উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

গত ৩০ এপ্রিল কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে উপজেলার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এরই প্রতিবাদে রবিবার সকালে একটি মিছিল হয়েছে। একই রকমের লেখা ও ডিজাইন সম্বলিত চারটি ব্যানার নিয়ে মিছিলটি হয়। যা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অনুসারীরা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই মিছিল থেকে বলা হয়, 'আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার যে মিছিল হয়েছে তাতে মুরাদনগরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেননি।' তবে সকালের মিছিল শেষ হওয়ার চার ঘণ্টা পর আরও একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। যেখানে তারা অভিযোগ করেছেন, 'সকালে যে মিছিল হয়েছে তাতে অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ কলেজ, কোড়েরপাড় আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, কাজী নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজসহ মুরাদনগরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেননি। বাইরের স্কুল, কলেজ থেকে শিক্ষার্থী এনে মিছিল করানো হয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা ব্যানার বানিয়ে মিছিল করানো হয়েছে। এতে উপদেষ্টার অনুসারীরা জড়িত।'
এদিকে একই রকম লেখা ও ডিজাইন সমৃদ্ধ ব্যানার নিয়ে মিছিলের ঘটনায় উপজেলা জুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে করা মিছিলে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছে__ এমন অপপ্রচারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে মুরাদনগরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। রবিবার বিকালে মুরাদনগর সদরে এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মুরাদনগরের কোম্পানিগঞ্জে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘নিজের জীবন বাজি রেখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। অথচ যারা আমাদের আন্দোলনে বাধা দিয়েছে, তারাই আজ আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার লোক। আর আমাদের বলে আমরা নাকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেউ না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে এখন আমরাই বৈষম্যের শিকার।’
বুধবার মিছিলে জোরপূর্বক কলেজ থেকে শিক্ষার্থী নেওয়ার দাবি অস্বীকার করে কাজী নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাত্তার মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কলেজে আসে পড়াশোনা করার জন্য। তাদের সাথে আমাদের পাঠদানের সম্পর্ক। কোনো আন্দোলনে, মিছিলে পাঠানো তো আমাদের কাজ না। আর জোর করার প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে কোনো কথাই হয়নি।’
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে মুরাদনগরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও জনতা। মিছিলের শুরুতেই ব্যানার কেড়ে নেয় মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেশব্যাপী ভাইরাল হয়।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাধার কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন মিছিল করেছে, তাই বাধা দিয়েছি।’
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিজেদের নেতৃত্ব দেওয়ার ভিডিও দেখিয়ে ওসির বক্তব্য মিথ্যাচার বলে দাবি করেন।
আসল রহস্য কি?
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে গত ৩০ এপ্রিল বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো মুরাদনগরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, মুরাদনগরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পাশাপাশি মামলা-হামলা করছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর। এমন সব কার্যকলাপ চালাচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন এবং চাচাতো ভাই এনসিপির উপজেলা আহ্বায়ক ওবায়েদউল্লাহ। তাদের নেপথ্যে মদদ দিচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ জনতার ব্যানারে আয়োজন করা সেই মিছিল ভন্ডুল করার চেষ্টা করেছিলেন মুরাদনগরের ওসি। কিন্তু সাধারণ মানুষের বাধার মুখে তিনি সফল হননি। এদিকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে এমন একটি মিছিলের পর তার অনুসারীরা পড়েন বেশ বেকায়দায়। এ যে উপদেষ্টার মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি! কিন্তু সরাসরি উপদেষ্টার পক্ষে কোন কর্মসূচি দেওয়ার মনোবলও তাদের নেই। এ কারণে নেওয়া হয় ভিন্ন কৌশল। বলতে হবে উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মিছিলে জোর করে ও ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর সেই ভয়ভীতি দেখানো ও জোর করার প্রতিবাদে মিছিল করা হবে। এতে উপদেষ্টার মান-সম্মান কিছুটা হলেও রক্ষা হবে।
এই প্রতিবাদ মিছিলটি আয়োজনের নেপথ্যে কাজ করেছেন উপদেষ্টার বাবা ও চাচাতো ভাই। তবে তারা তাদের নাম ব্যবহার করতে চাননি। তাই ব্যবহার করেছেন পাঁচটি কলেজের নাম। শুধু নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে জোর করে মিছিলে নেওয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করছে পাঁচটি কলেজ।
মজার বিষয়, এই বিক্ষোভ মিছিলকে নিরাপত্তা দিতে নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র পরিচয় দিয়ে জনৈক আশরাফুল ইসলাম রাশেদ। অথচ নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই নামের কোনো শিক্ষার্থী নেই।
বিক্ষোভ মিছিলটিও ছিল বেশ মজার। এতে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই নিজেদের চেহারা দেখাতে চাননি। বোরকা আর মাস্ক পরে এসেছিলেন তারা। নিজেদের চেহারা লুকিয়ে রাখার আসল কারণ তারা কেউ ওইসব কলেজের শিক্ষার্থী নন। মুরাদনগরে বেশ মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এই অদ্ভুতুড়ে মিছিল।
(ঢাকাটাইমস/৪মে/এলএম/মোআ)

মন্তব্য করুন