কারাগার থেকে বেরিয়ে গড়ে তোলেন কিশোর গ্যাং, মোহাম্মদপুরে জুলফিকারের অপরাধ সাম্রাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৩৩ | প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৬

অষ্টম শ্রেণি পাসের পর ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন জুলফিকার আলী। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর নারায়ণগঞ্জে পিকআপে হেলপারি শুরু করেন। এসময় মালামাল চুরির অপরাধে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় মামলা হয়। পালিয়ে চলে যান সৌদি আরব। ২০২১ সালে দেশে ফিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। দুই মাস পর জেল থেকে বেরিয়ে গড়ে তোলেন দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ। যারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালান। দিনেদুপুরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, যাকে তাকে মারধরসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন।

আলোচিত একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপের মূলহোতা জুলফিকার আলীকে গ্রেপ্তারের এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। শুক্রবার রাতে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে বাহিনীটি। শনিবার র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ‘ডায়মন্ড’ ও ‘দে ধাক্কা’ নামের দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ নানা অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, যা পরিচালনা করতেন জুলফিকার আলী ও তার সহযোগীরা। মোহাম্মদপুরের হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

তারা হলেন- চক্রের অন্যতম হোতা মো. জুলফিকার আলী, তার অন্যতম সহযোগী হারুন অর রশিদ, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ও সুরুজ মিয়া। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুটি চাপাতি ও সাতটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুরজুড়ে জুলফিকারও তার সহযোগীদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে ডায়মন্ড ও দে ধাক্কা। গ্যাং দুটির সদস্যরা নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিত। খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াত। জুলফিকারের কিশোর গ্যাং চালানোর জন্য হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সহযোগী হিসেবে কাজ করত। জুলফিকার মূলত ডায়মন্ড ও দে ধাক্কা গ্রুপের সদস্যদের দেশি-বিদেশি অস্ত্র সরবরাহ করত। দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় নিয়মিত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ছিনতাই, মাদক, ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল।

র‍্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাসনগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় ইত্যাদি এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত। এছাড়াও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে পথচারীদের মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঠিকাদারের কাজ আটকে দিতো।

র‌্যাব-৩ এর এই কর্মকর্তা বলেন, জুলফিকার ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরবর্তী সময়ে একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করে। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর পিকআপে হেলপারি শুরু করে। এসময় মালামাল চুরির দায়ে মামলা হলে বিদেশে চলে যায়। ২০২১ সালে দেশে ফিরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাস জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়। জেলে বসে হারুনের সঙ্গে জুলফিকারের সখ্য গড়ে ওঠে। জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টিউবওয়েল মিস্ত্রীর কাজ শুরু করে। এ সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে কৃষ্ণ শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তাদের সঙ্গে পরামর্শে ২০২২ সালে ডায়মন্ড নামের কিশোর গ্যাং তৈরি করে। গ্যাংয়ের সদস্যদের অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দিক নির্দেশনা দিত জুলফিকার। পরবর্তী সময়ে আরও একটি কিশোর গ্যাং বাহিনী গড়ে তোলে। যারা নাম দেওয়া হয় ‘দে ধাক্কা’। বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে মোহাম্মদপুর এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করত। হারুন ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিল। জামিনে বেরিয়ে জুলফিকারের সঙ্গে কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছিল।

এছাড়াও শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেটকার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করেন। এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমেই মূলত তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। তাদের দৃশ্যমান পেশার আড়ালে তারা কিশোর গ্যাং চালাতেন।

ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :