হাকালুকি হাওরে বিষ টোপ দিয়ে অতিথি পাখি নিধন  

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার
  প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৫
অ- অ+

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে বিষটোপসহ শিকারিদের বিভিন্ন ধরনের ফাঁদে পড়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি। অনেকে সামান্য বাড়তি রোজগারের লোভে হাকালুকিতে সুযোগ বুঝে নানা ফাঁদ পেতে এসব পরিযায়ী পাখি শিকার করেছেন। এতে হাওরে কমে যাচ্ছে পাখিদের কলকাকলি কিচিরমিচির। অথচ তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেট (হেড কোয়ার্টার মৌলভীবাজার) 'র বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডিএফও ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, এসব ঘটনা জানার পর আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি।এখন জড়িত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অচিরেই এ বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, হাকালুকি হাওর দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫টি উপজেলার অংশ নিয়ে অবস্থিত। এর আয়ত্তন প্রায় ৪৫ হাজার একর। এখানে ছোট-বড় ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী ও অসংখ্য খাল রয়েছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে বিভিন্ন শীত প্রদান দেশ থেকে একটু উষন্তার খোঁজে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এই হাওরে আশ্রয় নেয়। পাখিদের নিরাপদ আশ্রর জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার এই হাওরকে পরিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। তারপরও এসব এলাকায় পাখি হত্যা চলছে নির্দ্বিধায়। বিভিন্ন কৌশলে স্থানীয় শিকারিরা এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে পাখি হত্যায় বেছে নিয়েছে বিষটোপ।

গত দুই সপ্তাহে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরের জুড়ীর অংশে নাগুয়া ও চাতলার বিলে পাখি দেখতে ও ছবি তোলার জন্য আসেন কয়েকজন আলোকচিত্রী। তারা হাকালুকির নাগুয়া বিলে ৩২টি পাখি মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় আশপাশে একটি দুটি করে ধুঁকে ধুঁকে আরও কয়েকটি পাখি মরতে দেখা যায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে মৃত পাখিগুলো মাটিচাপা দেন তারা। এ ঘটনা তাদের ফেসবুকে লিখে ছবিসহ পোস্ট দেওয়ার পর ভাইরাল হয়ে যায়।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, শিকারিরা দল বেঁধে বিষটোপ ও জাল দিয়ে পরিযায়ী পাখি শিকার করে। তারা সেসব পাখি গোপনে চড়া দামে বিক্রি করে।

স্থানীয়রা বলেন, হাকালুকি হাওরে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আগে অনেক পাখি দেখতাম। এবার এসব চোখে পড়ছে না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, হাকালুকি হাওরের পাখির অনেক দাম। ২টা হাঁসপাখি ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। এ কাজটা শিকারিরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করে থাকে।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা, শিকার, ক্রয়-বিক্রয় ও নিজের দখল বন্দি করে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু শীত মৌসুমে একটি অসাধুচক্র পাখি শিকারের মতো নিকৃষ্ট একটি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আমরা পাখির শিকার রোধে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি, তবুও এসব বন্ধ করতে পারছি না।

হাকালুকি হাওর দেশের বেশিরভাগ দেশি প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছাড়াও পরিযায়ী পাখির বিচরণভূমি হিসেবে দেশের অন্যতম জলাভূমি। আইনের প্রয়োগের অভাবের কারণে মূলত এটি ঘটে। পাখি বিক্রি রোধে আরও কঠোর হতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাকিস্তান থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে ফেরানো হবে রিশাদ ও নাহিদকে!
মেঘনায় অনুমোদনহীন ডেন্টালে জীবাণুযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ছড়াচ্ছে হেপাটাইটিস বি
ই-হজ সিস্টেমে ভিসা বাতিল করার অপশন চালু
পাকিস্তানি বিনোদন অঙ্গনের ওপর কঠোর সিদ্ধান্ত নিল ভারত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা