সালথায় স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, প্রতিবাদের মুখে কাজ বন্ধ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা সদরে অবস্থিত সালথা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণে রডের রিং ছাড়াই রাতের আঁধারে বেজ, শর্ট কলম, গ্রেটবিম ও পিলার ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের রড, খোয়া ও বালি। ব্যাপক অনিয়মের এই দৃশ্য মোবাইলের ক্যামেরায় ধারণ করে স্থানীয়রা ফেসবুক পেজে পোস্ট করে প্রতিকার চেয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। এমন অবস্থায় কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়ন ও সড়ক লাগোয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হয়, সেজন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে সালথা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৪ মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছেন আফরিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সালথা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জাহিদ হাসান এমিলি অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার আমরা স্কুলে মাঠে ক্রিকেট খেলতে এসে দেখি বাউন্ডারি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছে। বেজ, গ্রেটবিম ও পিলার ঢালাইয়ে রড কম দেওয়া হয়েছে। রডের রিং ছাড়াই চারটি চিকন রড দিয়ে বেজ, গ্রেটবিম ও পিলার ঢালাই দিয়েছে। পরে আমি মোবাইলে ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়ি এবং ইউএনও স্যারকে বিষয়টি অবগত করি।
সালথা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. খায়রুল বাসার বলেন, আমাদের উপস্থিতে কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন তা করেনি। আমরা যখন উপস্থিত থাকি, তখন তাদের কাজের গতি থাকে কম। আর আমরা সরে গেলেই কাজের গতি বেড়ে যায়। তারা রাতের আঁধারে রড কম ও নিম্নমানের সামগ্রী এই কাজ করে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
কাজের ঠিকাদার আফরিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মিঠু বলেন, কাজটি আমি আরও দেড় বছর আগে পেয়েছি। আগের রেটে কাজটি হওয়ায় লাভ হবে না। তাই কাজটি আমি রাজবাড়ির এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তবে কাজে অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। এ সময় নিউজ না করার অনুরোধ করেন তিনি।
তবে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদার যোগসাজশে অনিয়মের মাধ্যমে কাজটি শেষ করা পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই অনুযায়ী কাজের সময় শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো তদারকি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে অনিয়মের খবর পেয়ে শনিবার (০৪ নভেম্বর) সকালে ঘটনাস্থলে আসেন ফরিদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সামচুদ্দিন তালুকদার। তিনি এসে নির্মাণ করা গ্রেটবিম ও পিলার ভেঙে রড বের করে অনিয়মের সত্যতা পান। ঘটনাস্থল থেকে সহকারী প্রকৌশলী সামচুদ্দিন তালুকদার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমি এখানে এসে দেখলাম, ঠিকাদার রাতের অন্ধকারে কাজ করেছে। কাজের বিষয় আমাকে অবগত করেনি। তারা চুরি করে কাজ করেছে। এই কাজ ভেঙে ফেলে নতুনভাবে সীমানা প্রাচীর করা হবে। সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্মকর্তা মো. আনিচুর রহমান বালি বলেন, অনিয়মের বিষয়টি জানার পর কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য জেলা অফিসে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
এ বিষয় বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফরিদপুর শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
(ঢাকাটাইমস/০৪নভেম্বর/এআর)

মন্তব্য করুন