মিরপুরে ঝিলপাড় বস্তিতে আগুন

অল্পের জন্য সন্তানসহ প্রাণে বাঁচেন রোকসানা

লিটন মাহমুদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৩২ | প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৩

‘পোলারে নিয়া শুইয়া আছিলাম। হঠাৎ কইরা আশেপাশে থাইকা চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে। ঘর থাইকা বাইর হইয়া দেহি দাউদাউ কইরা আগুন জ্বলতাছে। এইডা দেইহা কী করমু কিচ্ছু বুঝবার পারছিলাম না। দৌড়ায়া ঘরের ভিতর গিয়া কোনোমতে পোলাডারে নিয়া বাইর হইতে পারছি। ঘরে কী আছে না আছে তা মাথায় আছিল না।’- কথাগুলো বলতে বলতে বিলাপ করে কাঁদছিলেন মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে সব হারানো রোকসানা আক্তার।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে দুপুর ২টায় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বস্তিতে আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে প্রায় ৩০০টি ঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

পাঁচ বছর ধরে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে এই বস্তিতে বসবাস করেন বেকারি মাল বিক্রেতা রিয়াজ মোল্লা। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজ ঘরের পোড়া অংশের পাশে দাড়িয়েছিলেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঘরে চার লাখের মতো টাকা ছিল। সব পুড়ে আমি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার তিনডা পোলাপান স্কুলে পড়ে। কেমনে ওদের স্কুলের খরচ দেব, কিছুই মাথায় আসতেছে না। আমার কোনো অস্তিত্ব থাকল না।’

আরাফাত ইসলাম নামে আরেক যুবক বলেন, ‘হঠাৎ লাগা আগুন কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেও কিছু বাঁচাতে পারিনি। বস্তির পূর্ব অংশের কিছু ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করা সম্ভব হয়েছে। এখন এসব পোড়া অঙ্গারের নিচে সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছি কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কি না।’

এই বস্তির বাসিন্দা মো. বসু মিয়া বলেন, ‘আমি নামাজে গিয়েছিলাম। হঠাৎ শুনি আগুন লেগেছে। তখন দৌড়ে এসে ঘরে ঢুকি। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে সব অন্ধকার হয়ে যায়। মানুষজন আমাকে টেনে বাইরে বের করে নিয়ে আসে। এখানে ঘরে আমার চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মতো জিনিসপত্র পুড়েছে। আমরা গরিব-অসহায় মানুষ। সারা জীবনের যা আয় ছিল, সবকিছুই এখানে ছিল। লুঙ্গি, গামছা আর মোবাইল ছাড়া আমার কাছে এখন এক টাকার সম্পত্তিও নেই।’

এদিকে আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর জোনের উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মিরপুর ১২ নম্বরের ঝিল পাড় বস্তিতে আমরা দুপুরে আগুন লাগার খবর পাই। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় থানাসহ আশপাশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এখানে আনা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে এনে তাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছি। দুপুর ২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুনে কেউ আহত বা নিহত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সুন্দর রয়েছে। এরপরও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এরপরও তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/এলএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :