আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ২০:৫২ | প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০২৪, ২০:১৫

আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ের প্রকল্প পরিচালক শাহবুদ্দিন খান।

ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছে প্রকল্প কর্মকর্তারা।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) এই প্রকল্পের জন্য ডিজাইন এবং পর্যালোচনার পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘টিপসা’ কর্তৃক প্রদত্ত কিছু বাধ্যতামূলক নির্দেশ অমান্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত বছরের শুরুর দিকে সিএমসিকে দেওয়া টিপসার একটি চিঠিতে পাইলের কাজে বড় অসঙ্গতিগুলোর কথা বলা হয়। তারা যে নির্দেশগুলো সম্পূর্ণভাবে অমান্য করছে, সেই প্রমাণও পাওয়া যায়। টিপসা জানিয়েছে, প্ল্যাটফর্মে যে কেসিং পাইল ছিল তার মান অনেক খারাপ ছিল।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির কর্মকর্তা মা ঝিহুয়া বরাবর পাঠানো চিঠিতে আরো বলা হয়, ঠিকাদারকে একাধিকবার ইস্যুটি ধরিয়ে দেওয়া হলেও তারা আমলে নেয়নি। উল্টো নির্দেশিত মানদণ্ড অনুসরণ না করে নির্মাণকাজ চালিয়ে গেছে। এতে পাইলিং সম্পন্ন হওয়ার পর সেটি প্রায় ৭০-৭৫ মিলিমিটার ডেবে যায়। এমনকি পাইলিং প্লাটফর্মটি প্রয়োজনের চেয়ে কম উঁচু করায় তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় এবং কংক্রিটের ঢালাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঠিকাদারকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং প্ল্যাটফর্ম স্তরে তাদের পাইলের উপরে কেসিং রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, ঠিকাদার ইআরএ নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করেনি, বরং তারা বোরিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এর আগে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কন্ট্রাক্টরের (সিএমসি) অবহেলার কারণে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি একজন নির্মাণ শ্রমিকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। এর পরদিনই প্রকল্পের ডিজাইন রিভিউ কনসালটেন্ট টিপসা কর্তৃক সিএমসিকে দেওয়া একটি চিঠিতে ঘটনার বেশকিছু কারণ অবহেলা স্পষ্ট করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প কাজে যথাযথ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়নি। একটি বৈদ্যুতিক শক তরঙ্গ আশপাশের উচ্চ ভোল্টেজের তার থেকে নির্গত হয়েছিল, যা কার্যক্ষেত্রের কাছাকাছি ছিল, এটি ছিল প্রায় সাড়ে ছয় ফুটের মাঝে। কিন্তু সিএমসি স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিকল্পনায় নির্ধারিত দূরত্ব হলো কমপক্ষে ২৫ ফুট। নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুযায়ী দূরত্ব কম থাকায় এটিই প্রমাণ হয় যে, সিএমসির ব্যর্থতার কারণে একজন শ্রমিকের দুঃখজনক অকাল মৃত্যু হয়েছে।

দুর্ঘটনার জন্য কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। এমনকি স্থানীয় শ্রমিকদের জন্যেও রাখা হয়নি কোন বীমা সুবিধা। যদিও শ্রমিকদের জন্য বীমা সুবিধা থাকাটা ছিল বাধ্যতামূলক এবং এটা চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রতিটি পেমেন্টে শ্রমিকদের বীমা সুবিধার আওতায় আনতে অর্থ দিয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় শ্রমিকদের বীমার ব্যবস্থা করে না চায়না কোম্পানি সিএমসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি সিএমসির কাছ থেকে অর্থ সংরক্ষণের জন্য বিবিএ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) নির্দেশ দিয়ে একটি রিট পিটিশনের রুল দিয়েছে। আদালত বিবিএকে সংশ্লিষ্ট অংশের জন্য অর্থ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশ কার্যকর করতে বিবিএ গত ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশ জারি করে।

চাইনিজ কোম্পানি সিএমসির বিরুদ্ধে অতীতেও অর্থ প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে তারা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) অনুমোদিত কোম্পানি এসটিইউপি এবং এনসিএমইকে ডিজাইনভিত্তিক রিপোর্ট (ডিবিআর) তৈরি করার জন্য নিয়োগ করে। সেই রিপোর্টের বিল পরপর দুইবার ২০১৮ ২০২১ সালে লিখিত নোটিশ দেওয়া হলেও এসটিইউপি এবং এনসিএমইকে ডিজাইনের অর্থ দেয়নি সিএমসি।

শাহবুদ্দিন খান বলেন, ‘‌‌ঠিকাদারেরর বিরুদ্ধে একটি পাইলের কাজ নিয়ে সমস্যা ছিল। পরে আমরা অবজারভেশন দিয়েছি, যাতে পরবর্তী সময়ে তারা আরো সতর্ক হয়। ওইটাকে পয়েন্ট আউট করা হয়েছে, পরে তারা সাবধান করে। ধরনের প্রকল্পে গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইন্টারসেকশন থেকে শুরু হয়ে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল দিয়ে ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি। মূল উড়াল সড়কটির দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার।

চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি একপ্রেসওয়ের নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করছে। চুক্তিমূল্য ১৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২০১৭ সালের এক বৈঠকে অনুমোদন পায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এর প্রস্তবে বলা হয়েছে, উড়াল সড়কটি বাস্তবায়ন হলে ফাইন্যান্সিয়াল আইআরআর ইকোনমিক আইআরআরের পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৩ দশমিক শূন্য ১৩ দশমিক শতাংশ। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক বেনিফিট কস্ট রেশিওর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে দশমিক শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ। জিডিপিতে দশমিক ২২ শতাংশ প্রভাব ফেলবে উড়াল সড়ক।

(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/এইচএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :