'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে আগুন শনাক্ত হলে পুড়ত না বঙ্গবাজার-কৃষি মার্কেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৮| আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০০
অ- অ+

বঙ্গবাজার মার্কেটে প্রায় তিন ঘণ্টা মিটমিট করে আগুন জ্বলেছে। কৃষি মার্কেটেও দেরিতে খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। দুই মার্কেটেই যদি সূত্রপাতের শুরুতেই আগুন শনাক্ত করে নির্বাপণ করা যেত; তাহলে এতো ক্ষয়-ক্ষতি হত না। পুড়ে ভস্মিভূত হত না মার্কেট দুটি।

বুধবার রাজধানীর বনানীর এক হোটেলে ‘টেকনোলজি ইন ডিআরএম টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ: অপর্চুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব এআইবিএস সলুশন ইন হ্যাজার্ড এনটিসিপেশন’ একটি অ্যাডভোকেসি ওয়ার্কশপে এসব কথা বলেন বক্তারা।

দুর্যোগে সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক মডেল প্রদর্শনের জন্য বেসরকারি খাতের সঙ্গে শীর্ষক এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।

ব্যবসায়িক ও শহুরে সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্যোগে সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য ইউরোপীয় সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড অপারেশনসের (ইকো) অর্থায়নে স্ট্রেন্দেনিং আরবান পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইডের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘এআই সিস্টেমে ডিটেক্টর সিস্টেম অবশ্যই উপকারি ও প্রযুক্তিবান্ধব। আমরা কমিউনিটিবান্ধব অনেক কিছুই করি না। কমিউনিটিকে আমাদের উন্নত করতে হবে।’

অগ্নিঝুঁকি হ্রাসে কমিউনিটিবান্ধব ব্যবস্থার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকার প্রত্যেক ভবনে পানির ট্যাংক আছে। সেটার সঙ্গে যদি ফায়ার হাইড্রেন্ট সংযুক্ত করে সড়কে স্থাপন করা হয়, তাহলে অনেক বেশি কার্যকর হবে প্রয়োজন মুহুর্তে।’

‘ম্যানুয়াল দিন শেষ, এখন অটোমেটিক সিস্টেমের যুগ। ড্রোনই এখন অনেক কিছু করতে পারছে। আমাদের দেশে প্রচুর মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে। তাদের আমরা ব্যবহার করতে পারি। নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা-পরিকল্পনা কাজে লাগানো সম্ভব।’

তবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে (এআই) ইথিক্যালি যেন ব্যবহার করা যায় তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সামসুল আরেফিন বলেন, ‘এটা সত্য যে, এআই ভবিষ্যতে বড় ঝুঁকিও তৈরি করছে। অনেকের চাকরি খেয়ে ফেলতে পারে, সাইবার ঝুঁকি তৈরি করছে। আবার এআই'কে যদি সঠিকভাবে আমরা ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে এটি আরও ব্যাঘাত করতে পারে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের জাতীয় সমস্যা কি না! জানি না, যে যার মতো চলছি, সমন্বয় নাই। ভাল আইডিয়া আমরা স্বাগতম জানাই। ইনোভেটিভ আইডিয়া আমরা উৎসাহিত করি।’

তিনি কর্মশালায় সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে আগুন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রশংসা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) যুগ্ম মহাসচিব জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা স্বত্ত্বেও সকল প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনতে পারিনি। এআই ডিটেক্ট সিস্টেম কোনো রকেট সিস্টেম নয়। চাইলেই সম্ভব এআই পদ্ধতিতে ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বার্তা নিশ্চিত করা।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাইওয়ানে এটা চালু হয়েছে। ঢাকায় চীনা সহযোগিতায় বাণিজ্য মেলার যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটা কিন্তু বিশ্বসেরা আপডেট টেকনোলজিতে তৈরু করা। এটাও এখন বাংলাদেশে চালু হয়েছে।’

তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটে আগুন লাগলেও ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়নি। কারণ সেখানে ডিটেক্টর ছিল না। এর ক'দিন পরই সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন লেগেছিল। কিন্তু সেখানে আগুন খুব দ্রুত শনাক্ত ও নির্বাপণও সম্ভব হয়েছে। কারণ সেখানে প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল শনাক্তকরণ ব্যবস্থার কারণে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বর্ণনা করার জন্য কর্মশালায় এই ভিত্তিক মডেল প্রদর্শন করা হয়। এআই কীভাবে কাজ করে সেটা প্রদর্শন করে কর্মশালায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আগুন লাগলে এআই সিস্টেমে সংকেত আসবে। যাতে করে দ্রুত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সুপার প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক। এমনিট পৃথিবীর কোথাও নেই। ঢাকায় পার স্কয়ার ফিটে মানুষ বসবাস করে ২০ হাজার মানুষ। ঢাকার জলাশয় কমছে। মাঠ কমছে। চারটা জলাশয় ভরাট করে ভবন করা হয়েছে। পানির সোর্স কমছে। এই শহর অবশ্যই ধ্বংস হবে যদি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে যায়। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তাই বলে। তখন কিন্তু ঢাকা আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছি। আমরা প্যানিক (আতঙ্ক) তৈরি করতে চাই না। কিন্তু এটা তো বাস্তবতা। কিন্তু কেউই এটা ডিনস্ট্রাকশন ও রি-কনস্ট্রাকশনকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ক্ষতি যারই হোক, ক্ষতিটা দেশের।’

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান। বিভাগীয় প্রধান, (ডিআরএম অ্যান্ড ইআর ইউনিট), ইউনাইটেড পারপাস মাসুদ রানা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/এসএস/ইএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মির্জাপুরে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর কালুখালী বাজারে আগুন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা
কোরবানির পশুর হাট সড়কে বসানো যাবে না
ট্রাম্পের যে কৌশলে থেমে যায় পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা