রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পেনশন অফিস স্থানান্তরে তুঘলকি কাণ্ড!

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৮

চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন শাখাটি সিআরবি ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ছিল। পেনশনারদের সুবিধার্থে ইটিপি এবং আইভাস প্লাস সিস্টেম প্রবর্তন করার সঙ্গে প্রয়োজনীয় যাবতীয় ইলেকট্রিক ডিভাইস স্থাপন করা হয়। তবে পেনশন দপ্তরটি দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত হওয়ায় শারীরিকভাবে অক্ষম বা বয়োবৃদ্ধ পেনশনারদের দ্বিতীয় তলায় ওঠানামা কষ্টকর ছিল। কষ্টকর ছিল এ কারণ পুঁজি করে এডিজি অর্থ ও এফএএন্ডসিএও সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে হঠাৎ পেনশন দপ্তরটি সিআরবি থেকে পলোগ্রাউন্ডের টিএ দপ্তরের নিচ তলায় স্থানান্তর করেন।

পেনশন অফিস সিআরবি থেকে পলোগ্রাউন্ডে স্থানান্তরের সময় অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিরোধিতা করলেও প্রকাশ্য কিছু বলার সাহস পাননি। তারা চেয়েছিলেন সিআরবিতে কোনো ভবনের নিচ তলায় হলে পেনশনারদের জন্য ভালো হয়।

কিন্তু উপরোক্ত কর্তাদ্বয় কারো কষ্টের কথা চিন্তা না করে নিজেদের মতো তড়িঘড়ি করে পেনশন সংশ্লিষ্ট সমুদয় পত্রাদি ও যাবতীয় ইলেকট্রিক ডিভাইসগুলোসহ পেনশন অফিস স্থানান্তর করে ফেলেন।

উল্লেখ্য, পেনশন দপ্তরটি এফএ এন্ড সিএও এবং সিপিও দপ্তরের যত নিকটবর্তী রাখা যায় ততই পেনশনারদের উপকার হয়। কারণ সকল পেনশনারের যাবতীয় ফাইল একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আনা নেওয়া করতে হয়। সিআরবির বাইরে পেনশন দপ্তর থাকলে ফাইল আনা নেওয়ার জন্য সময় বেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন জটিলতা হওয়ারও সুযোগ থাকে। ফলে পেনশন বিধিমালা-২০২০ অনুযায়ী যথা সময়ে পেনশন মঞ্জুরি প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়। যদিও সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার ২ মাসের মধ্যে পেনশনভোগীদের পেনশন নিষ্পত্তি করার জন্য বর্তমান সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পেনশন দপ্তর সিআরবি থেকে হঠাৎ করে পলোগ্রাউন্ড (টিএ) দপ্তরে স্থানান্তর হওয়াতে অনেক পেনশনার দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। এ নিয়ে তাদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হতে থাকে।

একজন পেনশনার ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না, আমি এই অবসর ও বার্ধক্যজনিত কারণে চলাচল অক্ষম একজন ব্যক্তি কীভাবে পলোগ্রাউন্ডে যাবো আবার ফাইল নিয়ে সিআরবিতে আসবো! কারণ আগে অফিস এক জায়গায় ছিল। কষ্ট হলেও যেতে পারতাম, কিন্তু এখন অনেক কষ্টের মধ্যে পড়ে গেলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় হিসাব বিভাগের গুটিকয়েক হটকারী কর্মকর্তার প্ররোচনায় এডিজিকে পেনশন দপ্তর স্থানান্তর করলে ভালো হবে, এভাবে ভুল বুঝিয়ে তড়িঘড়ি করে পূর্বাঞ্চলীয় হিসাব বিভাগের এবং এফএ এন্ড সিএও পূর্ব সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে পেনশন দপ্তর সিআরবি থেকে টিএ পলোগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হটকারী সিদ্ধান্ত ছিল।

আরও জানা যায়, সিআরবি থেকে পেনশন দপ্তর অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করেনি পূর্বাঞ্চলীয় রেলের হিসাব বিভাগ।

বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি হঠাৎ করে পেনশন দপ্তরের সকল নথিপত্র ও ইলেকট্রিক ডিভাইস সমূহ ট্র্যাক ভর্তি করে জনবল সমেত টিএ দপ্তর পলোগ্রাউন্ড থেকে যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে পুনরায় সিআরবিতে নিচ তলার একটি কক্ষে স্থাপন করতে দেখে অনেকের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় হিসাব বিভাগের তুঘলকি কাণ্ডের ব্যাপারটি সিএজির গোচরীভূত হলে তিনি এমন হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতি তিরস্কার জানিয়ে পেনশন দপ্তরটিকে সিআরবিতে নিচ তলায় স্থাপনের আদেশের প্রেক্ষিতে পেনশন দপ্তরটি পুনরায় স্থাপন করা হয়।

তিনি বলেন, এমন অবিবেচনা প্রসূত হটকারী সিদ্ধান্তের ফলে অনেকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারিয়েও যেতে পারে। একবার টিএ পলোগ্রাউন্ডে স্থানান্তর করেছে আবার মাস যেতে না যেতে পুনরায় সিআরবিতে পূর্ণ স্থানান্তর- এ টানা-হেঁচড়ার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নষ্ট হতে পারে। এমন যদি হয় এর দায়ভার কে নেবে? এছাড়া একটি অফিস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে অফিসের যাবতীয় ফাইল পত্রাদি ও যন্ত্রাংশাদি বারবার স্থাপনে খোলাবাধার অহেতুক ব্যয়ের দায়ভার কে নেবে ?

এ ব্যাপারে রেলের একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় হিসাব বিভাগের এফএএন্ডসিএও এবং এডিজি অর্থের স্বেচ্ছাচারিতার বহিপ্রকাশ। স্থানান্তর ও পূর্ণ স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সরকারের বিশাল আর্থিক ব্যয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অন্যায় সিদ্ধান্তের সঠিক বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।

পূর্বাঞ্চলীয় ডিএফএ কর্মকর্তা আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বের সিএনএজি সাহেব পরিবেশের কথা চিন্তা করে পেনশন অফিস অন্যত্র নিতে বলেছেন। এখনকার সিএনএজি অফিস পুনরায় সিআরবিতে নিয়ে আসতে বলেছেন। আনা-নেওয়ার সময় পেনশনারদের প্রয়োজনীয় নথি নষ্ট বা হারিয়ে গেলে এবং অফিস স্থানান্তরে বিশাল খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ওপরের নির্দেশে হয়েছে। আপনি ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওপরের নির্দেশ বলতে কার সঙ্গে কথা বলতে হবে জানতে চাইলে তিনি এডিজি অর্থ ও এফএ এন্ড সিএও’র সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আজ কেউ অফিসে নেই, সবাই ঢাকায় এমনকি আমিও ঢাকায়। ওনাদের অফিসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সুবর্ণচরে এমপিপুত্র শাবাব বিজয়ী

নড়িয়ায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত ৩

কুমিল্লার তিন উপজেলায় দুই নতুন মুখ, লাকসামে ইউনুসের হ্যাট্রিক

বান্দরবান সদরে আ.লীগ নেতাকে হারিয়ে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা কুদ্দুস বিজয়ী

ভোট দিলেন কেরানীগঞ্জের বিএনপি নেতা, ফাঁকা ছিল বেশিরভাগ কেন্দ্র

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা

ফরিদপুরে চেয়ারম্যান পদে তিন উপজেলায় যারা নির্বাচিত হলেন

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত: ঝিনাইদহ-১ আসনে নির্বাচনে বাধা নেই

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম বাঙালিকে আলোর পথ দেখায়: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

কুমিল্লায় ট্রান্সফর্মার চোর চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :