এগিয়ে যাচ্ছে নারী, তবে চ্যালেঞ্জ বহুমুখী

শতবাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নারী। তবুও পুরনো সংস্কারের ভিত নাড়িয়ে দেওয়া এত সহজ নয়। ফলে প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই এগুতে হচ্ছে নারীকে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে নারী এগিয়ে গেলেও নানামূখী চ্যালেঞ্জের দুর্বোধ্য জালে নারীরা আটকে আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রায় সর্বক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে তবে অংশীদারিত্বে তাদের অবস্থান কোথায়? এখানে বিশাল দূরত্ব রয়েছে এখনও। এই অবস্থান থেকে উত্তরণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীকে আনতে হবে। দেশে এখন অনেক ই-কমার্স চালু রয়েছে। সেখানে অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থাৎ মেনেজমেন্ট পজিশনে কতজন রয়েছে? একইভাবে প্রশাসনিক পর্যায়ে উন্নতি হয়েছে। নারী সচিব রয়েছে দশের অধিক। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনীতি এবং সামাজিকক্ষেত্রে অনেক নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় অনেক গ্যাপ রয়ে গেছে। এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলোতেও নেতৃত্বের পর্যায়ে খুব কম নারী রয়েছে। তাই অংশগ্রহণ অনেক হলেও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’
নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে এটি দৃশ্যমান হলেও এখনও চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু ঝরে পড়তে শুরু করেছে এবং বাল্যবিবাহের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে খুব অগ্রগতি হয়েছে সেটি বলতে পারি না। গতবারের তুলনায় সংসদে নারীর অংশগ্রহণ এবার কমেছে। এমনকি মজুরিসহ নানা ধরনের সুযোগ ও সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্যও রয়েছে।’
দুই দশকের তুলনায় নারীরা অনেক এগিয়েছে তবে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ বিষয়ে মালেকা বানু বলেন, ‘নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নারীর নিরাপত্তাহীনতা একটা বড় সমস্যা। যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপদ নয় নারীরা। শারীরিক নিরাপত্তাহীনতা তো রয়েছেই কর্মজীবী নারীর যে সুবিধাগুলো থাকা দরকার বা যে অধিকারগুলো নিশ্চিত হওয়ার দরকার সেগুলো নেই। যেমন একজন কর্মজীবি নারী তার সন্তান কোথায় রাখবে সেজন্য দিবাযত্নকেন্দ্র নেই। এছাড়া ঘরের কাজে তার পুরুষ সদস্যের সহযোগিতা পায় না। তাই এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে না পারলে এই অগ্রগতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এর জন্য অবশ্যই নারীর অগ্রযাত্রাকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে হবে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে।’
নারীর জন্য অনেক আইন থাকলেও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সালমা আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একসময় খুব বৈষম্যমূলক আইন থাকলেও এখন অনেকটা কমেছে। তবে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে লোকবল দরকার সে জায়গায় এখনও ঘাটতি রয়েছে। এখনও অনেক ভালো আইন রয়েছে যেগুলো নিয়ে বিস্তর কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য 'নারীর সম অধিকার, সম সুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ'। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারী যেন রাস্তাঘাটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ঘরে সবজায়গায় যেন সাহস নিয়ে সুস্থভাবে একজন পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে সেই জায়গা তৈরি করতে হবে। তবে সেজন্য তৃণমূল থেকে ওপর পর্যন্ত নারীবান্ধব পরিবেশ দরকার সেজন্য আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বিশাল দায়িত্বের পাশাপাশি পরিবারেরও ভূমিকা রয়েছে। পরিবার যেন ছেলে এবং মেয়েকে আলাদাভাবে না দেখে।’
(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/২০২৪)

মন্তব্য করুন