শুধু আমেরিকা নয়, দেশের মানুষও আ.লীগ সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক আশা করে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। মনে করেছিলেন একটি সুরাহা হবে। অথচ, উনি ওখানে থাকতেই বাংলাদেশের প্রতি স্যাংশন জারি করলো আমেরিকা। এই ভিসানীতি দেশের জন্য সম্মানের নয়। আজকে শুধু আমেরিকা নয়, বাংলাদেশের মানুষও এ সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে।
রবিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা এবং মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম। বেলা ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর সময় বিজয়নগর নাইট এঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা তার কিছু হলে সকল দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক অধিকার লুৎফর রহমান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (শনিবার) দেশনেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি কখনও তার চোখে পানি দেখেনি। তিনি অনেক শুকিয়ে গেছেন। ঠিক কথা বলতে পারছেন না। আজকে দেশের গণতন্ত্র মুক্তির জন্য গৃহবন্দী হয়ে আছেন। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, আপনাদের কিছু করার থাকলে করেন, তার শারীরিক অবস্থা ভাল না। আমি আবারও বলছি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, তার কিছু হলে বিএনপির নয়, জনগণের ক্ষতি হবে, গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে, দেশের বড় ক্ষতি হবে।
তিনি বলেন, কয়েকদিম আগে জার্মান রাষ্ট্রদূত আমাদের অফিসে এসে জানতে চেয়েছিলেন বেগম জিয়া কেমন আছেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তাকে আমরা এভাবেই সম্মান করি। সারাবিশ্ব তাকে এভাবেই সম্মান করে।
তিনি বলেন, যে নেত্রী দেশের প্রয়োজনে গনতন্ত্রের জন্য গৃহিণী থেকে রাজপথে নেমেছেন। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে আজকে তাকে বিনা চিকিৎসায় আটক করে রেখেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা চালু করেছিলেন। এরপর চারটি নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সরকার যখন দেখলো নিরপেক্ষ নির্বাচনে সিটি নির্বাচনে তাদের পরাজয় হলো তখন বুঝতো পারলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই রাতারাতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করা হলো। সেদিনই খালেদা জিয়া বলেছিলো দেশে স্থায়ীভাবে সংঘাত সৃষ্টি হবে। হলোও তাই। ২০১৪ ও ১৮ সালে তাই হয়েছে। আজকে সারাদেশের মানুষ বলছে এ সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আজকে গণতন্ত্রকামী কোনদলই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না।
তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা পরিকল্পিতভাবে ১৫ বছর ধরে শুধু বিএনপি নয়, দেশের মানুষকে অত্যাচার করে যাচ্ছেন। এরা মানুষেরঅধিকার কেড়ে নিয়ে আবারও একতরফা নির্বাচন করতে চায়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে আন্দোলন স্তব্ধ করতে চায়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ মাহফিলে আসলেও অযথা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দোয়া মাহফিল থেকে বের হবার পর এককর্মীকে পুলিশ হঠাৎ করেই এসে বলে তুমি আমাকে গালি দিয়েছো। এ কথা বলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আবারও অতি উৎসাহী পুলিশ তৎপর হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলার মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, মুক্ত দেখতে চায়। যে বিচারকরা একটি বিষয়ে দুই রকমের রায় দিয়েছে, এ দেশের মানুষ একদিন তাদের বিচার করবে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিএনপির কোন মাথা ব্যাথা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু সাবেক ও বর্তমান আমলা মিটিং করেছে, তারা নাকি এই সরকারকে রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করতে চায়। এখন আবার পুলিশের কিছু কর্মকর্তা নাকি বৈঠক করে যাচ্ছে, যেভাবেই হোক, বিএনপির আন্দোলন দমন করতে হবে। মিটিং আর গোপনে করবেন না, প্রকাশ্যে করেন।
জয়ের সম্পটি বাজেয়াপ্ত করলে তার মায়ের কোন আফসোস নেই কিন্তু আমার আপত্তি আছে, এটাতো তার বাবার টাকা নয়, এ দেশের টাকা মেরে সে বিদেশ নিয়ে গেছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা প্রকৃতিকে জয় করতে পারে তারা এই স্বৈরাচারকে পতন ঘটাতে পারবে। আপনারা বৃষ্টির মধ্যে বসে ছিলেন। আপনারা পারবেন। বিচাপতিদের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, অন্যদের মুক্তি দেন, অথচ কেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না। এর বিচার একদিন দেশের মানুষ করবে। তার বিদেশ চিকিৎসা নেয়া সাংবিধানিক অধিকার। কেন যেতে দিচ্ছেন না? আদালত আমাদের সাথে নির্দয় আচরণ করে যাচ্ছে। যে মামলার তারিখ পড়তো এক মাস পর, তার ডেট দিচ্ছে সপ্তাহ মধ্যেই। এতে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? না । পারবেন না। এখন আমাদের পিছনে যাওয়ার জায়গা নেই, এখন সামনে যেতে হবে। ডু অর ডাই। এর মাঝামাঝি কোন জায়গা নাই।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, তোমরা প্রস্তুতি নাও, যে ধর্ষণ, লুট, দূর্নীতি করেছে তার ফল ভোগ করতে। কারণ বিদেশেতো আর যেতে পারবেন না। আপনাদের সমস্ত অপরাধের জেলে যেতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে কেন রাজনৈতিকভাবে মামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে রেখে মঈন খান বলেন, তার মামলার কোন স্বাক্ষ্য, প্রমাণ ছিল না। আজকে বলতে হবে এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। বেগম খালেদা জিয়ার অপরাধ এই দেশের মানুষ ভালোবসেন। তিনি জনগণের হয়ে কাজ করেন। সরকার মনে করছে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে, গণতন্ত্র হত্যা করা যাবে। কিন্তু এটা সম্ভব নয় । দেশের মানুষ বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাথায় তুলে রেখেছে।
আমীর খসরু বলেন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। ৫০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এই সরকার। বিএনপিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখে ভোট চুরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য মুক্তি ভিক্ষা মনে করছে সরকার। এই বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার, অন্যায়ের কাছে কখনো নত করেননি। সরকার তার চিকিৎসা নিয়ে খেলা করে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ প্রহর গুনছে কবে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করতে নেয়া হবে। নইলে দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। চলে যাওয়ায় সময় হলেও একটা ভালো কাজ করে যান।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, কয়েকদিন আগে বললো আমেরিকা যাবো না, কোনো কূল না পেয়ে এখন বলছে আমরা আমেরিকাকে স্যাংশন দিবে। আজকে সরকার বিএনপি, জনগণ এবং দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। মানবাধিকারের কথা বলেন, অথচ, তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসা দিচ্ছেন না। তিনি সরকার প্রধান নন, তিনি আওয়ামী লীগের প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর আসনে থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব ভাষায় কথা বলেন তাতে তিনি সংবিধান লঙ্ঘিত করেছেন। আপনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিবেন। আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বলছে আমরাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছি। বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর লাইন করে নিজেকে সেভ করার জন্য, প্রশাসনকে নয়। পরে বলবেন আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি করতে বলি নাই। ওরা অতিউৎসাহী হয়ে করেছেন। আজকে জনগনের শত্রু আওয়ামী লীগ, এই সরকারের পক্ষে না থেকে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেন।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধিকার লুৎফর রহমান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/জেবি)