নারায়ণগঞ্জ-৩
নৌকা-লাঙ্গলের লড়াইয়ের আভাস, মাঠে নেই অন্যরা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ মোট ৭টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা করছেন সাধারণ ভোটাররা। প্রচারণায়ও ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে এ দুই প্রার্থীকে। কিন্তু দেখা মিলছে না অন্য প্রার্থীদের।
ঢাকার অদূরে মুঘল আমলে বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষা সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও মেঘনা শিল্পাঞ্চলে শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। ঈশা খাঁর রাজধানী হিসেবে ইতিহাস ঐতিহ্যের এ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিমকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টি ছাড়াও বিএনএম-এর এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আসলাম হোসাইন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নারায়ণ দাস, মুক্তিজোটের মো. আরিফ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মজিবর রহমান মানিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে জোর প্রচারণা চলছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার। তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দলে দলে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য প্রার্থীদের প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সোনারগাঁয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকা ও লাঙ্গল মার্কার প্রার্থীর মাঝে।
স্থানীয়দের মতে, বিগত দিনে যেসকল এমপি দেখেছি এই সোনারগাঁয়ে তাদের থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা একটু ভিন্ন, তাকে সবসময় পাওয়া যায়, তিনি ভালো মানুষ, সোনারগাঁয়ে যথেষ্ট উন্নয়ন করেছেন। লিয়াকত হোসেন খোকা যতদিন সংসদ সদস্য ছিলেন সোনারগাঁয়ে কোন দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়নি, আমরা শান্তিতে ছিলাম।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগে অত্যন্ত সুপরিচিত ও সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কর্ণধার হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তার পিতা প্রয়াত আবুল হাসনাত দীর্ঘদিন নিঃস্বার্থভাবে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের হাল ধরে রাজনীতি করেছেন।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী (সিংহ) হয়ে নির্বাচন করতে চাইলে মহাজোটের কাছে বলি হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার। তার পরেও হাল ছাড়েননি তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সচল রেখেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দল তাকে মূল্যায়ন করেছে।
নির্বাচন কেমন হবে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিফুল ইসলাম সাগর জানান, বর্তমান সাংসদ বিগত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন করেননি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেহেতু এ আসনটিতে নৌকার প্রার্থী দিয়েছে এবার আমরা নৌকাকে বিপুল ভোটে জয়ী করতে চাই।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে। ২০০৮ সালে সোনারগাঁয়ের জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছিল। আমার বিশ্বাস আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, গত ১০ বছর সোনারগাঁয়ের সাধারণ মানুষ শান্তিতে ছিল। উন্নয়নের কোনো কমতি ছিল না। আমার আমলে সোনারগাঁয়ে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আমি বিশ্বাস করি সোনারগাঁয়ের জনগণ বেইমান না।
(ঢাকাটাইমস/০৩জানুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন