নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চললেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ অভিযান আরও জোরদার করতে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের নজরদারির পাশাপাশি চলছে বিশেষ অভিযান। এ বিষয়ে প্রতিটি থানার ওসিকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর প্রায় ৮ হাজার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই প্রায় ৩ হাজার অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৮১টি এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় ১১১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
ইতিমধ্যে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র প্রবেশে কড়া নজরদারি করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।
সারাদেশে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে প্রশাসনিক সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই তালিকা ধরেও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।
এ বিষয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে র্যাব সদর দপ্তর থেকে আমাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে অভিযান শুরু করেছে র্যাব। অপরাধীদের তালিকা করে তাদের ওপর বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া চেকপোস্টগুলোতেও কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান আমাদের নিয়মিত রুটিন। তবে নির্বাচন ঘিরে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। এ নিয়ে ডিএমপির মাঠ পর্যায়ের অফিসাররা কাজ করছেন। তাদের বাড়তি নজরদারি ও অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্রও জমা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি দেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতের মণিপুরে কয়েক হাজার অস্ত্র লুট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অপরাধীদের মাধ্যমে সেখানকার লুট হওয়া অস্ত্র যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এছাড়া লাইসেন্সধারী অস্ত্রধারীদের কেনা গুলির হিসাব করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
বিজিবির সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ৪২টি পিস্তল ও ৪১টি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে তারা।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, নির্বাচন ঘিরে সীমান্তে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়ে বিজিবি নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। সীমান্ত দিয়ে কোনো অস্ত্রের চোরাচালান দেশে যেন প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়েও বাড়তি সতর্কতামূলক অবস্থানে রয়েছেন তারা। এছাড়া সীমান্তেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে রাজশাহীতে বিদেশি অস্ত্রের একটি চালানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৫। তাদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশি রিভলবার, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগজিন, ৮ রাউন্ড তাজা গুলি, ৮টি গুলির খোসা ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার জন্য এসব অবৈধ অস্ত্র আনা হয়েছিল, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এমনটাই জানান।
সূত্রে মতে, নির্বাচনকে ঘিরে পেশাদার সন্ত্রাসীরা বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করছে। এদের অনেকেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিজেদের নিরাপদে রাখার কৌশল অবলম্বন করছে। মিশে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। সীমান্ত দিয়ে এসব সন্ত্রাসীর হাতে অস্ত্র আসার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা মনে করি না দেশের বাইর থেকে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আসতে পারে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে সীমান্ত পেরিয়ে কোনো অস্ত্র যেন দেশে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলায় জেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে থানায় থানায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদর দপ্তর দফায় দফায় বৈঠক করছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় পদক্ষেপ নিতে গতকাল মঙ্গলবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু।
নোটিশে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিশিষ্টজনরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাই দ্রুত বৈধ লাইসেন্সধারী অস্ত্র স্থানীয় থানায় জমাদানের বিশেষ নির্দেশনা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযান পরিচালনার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) অনুরোধ জানানো হয়।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ভোটের মাঠে কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করলেও নির্বাচনী কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন । গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক সভা শেষে নৌকার প্রার্থী শাহজাহান ওমরের কর্মীর ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সোমবার ঝালকাঠি-১ (কাঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়াজীর হাতে দুই নলের একটি বন্দুক বহন করতে দেখে যায়। এ নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভোটের মাঠে কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করলেও নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মাঠ প্রশাসন।’
(ঢাকাটাইমস/০৬ডিসেম্বর)

মন্তব্য করুন