প্রভাবশালীদের মদদে কিশোর গ্যাংয়ের রাজত্ব, দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২৭

রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শহরে ত্রাস সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ লিডারসহ ২৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র্যাব-৩)। প্রভাবশালীদের মদদে রাজধানীতে এসব গ্যাং দৌরাত্ব দেখায় বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
মঙ্গলবার রবিবার বিকালে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে জানান র্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাব্বি, মো. হৃদয়, মো. মুন্না, মো. হাসান, আব্দুর রশিদ এসহাক ওরফে রকি, মো. শুভ, সিফাত, রাকিব, তন্ময় হোসেন, মিলন, মো. রাজন, মো. ইয়াছিন, মো. ইমন, আবু তাওহীদ সাফির, মো. সিয়াম, রাকিবুল ইসলাম, জাকির হোসেন, মো. রাকিব, নাফিস হোসেন মুন্না, মো. শুভ, রবিউল শেখ, মোশারফ, সোহেল, শুভ, বাবুল খান, নজরুল হক, মো. বাবুল হোসেন।
তাদের কাছ থেকে তিনটি চাপাতি, দুইটি ক্ষুর, ১০টি চাকু, একটি স্টিলের ব্রাস নাকল্স, দুইটি সুইচ গিয়ার, একটি চাইনিজ চাকু, একটি এন্টিকাটার, একটি কাঁচি, একটি লোহার রড, ২৫টি মোবাইলফোন, ২০টি সিমকার্ড এবং নগদ ১৪ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি 'কিশোর গ্যাং' গ্রুপের সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোনো ঘটনায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ সব সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়।
তিনি বলেন, শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর, বংশাল ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র্যাব। এর ফলে র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয় এবং রাজধানীর শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর ও বংশাল থানাধীন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদক সেবন, অস্ত্র প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানান অনৈতিক কাজে লিপ্ত। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের বিপথগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
অধিনায়ক আরও বলেন, গতকাল (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত র্যাব-৩ এর পৃথক পৃথক আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং রাব্বি গ্রুপের পাঁচজন, হৃদয় গ্রুপের সাতজন, মুন্না গ্রুপের তিনজন, হাসান গ্রুপের দুইজন, এবং রকি গ্রুপের ১০ জনসহ সর্বমোট ২৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এদের প্রতিটি কিশোরগ্যাং গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য থাকে। রাব্বি গ্রুপটি সন্ত্রাসী মো. রাব্বির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দলের কারণে তারা দুই থেকে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়। হৃদয় গ্রুপটি অভিযুক্ত হৃদয়ের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর বংশাল ও আশাপাশ এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা গুলিস্থান, বংশাল, চকবাজার এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল।
এছাড়াও শাহজাহানপুর ও সবুজবাগ এলাকায় মুন্না এবং হাসান গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন যাবত সন্ত্রাসী মো. মুন্না এবং হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর শাহাজাহানপুর, সবুজবাগ, খিলগাঁও এবং এর আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মারামারিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত।
অভিযুক্তদের মধ্যে রকি গ্রুপটি রাজধানীর শ্যামপুর কদমতলী, যাত্রাবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় আসামি রকির নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারা এসব এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং বিভিন্ন মানুষকে হুমকি, মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করে থাকে। তাদের মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা। এছাড়াও তারা রকির নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পেশায় গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, গ্যারেজ মিস্ত্রি, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল।
এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কাদের নেতৃত্ব এমন কার্যক্রম করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার প্রভাবশালীদের মদদে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজত্ব করেন। আমরা তাদের তথ্য পেয়েছি। তাদের পেছনে আমাদের গোয়েন্দা টিম কাজ করছে।
(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/এলএম/ইএস)

মন্তব্য করুন