দুই ঘণ্টায় শেষ গুলিস্তানের হোটেলগুলোর খাবার

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ২০:৩৯ | প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৭

দেশের বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ঘিরে দুই দিন ধরে সরগরম বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকা। সেখানের আশপাশের খাবার হোটেলগুলো বেলা ১টার পর থেকেই ভাতশূন্য হয়ে পড়ে।

গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। হোটেলগুলোতে খাবার সংকটের জন্য দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে স্লোগান মিছিলে মুখরিত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এলাকা। সকাল থেকেই গুলিস্তান এলাকাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকদের উপচেপড়া ভিড়।

দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আসছেন সেখানে। তাদের সঙ্গে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন হাজারো সমর্থক।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. রফিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা কয়েক হাজার লোক সকালে আইছি আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে। ড. আবুল হোসেন দিপু ভাই আজকে মনোনয়ন ফরম নেবেন। তার সঙ্গে আইছি। সকাল সাড়ে ১০টায় এইখানে আইসাও নাস্তা করতে পারি নাই। অনেক ভিড় ঠেইল্লা হোটেলে গিয়া দেহি খাওন নাই।’

কুমিল্লা থেকে এসেছেন উজ্জ্বল মিয়া। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সকাল ১০টায় গুলিস্তান আইছি। পার্টি অফিসে ভিড় ঠেইলা ১টার দিকে ঢুকতে পারছি। মানুষের ঠেলাঠেলি আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। খাবার পানিও পাচ্ছি না। দুপুর হইয়া গেছে। তয় মনে হয় না এই ভিড় ঠেইলা খাবার হোটেলের কাছে যেতে পারমু।’

গোপালগঞ্জ থেকে এসেছেন মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জীবনে এমন ভিড় আর দেহি নাই। পার্টি অফিসে ঢোকার পর অহন থাকতেও পারতেছি না, বের হইতেও পারছি না।’

এদিকে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ে দলীয় কার্যালয়ের আশপাশের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেখানে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

রাজবাড়ী থেকে দুপুরে এসেছেন মাহফুজা খাতুন মলি। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের আসতে পথে কোনো সমস্যা হয় নাই। দেশে হরতাল-অবরোধের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে অনেক ভিড়। আশপাশের দোকানগুলো বন্ধ। বাইরে কিছু খাবার হোটেল আর দোকান থাকলেও ভিড় ঠেলে যাওয়াটা অনেক কষ্টের।’

দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি খাবার হোটেলগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছেন। খাবারের লাইন অনেক স্থানে রাস্তায় গিয়ে পড়েছে।

মিরপুর থেকে এসেছেন মো. পলাশ ও জুলহাশ দুই ভাই। পলাশ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা মিরপুর থেকে মিছিল লইয়া হাইটা আইছি। এহানে আইহা অনেক ক্লান্ত হইয়া পড়ছি। ক্ষুধায় পেট জ্বলতাছে। কোনো দোকানে খাওন নাই। আপাতত পানি খাইয়া আছি।’

প্রতিদিন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের বিপরীত পাশের গলিতে প্রায় ১০টি খাবার হোটেলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভাতসহ অন্যান্য খাবার পাওয়া যায়। তবে সোমবার দুপুর ১টার পর থেকে সেখানকার হোটেলগুলোতে কোনো খাবারই পাওয়া যাচ্ছে না।’

কয়েকটি হোটেল ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের।

মুকুল নামে এক হোটেল ম্যানেজার বলেন, ‘সারা দেশ থেইকা মানুষ আইতাছে। মানুষের এত চাপ থাকায় আমাগো রান্না করা খাবার ১টার মধ্যেই শেষ হইয়া গেছে। অনেকেই খাওন না পাইয়া চইলা গেছে।’

আলামীন নামে আরেক হোটেল ম্যানেজার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা আগে দৈনিক তিনশ মানুষের খাবার রান্না করতাম। গত পরশু দিন ৬০০ লোকের রান্না করছি। গতকাল ১২০০ লোকের রান্না করছি। আইজকা দুই হাজার লোকের রান্না করার পরও ১টার মধ্যেই সব খাওন শেষ হইয়া গেছে। অনেকেই খাওন না পাইয়া মন খারাপ কইরা চইলা গেছে।’

এদিকে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে তাদের হাজারো সমর্থক দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। এসে অনেকেই আবার বাড়ি ফিরতে পারছেন না। তাই তাদের ঢাকাতেই থাকতে হচ্ছে। তবে ঢাকায় স্বজন না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেককেই। আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম খালি পাওয়া যাচ্ছে না। দুই একটা রুম পাওয়া গেলেও ভাড়া চাওয়া হচ্ছে অনেক বেশি।

পিরোজপুর থেকে এসেছেন মোজাম্মেল হোসেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভোরে আমরা একসঙ্গে সাত বন্ধু আইছি। বিকালে আমাগো নেতায় মনোনয়ন কিনবো। আইজকা আর দেশে (গ্রামে) যাওয়া হইবো না। কয়েকটা হোটেলে গেলাম, তয় হেইয়ানে রুম খালি নাই। ফকিরাপুল হোটেলে রুম পাইছি। তয় ভাড়া চায় অনেক।’

(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এইচএম/কেএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :