বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বন্ধ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতি তৎপরতার নেপথ্যে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:১১ | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৫৪

রাজধানীর বনানীতে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতে একেবারে উঠে পড়ে লেগেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগের নোটিশের ধারবাহিকতায় রবিবার অনেকটা তড়িঘড়ি করেই প্রতিষ্ঠানটিকে আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

একটি স্বনামধন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন অতি তৎপরতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে। এই তৎপরতার পেছনে অন্য কারো অসাধু ইচ্ছা কাজ করছে কি না সেই জিজ্ঞাসা সংশ্লিষ্টদের। প্রতিষ্ঠানটিকে গুটিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগা নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যাচ্ছে চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ঘরানায়।

প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ৭ কার্যদিবস সময় দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে নোটিশ পাঠিয়েছে, সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে রবিবার ফের নোটিশ পাঠানো হয়।

এ অতিতৎপরতার পেছনে কে? প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বন্ধ হলে কে লাভবান হচ্ছেন? এটি বন্ধের পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে কোন শক্তি? কাদের হাত রয়েছে, স্বার্থ রয়েছে—ঘুরপাক খাচ্ছে এসব প্রশ্নও।

তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্য হচ্ছে—‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী বৈধ পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’

অভিযোগ উঠেছে, বনানীর ১২ নম্বর রোডে অবস্থিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চোখ পড়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পুত্র রাহাত মালেক শুভ্রের। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় যুক্ত হতে চেয়েছিলেন।

মন্ত্রীপুত্রের ইচ্ছা মেটাতে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট সেন্টার মালিক কর্তৃপক্ষ অপারগতা জানালেই বেঁকে বসেন রাহাত মালেক। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিয়ে অভিযানের নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের পাঁয়তারার সূচনা করেন।

গুলশান-বনানী এলাকায় শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও কেবল প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট পরিদর্শন করে তিন ধরনের অসঙ্গতি দেখিয়ে একই দিনে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার অফিস আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যাকে সম্পূর্ণ একতরফা, ফরমায়েশি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ।

রবিবার প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১০/০৯/২০২৩ তারিখে লাইসেন্সবিহীনভাবে পরিচালনারত আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্য সাত কর্মদিবস উল্লেখপূর্বক যে নোটিশ প্রদান করা হয় সেটি সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ ও জনস্বার্থ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যক।’

‘এমতাবস্থায় এতদ্বারা আপনার প্রদত্ত সময়সীমা সাপেক্ষে অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে।’

একাধিক সূত্রে ঢাকা টাইমসের কাছে তথ্য আছে, খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে চলতি বছরের শুরুর দিকে জানান, যে স্থানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ভাড়ায় স্থাপিত সেটি তিনি কিনে নিতে বায়না করেছেন। তাই জায়গাটি ছেড়ে দেওয়া উত্তম হবে। আর সেটি না হলে তাকে (রাহাত মালেক) যেন উপর্যুক্ত শেয়ার দিয়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেডের মালিকানায় যুক্ত করা হয়।

সূত্রে জানা যায়, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করে জানান যে, বনানীর এই স্থানে ভাড়াসহ কয়েকটি বিষয়ে আদালতে মোকদ্দমা চলছে। এমতাবস্থায় মন্ত্রীপুত্রের ত্রুটিযুক্ত জমি কেনার সঙ্গে জড়িত না হওয়াই শ্রেয়। কিন্তু এই পরামর্শই সম্ভবত কাল হয় প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট মালিক কর্তৃপক্ষের জন্য।

সূত্রগুলো ঢাকা টাইমসকে জানায়, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক পরিদর্শন করে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য; অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি; মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা এই তিনটি কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ আপিল করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়।

তথ্যানুসন্ধানে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি এ বছরের ১৮ জানুয়ারি ৬ কোটি টাকা দলিলমূল্যে কিনে নেন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইমরান মুস্তাফিজ। যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রেন্টাল কোর্টের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৪৫৯ বর্গফুট বাড়ির ভাড়াও নিচ্ছেন ইমরান মুস্তাফিজ।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো মানুষকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা দেয় প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট। যাত্রা শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গত ১৬ বছরেও কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুত্র রাহাত মালেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখানোর পরই শুরু হয়েছে একের পর এক সরকারি দপ্তরের অতি-তৎপরতা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মের, আইনের ব্যত্যয় ঘটলে নিশ্চয়ই জনকল্যাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু একই এলাকায় আর কোনো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন না করে একটি প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাতারাতি ফরমায়েশি অসঙ্গতি খুঁজে পায় তখনই হাজারো প্রশ্ন ওঠে।

জানতে চাইলে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, পরিদর্শন করে কোনো কারণ না দর্শিয়ে রাতারাতি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ আসলে উদ্দেশ্যমূলক ও বৈষম্যমূলক।

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/আরআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :