অগ্নিঝুঁকিতে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হবে

তানিয়া আক্তার, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২৪, ১৭:১২

রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বিষয়টি চিহ্নিত হলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেননি সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভয়াবহ এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরেজমিন ৮০১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৭৮৪টি প্রতিষ্ঠানই অগ্নিঝুঁকিতে আছে। এতে বলা হয় ৬৪টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, ৭২০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও মাত্র ১৭টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা সন্তোষজনক।

নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে ভবনগুলোকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে থাকে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর। যেমন প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য সিঁড়ির সংখ্যা, সিঁড়ির প্রশস্ততা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সংখ্যা, ফায়ার হাইড্রেন্টের প্রাপ্যতা এবং জলাধারের সক্ষমতা।

তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) পরিদর্শনের তালিকায় রয়েছে ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই তালিকার সবগুলো প্রতিষ্ঠান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্নিঝুঁকি নিরুপনের জন্য যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ অ্যান্ড ফায়ার প্রিভেনশনের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিক আওয়ারে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী থাকে এবং তাদের জন্য ফায়ারের বিধিবিধান অনুয়ায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা দেখা হয়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চেয়ার-টেবিল ছাড়া দাহ্য বস্তু নাই। তবুও যে মানের অগ্নিনিরাপত্তার যে ব্যবস্থা থাকার কথা তা রয়েছে কি না। এমন বিষয়গুলো দেখা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ফায়ার সার্ভিস এই জরিপ করে এলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সচেতন হচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই আমরা অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে দৃশ্যমান হতো না। ফলে এতবছর ধরে সার্ভে করে এলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচেতন হচ্ছে না। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যারা অনুমোদন দিয়েছে তারা একটি একাডেমিক ভবন সুরক্ষার জন্য যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া দরকার তা দেখেনি। ফায়ার সেইফটির বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুযোর্গ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই ফায়ার সেইফটি মেনটেইন করে ভবনটিকে ডিজাইন করতে হবে। অতীতে অগ্নিনিরাপত্তা এতটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হতো না। এখন অগ্নিদুর্যোগগুলো বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্তমানে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিটগুলো ভালোভাবে ডিজাইন করা হয় না। উন্নত দেশে ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিটগুলো ভবনের বাইরে থাকে এবং প্রতিটি ফ্লোর থেকেই এক্সিট করার ব্যবস্থা থাকে। অর্থাৎ ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট দিয়ে শুধুই বের হওয়া যাবে কিন্তু কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে এটি দৃশ্যমান নয়। ইর্মাজেন্সি ফায়ার এক্সিটের ব্যবস্থা ভবনের ভেতরে রাখার ফলে আগুন লাগার পর ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে মানুষ মারা যায় বেশি।’

অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়েও ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিটগুলো ভবনের ভেতরে রয়েছে। কিন্তু আগুন লাগলে ভেতরের সিঁড়ি তেমন উপকারে আসবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিটগুলো ভবনের বাইরে রাখতে হবে। সেক্ষত্রে আগুন লাগলে খুব দ্রুত বাইরে বের হয়ে যেতে পারবে এবং কেউ ধোঁয়াচ্ছন্ন অবস্থার শিকার হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফায়ার ড্রিল (অগ্নি মহড়া) করতে হবে। পাশাপাশি স্কুল থেকেই অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এমন অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফায়ার সেইফটি নির্ভর করে ভবনের ধরনের উপর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেখানে বেশি লোক সমাগম হয়; যেমন একাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হলগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আমরা এখন ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিটগুলো নিয়ে কাজ করছি। এগুলো সচল রাখতে হবে এবং গেইটের চাবি এমন জায়গায় সংরক্ষিত রাখতে হবে যাতে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই খুলে দেওয়া যায়।’

স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলোর দায়িত্বে রয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে আমরা যে নতুন ভবনগুলো দেখভাল করি সেখানে কিছু ব্যবস্থা থাকে। যদিও সেটি খুব সীমিত। যেমন, প্রতি ফ্লোরে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা এবং সিঁড়িগুলো প্রশস্থ রাখা। এছাড়া প্রতিটি নতুন ভবনের নকশার সঙ্গেই পানির পাম্প থাকে।’

দেলোয়ার হোসেন মজুমদার আরও বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে বরাদ্ধ লাগবে। যদি সরকার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে তবে বরাদ্ধ দিতে হবে। আমরা রেট্রোফিটিং বা বিদ্যমান ভবগুলোকে রেখে মজবুতিকরণ করে থাকি। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যদি সুনির্দিষ্ট করে বলা হয় তবে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কাজ করবো। যদি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিতকরণ করতেও বলা হয় তবে সে কাজটি করতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে একটি প্রকল্পের আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কতটা অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে তা সার্ভে করে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত যে সহায়তা প্রয়োজন সেটি দিতে পারবো।’

(ঢাকাটাইমস/০৯মার্চ/টিএ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :