পুড়েছে স্বপ্ন, হারিয়েছে সব, বুকভরা আর্তনাদ তাদের

‘দেশ গাঁওয়ে সব বিক্রি করে চলে এসেছি ঢাকা। উঠেছি ভাড়ার একটি বাসায়। ছেলের একটি দোকান করে দিয়েছিলাম এই মার্কেটে। ভেবেছিলাম আবার নতুন করে পথচলার শুরু হবে। কিন্তু পাষণ্ড আগুন বাঁচতে দিলো না আমার স্বপ্ন। বাঁধতে দিলো না ঘর।’ — কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী বাবু বৈদ্যর মা সন্ধা বৈদ্য।
রাজধানীর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছায় হয়েছে পাঁচ শতাধিক দোকান। পুড়েছে শত শত মানুষের কষ্টে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের দোকান। এমনই এক দোকানি বাবু বৈদ্য। পদ্মার ওপারে বাড়ি। বাড়ির সব কিছু বিক্রি করে পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছেন রাজধানীর বুকে। এসেই রাজধানীর কৃষি মার্কেটে প্রায় আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে দিয়েছেন দোকান। হঠাৎই আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে ফোনের শব্দে ভেঙে যায় ঘুম। ফোনের ওপাশ থেকে বলতে শোনেন মার্কেটে আগুন লেগেছে। সব ফেলে দৌঁড়ে এসেও বাঁচাতে পারেননি কোনো কিছু।
বাবু বেদ্য বলেন, ভোর ৪টার দিকে ফোন আসে। ফোন ধরতেই বলে মার্কেটে আগুন লেগেছে। শুনেই আমি দৌড়ে আসি। এসে দেখি মার্কেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। সব পুড়ে শেষ হায়ে গেছে। এখন কী নিয়ে বাচঁব?
তিনি বলেন, আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে এই দোকান করেছি। এখানে আমার দুইটি দোকান ছিলো। দুইটা দোকানেই আলু, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ গুড়া ও হলুদ গুড়া পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতাম। আগুনে কোন কিছুই সরাতে পারি নাই। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
পোড়া দোকানে দাড়িয়ে বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ করছিলেন বাবু বৈদ্যর মা সন্ধ্যা বৈদ্য। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে দোকান করে দিয়েছিলাম সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। এখন কিভাবে বাঁচবো? কিভাবে ধার দেনা শোধ করবো? কোথায় থাকবো? কি খাবো?
‘দেশ গাঁওয়ে সব বিক্রি করে চলে ঢাকা চলে আসছি। ভাড়ার একটি বাসাই থাকি। দেশ থেকে যে টাকা আনছিলাম তা দিয়ে ছেলের দোকান করে দিয়েছিলাম। ধার দেনাও করেছি অনেক টাকা। আমার কিচ্ছু নাই সব শেষ’ , বলেন সন্ধ্যা বৈদ্য।
বিলাপ করতে করতে সন্ধ্যা বৈদ্য বলেন, আমার সর্বশেষ সম্বল বাড়ির ভিটা ছিলো। সেটি বিক্রি করে আমার ছেলেকে দোকানে মালামাল তুলতে টাকা হাতে তুলে দিয়েছি। আমার ছেলের দোকানটি পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। একটা মালও বের করতে পারি নি। আমি এখন থাকবো কোথায়। আমার থাকার জায়গাটিও বিক্রী করে দিয়েছিলাম স্বপ্ন দেখে। আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এখন খাবো কি, থাকবো কোথায়? কিভাবে বাসা ভাড়া দিবো? আমার যা সম্বল তার সব শেষ।
এর আগে বুধবার রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর ৯ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বর্তমানে সেখানে ১৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।
(ঢাকাটাইমস/১৪ সেপ্টেম্বর/কেআর/কেএম)

মন্তব্য করুন