খাদ্যের কোয়ালিটিতে আপস করা হবে না: খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান

খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা প্রধান কাজ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার।
তিনি বলেছেন, ‘কারো জেল জরিমানার মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ। তবে সেটি আইনসম্মতভাবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের মাধ্যমে। খাদ্যের কোয়ালিটিতে (গুনমান) কখনো আপস করা হবে না’।
রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভবনে বুধবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জি এআইএন) এসবিএন প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিউট্রেশন লেভেলিং অব প্রসেস ফুড’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, ‘খাদ্য অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে, যেটা নিরাপদ নয় সেটিকে কখনোই খাদ্য বলা যাবে না। আপনি যখন কোনো পণ্য বিক্রি করবেন সেটা সম্পূর্ণ নিরাপদ নিশ্চিত হয়েই বিক্রি করতে হবে এবং লেভেলিংয়ের মাধ্যমে খাদ্যের উপাদান এবং পুষ্টিগুন সম্পর্কে সবকিছু জানাতে হবে। কারণ ভোক্তার অধিকার আছে সে কী খাচ্ছে এবং তাতে কী পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো জানার। ভোক্তা যদি তার খাবারে লেভেলিংয়ের সঠিক পুষ্টিগুন না পায় তাইলে ভোক্তা আইনগত ব্যাবস্থা নিতে পারে। ভোক্তা টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট কিনেছে তার জানার অধিকার আছে খাবারের উপাদান-উপকরণ কী?’
নিউট্রেশন সম্পর্কে লেভেলিংয়ে বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় স্পষ্ট অক্ষরে খাদ্যের উপাদান লেখা থাকতে হবে উল্লেখ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রোডাক্টের লেভেলিংয়ে সব তথ্য দিতে হবে। অনেকের বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি থাকে, তাই খাবারে অ্যালার্জি আছে নাকি হাইলাইট করে লিখতে হবে তা। কোন খাবারে নিউট্রিশন, ফ্যাট, লবন, চিনির পরিমাণ কি সব লিখতে হবে বড় করে, যাতে সহজেই দেখা যায়। যদি ইংরেজিতে কেউ লেভেলিং করে তাকে বাংলায়ও লিখতে হবে।’
ইন্দোনেশিয়ায় খাদ্যে ভেজালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তারা খাদ্যে ভেজালে জিরো ট্রলারেন্স। আমাদের দেশেও খাদ্যে ভেজালে যাবজ্জীবন পর্যন্ত আইন আছে। আরও বিভিন্ন জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।’
বড় ধরনের ঝামেলা এড়াতে খাদ্যের প্যাকেজিং লেভেলে ভুল লেখা হয় জানিয়ে খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যাযন বলেন, ‘বড় ঝামেলার মধ্যে না পড়তে জেনেশুনে লেভেলিংয়ে বানান ভুল করা হয়। যেমন অনেক পণ্যের গায়ে ১০০ শতাংশ কোয়ালিটি সম্পন্ন লেখা থাকে। কিন্তু কোয়ালিটি বানান ‘কিউ’ দিয়ে না লিখে ‘কে’ দিয়ে লেখা হয়। কারণ সঠিক বানান লিখলে পণ্যটি ১০০ শতাংশ কোয়ালিটিসম্পন্ন- সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভুল তথ্য থাকলে বড় ধরনের জেল জরিমানার মধ্যে পড়তে হবে। তাই ঝামেলায় না পড়তে জেনে শুনে বানান ভুল করা হয়।’
বিজ্ঞাপনের নতুন নীতিমালার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন, পত্রিকা বা অন্যান্য মাধ্যমে অতিরঞ্জিত কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। বিজ্ঞাপনের নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। অতিরঞ্জিত যেসব বিজ্ঞাপন আছে সেগুলোও সরাতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে আমাদের কি শুধুমাত্র জ্ঞানের বা প্রশিক্ষণের অভাব? আসলে কিন্তু তা নয়। আমরা অনেকে জেনে শুনে বাণিজ্য বা বেশি অর্থ লাভের আশায় অনিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করে থাকি। আসলে আমাদের নৈতিকতার অভাব। এই নৈতিকতার জায়গাগুলো আমরা যদি নিজেরা নিজেদের কাছে কমিন্টমেন্ট করতে না পারি তাহলে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ সম্ভব নয়।’
‘ব্যবসায়ীদের জ্ঞান বা জানার অভাব নেই। তাদের নৈতিকতার অভাব, এজন্য তারা খাদ্যে ভেজাল মেশায়’ বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য রেজাউল করিম। সভাপতিত্ব করেন জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্যে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব অভিরূপ সাহা প্রমুখ।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সবকর্মকর্তাসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২৭ সেপ্টেম্বর/কেআর)

মন্তব্য করুন