ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীরাই দুভাগে বিভক্ত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন- ২০২৩ আগামী ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে ইতোমধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। আলাদা দুটি পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা।
এছাড়াও একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক স্বতন্ত্রভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে রয়েছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে দেখা যায় আওয়ামীপন্থীদের দুইটি, জামায়াতপন্থীদের একটি পূর্ণ প্যানেল এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে ১৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচনে প্রার্থীতা করবেন ৪৬ জন।
শিক্ষকদের দাবি, শাপলা ফোরামের এই বিভক্তির জন্য শিক্ষক নেতাদের মতামতের অমিল, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতার অভাবই দায়ী। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে শাপলার দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হলেও সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তারা মনে করে, শিক্ষক রাজনীতি বর্তমানে আগের মতো অবস্থানে নেই। এটা গ্রুপিংয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে নেতাদের গ্রুপিংয়ে একই আদর্শের অন্য শিক্ষকরা বিপাকে পড়ছেন।আসন্ন শিক্ষক সমিতির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদ। গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমীন ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সামাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির প্রতিবাদ ও কেন্দ্রীয় জিয়া পরিষদের পরামর্শের আলোকে আসন্ন ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন-২০২৩ এ অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ইবি জিয়া পরিষদ। এছাড়াও জিয়া পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
শাপলা ফোরামের সদস্যদের মনোনীত প্যানেল দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চূড়ান্ত একটি প্যানেলের নির্বাচনি প্রচারণা দেখা যায়। ওই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী শাপলা ফোরামের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত অধ্যাপক. ড. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, যারা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আলোচনার আগে থেকেই পূর্ব পরিকল্পনা করেছে যে, সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উভয় পদই তাদের রাখতে হবে এবং তাদের সামনে কোনো হীন উদ্দেশ্য আছে যা তারা বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা বারবার সমঝোতার কথা বলেছি কিন্তু তারা দুটা পদের একটিও ছাড়বে না। যেহেতু শাপলা ফোরামের সভাপতি এখনো আশা রাখছি আমরা কেন নিরাশ হবো। তবে আওয়ামীপন্থীদের ঐকের জন্য শাপলা ফোরামের সভাপতিকেই এগিয়ে আসতে হবে।
অন্যদিকে শাপলা ফোরাম দাবি করা অন্য একটি পক্ষের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, আমাকে শাপলা ফোরাম থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি এটাই বিশ্বাস করছি সবাই আমাদের প্যানেলকেই ভোট দিবেন। আমিও চেষ্টা করেছিলাম একসঙ্গে একটি প্যানেল দেওয়ার জন্য। আসলে আদর্শে কোনো বিভক্তি কাম্য নয়।
আওয়ামীপন্থী প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহা. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সদ্য সমাপ্ত হওয়া শাপলা ফোরামের কার্যনিবার্হী পরিষদ নির্বাচনে কতিপয় সদস্যের সরাসরি ভোট অংশগ্রহণ না করে পেছন থেকে দলকে ব্যবহারের অভিলাষ থেকেই আমার মনে হয়। শাপলা ফোরাম শিক্ষক সমিতিতে ঐক্যবদ্ধ প্যানেল করতে ব্যর্থ হয়েছে। যাদের কারণে এই বিভক্তি আর এর পেছনের ব্যক্তিদের অচিরেই আপনারা শিক্ষক সমিতির ভোট প্রার্থনায় লক্ষ্য করতে পারবেন।
শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মান বলেন, আমি শাপলা ফোরামের সভাপতি হিসেবে মনে করছি এখনো আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবো। এখনো ঐকের জন্য সকল পথ উন্মুক্ত রয়েছে। আমি এখনো আমরা শাপলা ফোরামের নেতৃত্বে থাকা দায়িত্বশীল সকলের কাছে থেকে অবশ্যই ঐক্যের আশা রাখছি। আমার জানা মতে সবাই ঐক্য চাই। এখন নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের মতো করেই ঐক্য করবে আমি আশাবাদী, আমার কোনই আপত্তি নাই।
সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। তিনটা প্যানেল এবং একজন স্বতন্ত্র আসলে বিষয়টা এমন না, ইচ্ছে করলে সকল শিক্ষকই ভোটে দাঁড়াতে পারতেন। এখানে রাজনৈতিক কোনো পরিচয় আমাদের বিবেচ্য বিষয় না। দলীয় অংশগ্রহণ আমরা প্রত্যাশা করি না এমনটা বলবো না আসলে সেভাবে বিবেচনা করি না। তবে প্রত্যেক মানুষেরই একটা দলীয় পরিচয় আছে, ওই হিসেবে একই পরিচয়বাহক দুটি দল রয়েছে কি বিষয়? তবে প্যানেল প্রত্যাহার করার সময় শেষ হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত সমঝোতা তাদের নিজ নিজ ব্যাপার।
(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)