হরতাল-অবরোধে নাশকতা

রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ফেরারিজীবন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘নির্দলীয়’ ঘোষণা

রাজশাহী প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৩২| আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৫০
অ- অ+

চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে যানবাহন, ব্যক্তিগত-সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এসব নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজশাহীর আট জেলার বিভিন্ন থানায় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে পুলিশ নস্যাৎ করে দিচ্ছে নাশকতার পরিকল্পনা। পুলিশের তৎপরতার মুখে ওইসব এলাকার নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকছেন। ফেরারি আসামির মতো জীবনযাপন করছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন পরিবার থেকে। বাড়ি ছেড়ে জোটবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন মাঠে-ময়দানে রাত পার করছেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে এসব নেতাকর্মীদের অনেকেই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্তে বা নেতাদের নির্দেশে আর কখনো নাশকতায় জানাবেন না জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে এলাকা ছাড়ছেন।

নাশকতা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে রাজশাহী রেঞ্জের অধীন থানাগুলোর পুলিশ সদস্যরা তাদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন।

পুলিশ বলছে- নাশকতাকারিরা মূলত হিট এন্ড রান কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা গাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুরের পর পুলিশের চোখে ধুলা দিতে আর গ্রেপ্তার এড়াতে এসব জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাড়ি ছেড়ে পরিত্যক্ত মুরগির খামার, ফসলি মাঠ, পুকুর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় রাত পার করছেন। তবে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। সাধারণ মানুষের যানমালের ক্ষতিসাধনকারীরা দ্রুতই আইনের আওতায় চলে আসবে।

রাজশাহী ডিআইজি অফিসের একটি সূত্র জানায়, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম গফুরের নেতৃত্বে হরতাল অবরোধের নামে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। সেই কর্মসূচির ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এমন অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আটদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। রাতযাপন করছেন বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে।

বগুড়া শহর যুবদলের একটি সূত্র জানায়, শহর যুবদলের আহ্বায়ক আহসান হাবীব মমি গ্রেপ্তার এড়াতে কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে কখনও কলাবাগান কখনও ঝোপঝাড়ে রাত কাটাচ্ছেন। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল বাছেদও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছেন না। গ্রেপ্তার এড়াতে ফেরারি আসামির মতো পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যার প্রভাব পরিবারের উপরও পড়ছে। এদিকে বগুড়া নন্দীগ্রাম পৌরসভার মো. আলতাব আলী, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. জয়নাল আবেদীনসহ বেশ কয়েকজন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে। এসব পত্রিকার কপি ঢাকা টাইমসের কাছে রয়েছে। নেতাকর্মীদে অনেকেই আবার পুলিশ সদস্যদের মুঠোফোনে কখনো নাশকতায় জড়িত হবেন না জানিয়ে এলাকা ছাড়ার খুদে বার্তা পাঠাচ্ছেন।

তবে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানি করছে না। যারা কলাবাগান কিংবা সেচ পাম্পের ঘরে রাত কাটায় তারা মূলত সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করে এবং মহাসড়কে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটায়।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, তফসিল ঘোষণার পরে তাদের চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে হরতাল ও অবরোধের পরেই তারা মশাল মিছিল বের করে বঙ্গবন্ধু সেতু-হাটিকুমরুল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ ওই মশাল মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এর ফলে তারা পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা তাদের স্বাভাবিক এবং চলমান আন্দোলন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। নেতাকর্মীরা ধানক্ষেত, বন-জঙ্গলে এমনকি নদীতে নৌকায় রাত কাটাচ্ছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম মণ্ডল জানান, জেলা পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো বাধা তৈরি করছে না। তবে আন্দোলনের নামে যারা অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের চেষ্টা করছে কেবল তাদেরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরাও কর্মসূচির নামে বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসব ঘটনায়ও দল দুটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলা দায়ের হয়েছে। তবে ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে নাশকতা মামলার আসামি নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ধানক্ষেতে, নদীর তীর ও বিল অঞ্চলে রাত্রি যাপন করছেন। তাদের অনেকে আবার মহাসড়কে নির্জন স্থানে অবস্থান নিয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

জেলার বেড়া উপজেলা বিএনপির এক কর্মী বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা যুমনা নদীর বিভিন্ন চড়ে রাতযাপন করছেন। তার পরও তারা গ্রেপ্তার এড়াতে পারছে না। পুলিশ মোবাইল লোকেশন নিয়ে নদীর চরে গিয়েও তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম জানান, নাশকতাকারীরা কেউ পার পাবে না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে।

আন্দোলনের নামে নাটোর জেলার জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশকিছু যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। যার ফলে উক্ত জেলার বিভিন্ন থানায় দল দুটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে সেখানকার বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের চলন বিল ও তার আশেপাশের ফাঁকা জায়গাগুলোতে রাত কাটাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মী আবার আম ও সুপারি বাগানে পাঁচ-সাতজনের দলে বিভক্ত হয়ে রাত পার করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জামায়াত নেতা জানান, গত ১৭ দিন যাবৎ তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ট্রাকিংয়ের ভয়ে মোবাইল ফোন চালু করতে পারছে না। ফলে পরিবারের খবরও নিতে পারছেন না তিনি। প্রায় প্রতি রাতেই পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে নাটোর জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের নামে যেকোনো অপতৎপরতা রোধে জেলা পুলিশ সদা তৎপর।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/এসএফ/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে রাতভর অবস্থানের পর সকালেও বিক্ষোভ
এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-অবস্থানের মধ্যে অভিযানের সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ভারতীয় প্রতিবেদন ‘ভুয়া এবং মিথ্যা’: পাকিস্তান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা