করোনা রোগীর ৮০ ভাগ জেএন.১ আক্রান্ত

তানিয়া আক্তার, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৪১| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৪৪
অ- অ+

এক সপ্তাহ আগে দেশে ৫ জনের শরীরে শনাক্ত হওয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১। এরপর থেকে প্রতিদিনই রোগীর শরীরে শনাক্ত হচ্ছে করোনার নতুন এই উপধরন। তবে সেই থেকে এ পর্যন্ত কতজনের শরীরে জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমে ৬ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের শরীরে জেএন.১ পাওয়া গেছে। এরপর আরও ১১ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে জেএন.১। বর্তমান সময়ে করোনা আক্রান্তদের বেশিরভাগের শরীরেই শনাক্ত হচ্ছে এই উপধরণ।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের শরীরে জেএন.১ শনাক্ত হলে, সে হিসাবে এ উপধরনে আক্রান্তের হার শতকরা ৮০ ভাগ। অর্থাৎ- প্রতি ১০০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ জন জেএন.১ আক্রান্ত। তবে দেশে এ উপধরনে আক্রান্ত কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগতাত্ত্বিকভাবে তারা ধারণা করছেন যে, যাদেরই এখন করোনা পজিটিভ তাদের বেশিরভাগই করোনার জেএন.১ উপধরণে আক্রান্ত। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও মৃত্যু ঝুঁকি তুলনামূলক অনেক কম। সেক্ষেত্রে বিধিনিষেধ না দিয়ে করোনা পরীক্ষা ও টিকাদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জেএন.১ এর দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে এখনই মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো কোনো সিদ্ধান্তে না যাওয়ার কথা উল্লেখ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির কর্মকর্তারা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এখনো এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনার নতুন উপধরণ জেএন.১। মৃত্যুও হয়। একপর্যায়ে গত ১৮ জানুয়ারি এ উপধরণ শনাক্ত হয় দেশেও। এরপর ২১ জানুয়ারি থেকে পুনরায় করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন ৬ জনের স্যাম্পল জিনোম সিকোয়েন্সিং করে পাঁচজনের শরীরেই করোনার অমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন জেএন. ১ শনাক্ত হয়েছে । বাকি একজনের শরীরে পাওয়া গিয়েছিলো ডেক্সা উপধরন। সেদিনের করোনা শনাক্তের হার ছিলো ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। পরে ১৯ জানুয়ারি ৪৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পর্যায়ক্রমে ২০ জানুয়ারি ২২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শনাক্ত হয়। জানুয়ারির ২১ তারিখ ৫৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন করোনায় ১ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ২২ জানুয়ারি ৫৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয় এবং সেদিনও করোনায় ১ জনের মৃত্যু হয়। জানুয়ারির ২৩ তারিখ ৪০৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ শনাক্ত হয়। জানুয়ারির ২৪ তারিখ ৪৫২ জনের ৩৮ জনের শনাক্ত হয়। জানুয়ারির ২৫ তারিখ ৪৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার ৩৯১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয় এবং এদিন শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুইশত ৬৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এরমধ্যে দুইজনের মৃত্যুও হয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকা টাইমস বলেন, ‘যারাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন সবার জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে না। কারণ রোগতাত্ত্বিকভাবে ধারণা করা যায়, এখন করোনার হার যে বাড়ছে তা জেএন.১ এর কারণেই হচ্ছে। এখন যত বেশি সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করাবে ততই করোনার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। করোনার লক্ষণ থাকলেই পরীক্ষা করালে জানা যাবে কমিউিনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে কী না। তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে। তাই যাদেরই করোনার লক্ষণ থাকবে তার পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।’

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা জেএন.১ ধরনে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের শরীরে তেমন জটিলতা তৈরি হয় নি। আমরা করোনা পরীক্ষা চলমান রাখছি। এদিকে করোনার হার বাড়ছে কিনা তা বলা যাবে করোনা পরীক্ষা করার উপর নির্ভর করে। কিন্তু খুব কী টেস্ট হচ্ছে?’

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটিও নজর রাখছে এই নতুন উপধরনটির ওপর। করোনার লক্ষণ উপসর্গ থাকে তাদের দ্রুত পরীক্ষা করানোর বিষয়ে জোর দিয়েছে এই কমিটি।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনার লক্ষণ নিয়ে এলে প্রথমেই একজন রোগীর স্যাম্পল নিয়ে তার করোনা পজিটিভ নাকি নেগেটিভ সেটি দেখা হয়। পরে যাদের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে তাদের জেনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখা হয় নতুন ধরনে আক্রান্ত হয়েছে কী না। আইইডিসিআর এই বিষয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছে। চলতি বছর প্রথম যখন শনাক্ত হয় সেদিন ছয়জনের স্যাম্পল সংগ্রহ করেছিলো আইইডিসিআর। সেই ছয়জনের এর মধ্যে সবার করোনা পজিটিভ থাকলেও পাঁচজনের শরীরেই পাওয়া গিয়েছিলো জেএন.১। বাকি একজনের ছিলো করোনার ডেক্সা উপধরন। পরবর্তীতে আরও ১১জনের শরীরে জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে পূর্বে আলফা, ডেলটাসহ বিভিন্ন ধরন থাকলেও এখন যাদেরই করোনা পজিটিভ তাদের অধিকাংশই জেএন.১ উপধরণে আক্রান্ত। ফলে এখন যে অনেকের সর্দি কাশি হচ্ছে তাদের পরীক্ষা করলে দেখা যাবে তাদের করোনা পজিটিভ। তাই আমরা সরকারকে বলেছি যাদেরই জ¦র কাশি মাথাধরা থাকলে করোনা পরীক্ষাটি করে নেয়া উচিত।’

করোনর নতুন এই উপধরনে সংক্রমনের হার বেশি এবং মৃত্যু হার কম হলেও ঝুঁকিপূর্ণদের সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ জনস্বাস্থ্যবিদদের।

ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, যারা বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী ও কোমরবিডিটি অর্থাৎ অন্যান্য রোগও সাথে আছে তাদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/টিএ/আরআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা