অমর একুশে বইমেলা
না থেকেও আছেন হুমায়ূন আহমেদ
প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেছে তিনি বইমেলায় আসেন না। তবু, এখনো হুমায়ূন আহমেদ পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে থাকেন। বিশেষ করে তরুণ বয়সী পাঠকদের মনে তিনি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার বিকfলে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে হুমায়ূনপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের দেখে মনে হলো– না থেকেও আছেন তিনি। বিশেষ করে অন্যপ্রকাশ এবং কাকলী প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে তরুণ-তরুণীদের বেশ জটলা দেখা গেল। দর্শনার্থীরা তার বই উল্টেপাল্টে দেখছেন।
ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বাড়ে অবশ্য। প্রকাশনী দুটির সংশ্লিষ্টরা জানালেন, হুমায়ূন আহমেদের বই এখনও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে বা দেখতে যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। বিশেষ করে, তরুণীর সংখ্যাটা বেশি।
নিশাত রিমা, সাদিয়া আফরিন নাফিসা, মিথিলা মুজিব ফারজানা, নুসরাত জাহান ইলমা এবং ইপ্সিতা রশিদ অবনী এসেছেন বইমেলায় ঘুরতে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে অন্যপ্রকাশ প্যাভিলিয়নের সামনে দেখা যায়। কথায় কথায় তারা ঢাকা টাইমসকে জানালেন তাদের হুমায়ূনপ্রীতির কথা।
নিশাত রিমা বলেন, ‘আমি হুমায়ূন আহমেদের অনেক বই পড়েছি। মিসির আলি অনেক ভালো লাগে। এর মধ্যে থাকা সাসপেন্স পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এবারের বইমেলায় বাদশাহ নামদার বইটি কিনেছি।’ মিথিলা মুজিব ফারজানার ভাষ্য, ‘আমি ছোট থেকেই বই পড়ি। সবচেয়ে বেশি পড়েছি হুমায়ূন আহমেদের বই।’
‘আমি একদমই নতুন পাঠক। আমার গল্প পড়া শুরু হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষা উপন্যাস দিয়ে। আমি তেতুলবনের জোছনা আর অন্যভূবন বই দুটি কিনেছি। ভাল লাগলে আরও অনেক বই কিনবো’— বলছিলেন নুসরাত জাহান ইলমা। ইপ্সিতা রশিদ অবনী বলেন, ‘আমার ভাই হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত। আমি আগে বই পড়তাম না। কিন্তু, বাসার শেলফে বই দেখে পড়া শুরু করি।’
মো. কামরুল হাসান গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে স্নাতক পড়ুয়া। হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে বইমেলায় এসেছেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবছর ধরে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ি। হিমু সিরিজ আমার পছন্দ। আজ হিমু সমগ্র এবং নীল মানুষ, কে কথা কয়– বইগুলো কিনতে মেলায় এসেছি।’
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া কাশফিয়া আক্তার ছোটবেলা থেকেই আসছেন বইমেলায়। তার ইচ্ছে নিজের বইয়ের সংগ্রহ বাড়াবেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, ‘আমি ছোটবেলা থেকে বইমেলায় আসি। বাসায় হুমায়ূন আহমেদের অনেক বই আছে। প্রতিবার বইমেলায় আসলে উনার অন্তত দুটি বই কেনা হয়। আমি হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সংগ্রহ বাড়াতে চাই।’
কাকলী প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে কর্মরত মেহেদী হাসান আসিফ ঢাকা টাইমসকে জানান, বেচাকেনা ভালই চলছে। বিক্রির শীর্ষে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বই। কোথাও কেউ নেই, শ্রেষ্ঠ হিমু, কবি, শ্রেষ্ঠ মিসির আলি এবং গল্পসমগ্র বইগুলো ভালো চলছে।
একই প্যাভিলিয়নের বিদ্যুৎ দত্ত বলেন, ‘অনেকেই এসে জাফর ইকবালের নতুন বইয়ের খোঁজ করছে। আমাদের প্রকাশনী থেকে এবার জাফর ইকবালের স্মৃতি সমগ্র বইটি বের হচ্ছে।’
অন্যপ্রকাশ প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী শাফায়েত হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ বই অন্যপ্রকাশ থেকেই বের হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের চাহিদা থাকবে। অন্যপ্রকাশ মানেই হুমায়ূন আহমেদ। তবে, সাদাত হোসাইনের বইও ভালো চলছে।
কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী নাছির আহমেদ সেলিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের পাঠকরা হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া অন্য বই পড়ে না। অন্য কোনো লেখক এ জায়গাটি দখল করতে পারেনি। উনি যখন মেলায় আসতেন তখন দর্শনার্থীদের ভিড়ে প্যাভিলিয়ন ভেঙে পড়ার উপক্রম হতো।’
(ঢাকাটাইমস/০৭ফেব্রুয়ারি/এসকে/ইএস)