‘গ্যাসই থাকে না, গ্যাসের টাকার লাইগ্যা উতলা হইয়া যায়’

তানিয়া আক্তার, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪৩| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৬
অ- অ+

ষাটোর্ধ্ব মনু মিয়া এবং মরিয়ম বেগম জন্ম থেকেই ঢাকায় বসবাস করেন। রাজধানীর বাংলামোটরের ‘দুই হাজার’ গলির ছোট্ট একটি কক্ষে বাস এই দম্পতির। একমাত্র ছেলে রাস্তায় রুটি-পরোটা বানিয়ে বিক্রি করে যতটুকু আয় হয় তাতেই চলে তাদের সংসার। ডায়াবেটিস রোগী হওয়ায় সময়মতো খাওয়া সেরে ওষুধ খেতে হয় দুজনেরই। কিন্তু রান্নার জন্য ইদানিং তাদের মধ্যরাত অবধি অপেক্ষা করতে হয়। এ জন্য খাওয়া আর দাওয়া নেওয়ার সময় এখন এলোমেলো হয়ে গেছে। এই দম্পতির ভাষ্য, পুরো জীবনে গ্যাসের সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন চলতি বছর।

মরিয়ম বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুরা মহল্লায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। ঠান্ডা পড়লেই এই গ্যাসের সমস্যাডা বাইড়া যায়। গতবারও শীতের মধ্যেই গ্যাস ছিল না। কিন্তু এইবার গ্যাসের অবস্থা বেশি খারাপ। শীতের রাইতে তিনডায় উইঠ্যা রান্না করতে হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আবার গ্যাস চইল্ল্যা যায়। খাওন তো লাগে। এই দুই ঘণ্টার মইধ্যে রান্না শেষ করতে হয়। কোনো কোনো দিন এই টাইমে ঘুমাইয়া গেলে একটা মাটির চুলা আছে সেইডায় রানতে হয়। এর লাইগ্যা লাকড়িও জোগাড় করতে হয়। দুইজনই ডায়বেটিসের মানুষ আমরা। আমগো তো ঠিক টাইমে খাওন-দাওন করতে হয়। খাওন-দাওনেরই ঠিক নাই। ওষুধপত্রেরও ঠিক নাই। এক টাইমের খাওন আরেক টাইমে খাইতে হয়। এমন রাইত বিরাইতে রাইন্ধা আরও অসুখ বিসুখ হইয়া যাইবো।’

মরিয়ম বেগমের কথার সাথে তাল মিলিয়ে একই মত দিলেন তার স্বামী মনু মিয়া। জানালেন, রাতভর অপেক্ষাশেষে পাতে খাবার মেলে। গ্যাস সংকটে এই বয়সে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এই দম্পতি।

স্বামী আর এক সন্তান নিয়ে এই গলিতে থাকেন নুরুন্নাহার মনিকা। ছোট্ট সংসারে শত ঝামেলার মধ্যে নতুন যোগ হয়েছে গ্যাস সংকট। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মাঝেই গ্যাস সংকটে যাপিত জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তাদের।

নুরুন্নাহার মনিকা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। যে আলু পাঁচ কেজি কিনছি ১০০ টাকায় সেই আলুর দাম বাইড়া ২১০ টাকা হইছে। এরমধ্যে এই যে দ্যাহেন এই ভরদুপুরেও গ্যাসের খবর নাই। রাত্র যত বাড়ে গ্যাসের চাপ একটু একটু বাড়ে। ভোররাত্রে রান্না করার মতো গ্যাস আসে। যদি রাত্রে না রান্না কইরা রাখি তাইলে ওইদিন খাওয়া বন্ধ। এই কষ্টে আছি আমরা। এই কারণে রাইস কুকারটা কিনছি। খাওন তো লাগবো।’

একই গলিতে বাস করেন সুখী আক্তার। গ্যাসের সমস্যা তার জীবন অসুখী করে তুলেছে। দশমাসের সন্তানের জন্য রান্না করা কষ্ট হয়ে যায়।

সুখী আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাচ্চাডা একেবারে ছোট্ট। গ্যাসের যে অবস্থা মাঝে মধ্যে যে সুজি রান্না করবো এইটাও পারি না। এরমধ্যে ভোররাতে রান্না কইরা ঘুমাইতে ঘুমাইতে সকাল হইয়া যায়। রোজার মাসেও সন্ধ্যার আগে আগে গ্যাস চইল্যা যাইতো। এখন তো আগেই এই সমস্যা শুরু হইছে।’

দুপুর একটায় নিজের বাসায় গ্যাস না থাকায় তরকারি কেটে পাশের বাসায় সিলিন্ডারের গ্যাস থাকায় সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন গৃহিনী সাবিনা আক্তার (ছদ্মনাম)।

গৃহিনী সাবিনা আক্তার (ছদ্মনাম) ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একবারেই গ্যাস থাকে না। ভোররাত্রে গ্যাস আসে। আজকে রাত্রে রান্না করি পরদিন রাত পর্যন্ত খাইতে হয়। এহন পাশের বাসায় যাইতাছি। ওদের বাসায়ও অনেকগুলা মানুষের রান্না আছে। এখন ফোন দিয়া কইলো যাইতে। গ্যাসের বিল তো ঠিকই নিতাছে। গ্যাসই থাকে না আর গ্যাসের টাকার লাইগ্যা উতলা হইয়া যায়। টাকা না দিলে লাইন কাইট্টা দেয়।’

গ্যাস নিয়ে একযোগে অভিযোগ করলেন এই গলির অন্য বাসিন্দারা। গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান চান তারা।

তাদের ভাষ্য, ‘রাত্র ১২ টার দিকে এমন টিমটিমা (নিভুনিভু) গ্যাস আহে যে পাতিলই গরম হয় না। পাক (রান্না) করার জন্য সারারাত্র সজাগ থাকতে হয়। পরে রাত্র তিনটায় উইঠ্যা পাক (রান্না) করতে হয়। গ্যাসের জন্য অনেক কষ্ট করতে আছি। খুব কষ্ট হইতে আছে আমাগো। পারলে গ্যাসের একটু ব্যবস্থা কইরা দ্যান।’

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর ফলে রান্না-বান্নাসহ শিল্প-কারখানাতেও উৎপাদনে ব্যঘাত ঘটছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এর তথ্য বলছে, সারাদেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে ২ হাজার ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দৈনিক উত্তোলন (উৎপাদন) করা হচ্ছে। এছাড়া মহেশখালী-আনোয়ারা, আনোয়ারা- ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ পাইপলাইনগুলোর মাধ্যমে দৈনিক আরও ৮৫০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে জিটিসিএল। কিন্তু শীতকালে গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। যে কারণে প্রতিবছরই শীত এলে গ্যাসের সংকট তৈরি হয়।

(ঢাকা টাইমস/২৬জানুয়ারি/টিএ/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে এনসিপির সমাবেশে দুই গ্রুপের মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ২০০ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেল মুন্সীগঞ্জে, নিষ্ক্রিয় করল সিটিটিসি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা