্যারকে মারছিলেন। স্যার তখন মার থেকে বাঁচার জন্য ইটিটি রুমের একটা কোণায় গিয়ে দাঁড়ান।

এখন সময় আনফরচুনেটলি আমার হাজব্যান্ড ওই ছেলেগুলোকে বলল তোরাই দুজনকে ভিডিও কর। তখন আমি ইটিটির পোশাকে ছিলাম, সবাই জানেন যে হসপিটালের পোশাকগুলো কীভাবে থাকে, তখন আমার পোশাকটা শালীন অবস্থায় ছিল না। তখন আমি আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে সাউড করছিলাম যে রুমের ভেতরে তো এত লোকজন ঢোকার কথা না। এতগুলো লোক নিয়ে কেন ঢুকেছেন এখানে। আবার তাদেরকে বলছেন আমার ভিডিও করার জন্য। এ সময় তিনি আমাকেও দুই তিনটা চড় মারেন, এমন পরিস্থিতিতে আমার ড্রাইভার ছুটে আসে। সে আমাকে বাঁচাতে গেলে আমার ড্রাইভারের ওপর দিয়েও আমার গায়ে হাত তোলা হয়। একটা পর্যায়ে যারা ভিডিও করছিল এমন একটা ছেলের কাছ থেকে আমি তার মোবাইল ফোনটা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। ওর সঙ্গে তখন আমার হাতে হাতের মধ্যে একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়ে যায়। আমি চাচ্ছিলাম না যে আমি ওই পোশাকে আছি, আমি একজন মহিলা, আমার কেউ আমাকে কেউ ভিডিও করুক।

স্যার যেহেতু কলিগ, সেহেতু স্যার আমার ইটিটি রুমের বাইরে ছিল। তাদের ইনটেনশন দেখে মনে হচ্ছিল তারা দুজনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটা ছবি তোলা বা ভিডিও বানাতে যেটা পরবর্তীতে তারা ব্যবহার করবে।

ছোট একটা বিষয় তারা বিশ্রী সিচুয়েশন তৈরি করে ফেলে। স্যারকে সেসময় ওখান থেকে বের করার চেষ্টা করছিলেন তারা। তখন যে পরিস্থিতি ছিল, পরিস্থিতির কারণে স্যার বলেছিলেন আপনারা তো ওখান থেকে বের করে আমাকে মেরে ফেলবেন। স্যার ওদেরকে বলেছিলেন, আমি থানার ফোর্সদের আসতে বলেছি, তারা এলে আমি এখান থেকে বের হব। এরমধ্যে হসপিটালের সিকিউরিটি যারা ছিলেন তারা আসলেন, স্যার তখন নিজের সেফটির জন্য সেখানেই অবস্থান করছিলেন, ১০-১৫ মিনিট পর থানা থেকে ফোর্স এলো। তারপর তারা নিচে যায়।

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/ইএস/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা