কী দিয়ে ট্রেনে আগুন, এখনো জানে না তদন্তকারীরা

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:০৬| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৯
অ- অ+

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১২ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ বলতে পারছেন না কেউ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে কয়েকজন নাশকতাকারি গ্রেপ্তার হলেও কি ব্যবহার করে, কিভাবে ট্রেনটিতে আগুন লাগানো হয়েছে সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসছিল কমলাপুরের দিকে। রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার কাছাকাছি পৌঁছালে ট্রেনটির এসি কারে আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পরে ট্রেনটির চারটি বগিতে।

জ্বলন্ত আগুনে ট্রেনটির ‘চ’ বগির তিন নম্বর জানালা দিয়ে দুই হাত-মাথা বের করে ঝুলছিলেন এক ব্যক্তি। হাত দুটি পুড়ে কুঁকড়ে গেছে। শুধু চেহারাখানি একটু বোঝা যাচ্ছিল। ট্রেনে জ্বলন্ত পুরে মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য দেখলো পুরো বিশ্ববাসী। দমকল বাহিনীর কর্মিরা আসলেন, আগুনও নেভালেন। একে একে বের করলেন চারটি মরদেহ। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গঠিত হলো রেল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি। গ্রেপ্তার হলো অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে কয়েকজন নাশকতাকারিও।

তবে ঘটনার ১২ দিন পার হয়ে পাওয়ার পরও এখনো আগুন লাগার কারণ বা কিভাবে আগুন লাগলো, আগুন লাগাতে কি ব্যবহার হয়েছিল তা নিয়ে এখনো রহস্য রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স শুধুই আগুন নেভানোর কাজ শেষ করেই যেন দায়মুক্ত হয়েছেন।

এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তদন্ত কমিটি করেই দায় এড়িয়ে গেছেন। আর সেই তদন্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৯দিন হলো। এখনো তারা বলছেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দিচ্ছি। আর সেই তদন্ত কমিটির কাছেও নেই কিভাবে আগুন লাগলো, আগুন লাগাতে কি ব্যবহার করা হয়েছে। এখনও এমন অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে গোপীবাগের সেই মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত দুইমাসে গণপরিবহনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেল। সারাদেশে রেলপথে ও ট্রেনে অন্তত ১৬টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ছিল রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে ট্রেনে অগ্নিকান্ড। ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও নাশতাকতার বাইরে অন্য কিছু নিয়ে তদন্ত করেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ট্রেনে কিভাবে আগুন লেগেছে তার কোনো তথ্যও বলতে পারছেন না তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যে গোপীবাগে ট্রেনে আগুনের ঘটনাটি শুধু নাশকতা হিসেবেই দেখছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে আর কোনো তথ্যই নেই তাদের কাছে।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মো. সৌমিক শাওন কবির ঢাকা টাইমসকে জানান, তাদের তদন্ত শেষ হয়েছে। গতকাল (বুধবার) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার কথা।

কিভাবে আগুন লাগানো হয়েছে এবং আগুন লাগাতে কি ব্যবহার করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন কিভাবে লেগেছে সেটি নিয়ে আমরা তদন্ত করিনি। আমরা শুধু তদন্ত করেছি রেলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত আছে কিনা এবং কারো গাফিলতি ছিল কিনা। এ বিষয় ফায়ার এক্সপার্টরা বলতে পারবেন।

৫ জানুয়ারি আগুনের ঘটনার পর ওই দিনই তদন্ত কমিটি করে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তদন্ত কমিটির মেয়াদ ৩ দিন হলেও ১২ কার্যদিবস পেরিয়ে গেছে। কেন এত দেরিতে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে সৌমিক শাওন বলেন, আমাদের ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় দেরি হয়েছে। আমাদের তো আরও অনেক কাজ থাকে। সেই কাজ শেষ করে তদন্ত কমিটির কাজ করতে হয়েছে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সময়ে নাশকতার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ওই কমিটি নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করে না। নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ঘটনার সঙ্গে রেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলা রয়েছে কি না বা কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখে।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার, ঢাকা টাইমসকে বলেন, রেলে আগুন লাগাতে কি ব্যবহার করা হয়েছে তা ফায়ার সার্ভিস জানে না। রেল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে তারা বলতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের এক্সপার্ট টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে থাকেন। তবে গোপীবাগে আগুন লাগার কারণ এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে নেই। এদিকে, ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিকান্ডের পরই আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে মতামত প্রদানের জন্য ফায়ার সার্ভিসকে চিঠি দিয়েছি। তারা এখনও আমাদের সেই চিঠির জবাব দেননি। তাদের এক্সপার্টরা সঠিক বলতে পারবেন আসলে সেখানে কি কারণে আগুন লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রেলপুলিশ কিছু আলামত পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন আসলে আমরা বলতে পারবো কিভাবে আগুন লেগেছে। তবে এসব প্রতিবেদন আসতে অনেক সময় লেগে যায় বলেও জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২০১৪-১৫ সালে রেলে একাধিক নাশকতার ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তখনও তদন্ত কমিটি নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি। শুধু রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল। (ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এইচএম/বিবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কসবায় ৭০ লাখ টাকার ভারতীয় চশমা জব্দ
লিটারে ১ টাকা কমল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
নারী সংস্কার কমিশন মানি না, বাধ্য করলে আন্দোলন: জামায়াত আমির
এবার চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, শুনানি রবিবার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা