রাজবাড়ী-২: অনিয়মের অভিযোগ এনে পুনর্নির্বাচনের আবেদন স্বতন্ত্র প্রার্থীর

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৯| আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১৮
অ- অ+

ভোটগ্রহণে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছেন রাজবাড়ী-২ আসনের ঈগল মার্কার প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হক।

সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি লিখিতভাবে এ আবেদন করেন। সেখানে তিনি আসনটিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তিন দিন পূর্ব থেকেই নৌকা সমর্থক ও বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে আমার নির্বাচনি এলাকার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে আমার ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আমার ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং পুরো নির্বাচনি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বোমা ফাটিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে । যার ফলে নির্বাচনের দিন আমার কর্মী সমর্থকরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটগ্রহণের দিন রাজবাড়ী-২ নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. জিল্লুল হাকিমের নৌকার সমর্থকরা পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রীতিমত সমগ্র নির্বাচনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

১) নির্বাচনের দিন আমার নির্বাচনি এলাকা, রাজবাড়ী-২ আসনের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের পক্ষে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা বল প্রয়োগ করে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়তায় প্রায় সব কেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এমনকি ভোট গণনার সময়ও ভোটকেন্দ্রে আমার কোন পোলিং এজেন্টকে বুথে থাকতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে জানা যায় নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিকে ঈগল প্রতীকের এজেন্ট হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনি ফলাফল সিটে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছে। ২) পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকার কর্মী সমর্থকরা প্রকাশ্যে জাল ভোট প্রদান করার খবর পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাগণের কাছে প্রতিকার চাইলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। এখানে প্রবাসী ভোটার হামিদুর রহমানের ভোট প্রদান করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বাদশার ছেলে আশিক।

উল্লেখ্য, উক্ত জাল ভোট প্রদানকারীকে সাংবাদিকদের সামনে হাতেনাতে ধরলেও প্রিজাইডিং অফিসার রহস্যজনক কারণে তাকে ছেড়ে দেয়।

৩) পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে নৌকার কর্মী রানা বিশ্বাস জালভোট দিতে এসে ধরা পড়লেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে নৌকার কর্মীরা অব্যাহতভাবে জালভোট প্রদান করতে থাকে। (ভিডিও সংযুক্ত) ৪) বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলতে থাকে। এ সময় সাংবাদিকরা দেখে ফেললে তিনি আবোল-তাবোল বলতে থাকে। ৫) কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ী ইউনিয়নের হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে সিল মারতে সহায়তা করায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তদস্থলে একই অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার দে’কে রহস্যজনক কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৬) বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনার নিজ এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাংশা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাবাসপুর কে রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাত্র একজন কনস্টেবলকে দায়িত্বরত দেখা যায় । ৭) কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নাছিমা খাতুন প্রতিটি ব্যালটে নিজের অগ্রিম স্বাক্ষর ও পিছনে নির্বাচন কমিশনের গোল সিল মেরে ব্যালট বাক্সের মধ্যে ঢোকাতে থাকেন। পার্শ্ববর্তী গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সমরেশ কুমার দে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মেরে বাক্সে ঢোকাতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি নৌকা প্রতীকের আর কোন সিল মারবেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তি দেন। (ভিডিও সংযুক্ত) ৮) পাংশা উপজেলার মৈশালা দারুল উলুম মোহাম্মাদয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মারুফের নেতৃত্বে কিছু উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারে।

উল্লেখ্য, একই কেন্দ্রে অন্য বুথে নৌকা প্রতীকের ৩ জন করে এজেন্ট দেখা যায়। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সেখানে নির্বাচনি কাজে দায়িত্ব পালনরত ৩ জন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয় এবং সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

৯) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহম্মেদ নিজে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন তার ভোটও অন্য কেউ প্রদান করেছে। ১০) বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলী দাখিল মাদরাসা কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান বাদশা আলমগীরের নেতৃত্বে আমার পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়। এছাড়া কুরশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও কুরশী উচ্চ বিদ্যালয়ে সাধন হাকিমের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করে। উপরোক্ত অনিয়মসমূহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় উপরোক্ত গুরুতর অনিয়মসমূহ বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী জনস্বার্থে রাজবাড়ী-২ আসনের ঘোষিত বেসরকারি নির্বাচনি ফলাফল জরুরিভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বাতিলপূর্বক পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধিত করবেন।

(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/ ইএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল ৪ বন্ধু, ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল দুজনের
ভারতের সামরিক অভিযানের দ্রুত, দৃঢ় ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
সুনামগঞ্জে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ৯০টি গরুসহ নৌকা জব্দ 
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা