মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা: দেশজুড়ে তোলপাড়

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩৪ | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১৭

তালিকায় কে কে আছেন? ইতিমধ্যে একান্ত আলাপে একে অপরকে প্রশ্ন করছেন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা। কেউ কেউ এই সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন— তাদের নামও শোনা যাচ্ছে।

বিশেষ করে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বা আছেন— অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি, রেঞ্জ ডিআইজি, র‌্যাব কর্মকর্তাসহ এমন একাধিক কর্মকর্তার নামও ভেতরে ভেতরে উচ্চারিত হচ্ছে। অবসরে গেছেন কিন্তু অতীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তারাও আছেন ভিসানীতির আওতায়।

নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরাও কি এই ভিসানীতির আওতায় আছেন? এটা নিয়ে খোদ প্রশাসন ক্যাডারে কৌতূহল আছে।

শুধুই কি মন্ত্রী বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন, তারাই পড়বেন এ ভিসানীতির আওতায়- তা জানার আগ্রহও আছে বেশ। এসব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্রই চলছে কথাবার্তা।

শুধুই কি সরকারি দল? কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে আছে বিএনপি ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলগুলোর নেতাদের মধ্যেও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় কারা কারা আছেন- তা নিয়ে নানান আলোচনা চলছে। ঢাকা টাইমস সম্পাদক সূত্রে জানতে পেরেছে, একজন প্রতিমন্ত্রীও আছেন এই তালিকায়।

গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

একপর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশির ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ শুরুর কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।

তবে বাংলাদেশি কোন কোন ব্যক্তির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেই তালিকা প্রকাশ করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বলা হচ্ছে- মার্কিন নীতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না। তবে যার যার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা আসার পর শুক্রবার রাতে এর প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধের আওতায় পড়াদের সংখ্যার বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। তবে এটুকু বলতে পারি সেই সংখ্যাটা খুব বড় নয়, ছোট। এ ব্যাপারে আমরা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতীতে নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যখন আলোচনা করেছিলাম তখন দুটি রাজনৈতিক দলের কথা উঠেছিল। এর একটি বিএনপি অপরটি জামায়াত।’

অন্যদিকে শনিবার দিনভর আলোচনায় ছিল এই ভিসানীতি। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চায়ের দোকান পর্যন্ত চলছে আলোচনা। নানা প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

যা বললেন ওবায়দুল কাদের

মার্কিন ভিসানীতি সম্পর্কে সিঙ্গাপুর থেকে গতকাল দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না আওয়ামী লীগ। ভিসানীতি কতটা বাস্তবায়ন হবে সেটা দেখব। ভিসানীতির ক্ষতিতে পড়বে বিএনপির ওপর, আওয়ামী লীগে নয়। ক্ষতি হবে বিএনপিরই।’

এককভাবে সরকার দায়ী: মির্জা ফখরুল

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করার ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য ‘অপমানজনক ও লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ জন্য সরকারকে এককভাবে দায়ী করেছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’

এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।’

বিরোধী দলের সদস্যদের ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধের যে কথা বলেছে, এ নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয় বলে দলটির নেতারা বলছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, সরকারের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীনদের জন্যই এটি চিন্তার বিষয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এসেছে। এটি আমাদের দেশের জন্য প্রাপ্য নয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘এ জন্য বিএনপিসহ বিরোদী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে সরকারই দায়ী।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে বিএনপি ইতিবাচক হিসবে দেখছে, মির্জা ফখরুল ইসলামের কথায় তা মনে হয়। তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন বিশ্বে গণতন্ত্রের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।’

ভিসানীতি নিয়ে সরকার নয়, বিএনপি চাপে আছে: শিক্ষামন্ত্রী

শনিবার দুপুরে রাজশাহীর মাদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসায় ‘শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূমিকা ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ভিসানীতি নিয়ে সরকার নয়, বিএনপি চাপে আছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভিসানীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। ভিসা নিতে নিয়ে বিরোধী দলেরই চাপ অনুভব করার কথা। এটি তাদের ভাবার কথা। সরকার ও নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ করতে চায়। তাই বর্তমান সরকার ভিসা নীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছে না।’

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি প্রয়োগ করে ‘খুব ভালো’ করেছে: সালমান এফ রহমান

রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে খুব ভালো করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান

বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বলেছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা বিধিনিষেধ সরকার কীভাবে দেখছে প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে খুব ভালো করেছে। তারা বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।’

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ ভায়োলেন্স (সহিংসতা)। ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের (বিরোধী দল) নামও আছে।’

এই ভিসা বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাণিজ্যের সঙ্গে এই ভিসা বিধিনিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেয়নি। সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও যুক্তরাজ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি।’

ভিসা নীতি কোনো দল বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসে ইনডোর প্লেগ্রাউন্ড উদ্বোধন শেষে শনিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতি কোনো দল বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নয়।’

তিনি বলেন, ভিসা নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার, তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার।’

ভিসা নীতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে আসন্ন নির্বাচনের অন্তরায় যারা হবেন, নির্বাচন যারা বাধাগ্রস্ত করবেন এবং নির্বাচন পণ্ড করার চেষ্টা করবেন তাদের জন্য এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। আমরা মনে করি এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফ্রিকার কোনো দেশে গিয়ে বলেছিলেন তোমরা যদি উন্নয়ন দেখতে চাও, দেশকে এগিয়ে নিতে চাও তাহলে বাংলাদেশকে ফলো করো, শেখ হাসিনাকে ফলো করো।’

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :