আমি যেভাবে প্রতারিত হলাম

রেজাউল মাসুদ
| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫৭ | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৯

বৃহস্পতিবার সাড়ে এগারোটায় গ্রামীণ নম্বর 01335072072 থেকে একটা কল আসে। কলের ও প্রান্ত থেকে এক মহিলা (চাইনিজ এর মতো কথা বলে) আমাকে ফ্রি ল্যান্সিং এর অফার দেয়। আমি আগ্রহী কি না জিজ্ঞাসা করে। পরে সে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর 01403229489 এ মেসেজে আসতে বলে।

তার প্রথম মেসেজের কথা ছিল, আমি সায়মা সুলতান, রেঙ্কস ট্রেন্ডস, ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে বলছি। আমার এক কলিগ আপনার নম্বর দিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। আপনি পার্টটাইম কাজে আগ্রহী জেনে আপনাকে মেসেজ দিলাম। আমাদের কাজের ধরন হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেলস প্রমোট করা। আপনি ইউটিউব চ্যানেলে লাইক, সাবস্ক্রাইব করলে প্রতিদিন এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।

আমি তার কথায় আগ্রহী হলাম, তারা দুটি টাস্ক দিল আমায়। দারাজ.পিকে এবং রকমারী.কম দুটি সাইটে সাবস্ক্রাইব করে স্ক্রীনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলে।এরপর নগদ এবং টেলিগ্রাম একাউন্ট আছে কি না জানতে চায়? তাদের দেয়া টেলিগ্রাম লিংকে গিয়ে আমার কাজের বিনিময় মূল্য ৩০০ টাকা দাবি করতে বলে। আমার দেয়া বিকাশ একাউন্টে ৩০০ টাকা পাঠিয়ে দেয়। আমি কৌতূহলী হয়ে পুলকিত হয়ে উঠি। কেবলমাত্র দুটো সাইটে সাবস্ক্রাইব করে তিনশ টাকা আমার বিকাশ একাউন্টে! যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।

তারা নতুন আরেকটি টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন করতে লিংক পাঠায়। আমি জয়েন করে দেখতে পাই, তাদের দিনে ২৫টি টাস্কিং রয়েছে। প্রতিটি টাস্কিং ১০০ টাকা করে। নির্ধারিত সময়ে এ কাজগুলো করতে পারলে বোনাসসহ ৮০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে। আমি তাদের কথামতো কাজ করতে থাকলাম। আমি আমার বিকাশে টাকা পেতে থাকি। তাদের আরও এডভান্স বেনিফিট টাস্ক নামে অফার দিতে থাকে। সেটা হলো, যদি ১৬০০ টাকার হোমওয়ার্ক কিনেন তাহলে ২৪০০ টাকা ক্যাশব্যাক পাবেন। তখন পূর্বের টাস্কগুলো ১৫০ টাকায় পরিণত হবে। নতুন মেম্বার হলে আপনার জন্য এই টাস্কটি পারফেক্ট। তাদের কথায় আমি কনভিন্সড। টাকা ইনভেস্ট করতে থাকি।

তারা পরবর্তী সময়ে টীম লিডার সাহাবুদ্দিন নামে একজনের টেলিগ্রাম ভিআইপি গ্রুপে এড করে নেয়। আমাকে ক্রিপ্টো একাউন্ট রেজি. করতে বলে। তাদের কথামতো একাউন্ট খুললে ই ওয়ালেটে ২৪০০ টাকা জমা হয়। এই ২৪০০ টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সী থেকে বিকাশে ক্যাশআউট করি। আরও তিনটা অ্যাডভান্স বেনিফিট টাস্ক দিয়ে প্রিমিয়াম ভিআইপি মেম্বারের অফার দেয়। টাস্কগুলো হলো ৫৩২০ টাকায় বিটকয়েন কিনে তাদের নম্বরে বিকাশ করলে ৬৯১৮ টাকা পাওয়া যাবে। ১৬৯৯৯ টাকায় ৩০৪২০ টাকা এবং ৩৮৯৯৯ টাকায় ৭৬০৪৯ টাকা পাওয়া যাবে। আমি বিটকয়েন ক্রয় করি। ই ওয়ালেটে টাকা জমা হতে থাকে। লাস্ট টাস্কিং এর ৩৮৯৯৯ টাকা সিটি ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের শাখায় জমা করি।

আমার ওয়ালেটে ১২৩৬৩৮ টাকা জমা হয়। আমি ক্যাশ আউট করতে চাইলে তারা আরও টাস্কিং এর কথা বলে। ক্যাশ আউট করা দরকার ছিল, তারা নানান রকম কথা বলে টালবাহানা করতে থাকে। সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে, সার্ভার ডাউন, হ্যাকার এটাক করেছে, নানান রকম অজুহাত। কয়েকদিন ক্যাশ আউট হবে না, তারা জানান এর মাঝে আপনি টাস্কিংগুলো করে ফেলতে পারেন। সেটা ছিল ৯৯৯০০ টাকায় বিটকয়েন ক্রয়ে ৩২৬০০০ টাকা পাওয়া যাবে। ক্যাশ আউট না করে দুশ্চিন্তায় পরে যাই। বুজতে ছিলাম বড় ধরনের প্রতারকের পাল্লায় পড়েছি।

প্রতারিত বন্ধুটিকে সেদিন পেটভরে ভাত খাইয়ে আশ্বস্ত করে বলছিলাম তোমার টাকা উদ্ধার না করে দিতে পারলেও প্রতারক চক্রটিকে আমরা ধরবো ইনশাল্লাহ!!!

চলবে..........

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :