নিবন্ধন নেই বিএমডিসির, অনিশ্চয়তায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা

​​​​​​​তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৪| আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:৫২
অ- অ+

নিবন্ধন না থাকায় রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পায়নি। এই পরিস্থিতিতে কলেজটিতে ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ইন্টার্ন করা সনদ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসা হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধের জন্য রবিবার সন্ধ্যায় নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শঙ্কার কথা জানা যায়। তবে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের ভয়ের কারণে নাম-পরিচয় উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিচ্ছে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিএমডিসির নিবন্ধন পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

বিএমডিসি সূত্রে জানা গেছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অনুমতির জন্য আবেদন করলেও এখনও অনুমতি পায়নি। এতে এই মেডিকেল কলেজের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস শেষে হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কায় আছেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নেই। হাসপাতাল বন্ধ রেখে মেডিকেল কলেজ চালু, এটা কখনই হতে পারে না।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভুল চিকিৎসায় গালফ এয়ারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোহান্নাদ ইউসুফ আল হিন্দির মৃত্যুর ঘটনায়ও আলোচনায় আসে রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিতইউনাইটেড হাসপাতাল’। এই হাসপাতাল এবং বাড্ডার সাঁতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল একই মালিকানায়।

বিএমডিসির নিবন্ধনের বিষয়ে ইউনাইটেড হসপিটালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক ঢাকা টাইমসের কাছে দাবি করেন, আমরা ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেছি। এই মেডিকেল কলেজের জন্য আবেদন, নিবন্ধন যা কিছু দরকার সবই নেওয়া হয়েছে।

আরিফুল হক বলেন, মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যদি বিএমডিসির অনুমতি লাগে, তাহলে অবশ্যই সেই অনুমতিও আছে। অর্থাৎ মেডিকেল কলেজের সব কাগজপত্র শতভাগ সঠিক আছে। এছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন করার সময় এখনও এক বছর বাকি। তবে বিএমডিসিতে যোগাযোগ করে আরিফুল হকের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

হাসপাতাল বন্ধের পর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্ন করবে কোথায়- প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ সেক্রেটারি পবির কুমার দে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালেই ইন্টার্ন করবে। হাসপাতালের নিবন্ধনের জন্য আমরা ২০২৩ সালের জুন মাসে আবেদন করেছি, এখনও পাইনি।

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নিবন্ধন আছে কিনা জানতে চাইলে বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তাদের মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা তৃর্তীয় বা চতুর্থ বর্ষে পড়ে সম্ভবত। এখন পর্যন্ত বিএমডিসি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল পরিদর্শনও করেনি আর স্বীকৃতিও দেয়নি।

ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, ‘তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে মেডিকেল কলেজ খুলেছে। ছাত্র ভর্তি করিয়েছে। এখানে যদি তারা বিএমডিসির অনুমতি না পায়, তাহলে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা পাস করলেও ইন্টার্ন করতে পারবে না, আর সনদও পাবে না।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তারা বিএমডিসিতে আবেদন করেছে। আবেদনটা চেক করতে হবে। তারপর আমাদের পরিদর্শন টিম যাবে। তবে পরিদর্শনে টিম কবে যাবে তা বলতে পারছি না। পরিদর্শন করার পর বিএমডিসি স্বীকৃতি দিলে তারপর শিক্ষার্থীরা ইন্টার্ন করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের বিএমডিসির নিববন্ধন নেই, তারা বিএমডিসির অনুমতি পায়নি।

বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাসপাতালটি গতকাল রবিবার বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। কিন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেটা তো আমরা হুট করে বন্ধ করতে পারি না। আমরা মনে করি, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে শিক্ষার পরিবেশটা নেই। কারণ যেখানে হাসপাতাল বন্ধ, রোগী নেই। আর রোগী না থাকলে ছেলে-মেয়েরা শিখবে কী?’

ডা. আবুল বাশার বলেন, ‘আমাদের এই ছেলে-মেয়েদের কথা ভাবতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে শাস্তি দিলে যদি শিক্ষার্থীরাও শাস্তি পেয়ে যায়, তাহলে তো দুঃখজনক হবে। এজন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি, দেখি... তবে অবশ্যই এইভাবে তো আর চলতে পারে না যে, হাসপাতাল বন্ধ মেডিকেল কলেজ চালু আছে, এটা তো হবে না কখনই।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/টিআই/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
লিটারে ১ টাকা কমল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
নারী সংস্কার কমিশন মানি না, বাধ্য করলে আন্দোলন: জামায়াত আমির
এবার চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, শুনানি রবিবার
গুলশানে নসরুল হামিদের ২০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা