নিয়ামতপুরে ধানের বাম্পার ফলন, খড়ের দামই ৯০ কোটি টাকা 

এস কে সরকার, নিয়ামতপুর (নওগাঁ)
  প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২৪, ০৮:২২
অ- অ+

ধানের জেলা হিসেবে খ্যাত নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ধানচাষিরা রোপা-আমন মৌসুমে ধানের দাম ভালোই পেয়েছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খড়ের বাড়তি দাম। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের খড়ের দামও বেশি। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই ভ্যান, ট্রাক আর ভটভটিতে করে খড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমে উপজেলায় ৩০ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। ১ হেক্টর সমান ৭ দশমিক ৪৭ বিঘা। অর্থাৎ বিঘার হিসাবে ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ বিঘা। ১ বিঘা জমিতে গড়ে ১ কাউন (১২৮০ আঁটি) খড় উৎপাদন হয়। ১ কাউন খড় বর্তমানে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।

সেই হিসাবে উপজেলার ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ বিঘা জমিতে উৎপাদিত খড়ের গড় বাজারমূল্য ৯০ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা।

গত কয়েকদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খড় বেচাকেনার চিত্র দেখা। গাবতলী বাজার ব্রিজে একসঙ্গে পাঁচটি খড়ের গাড়ি পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ীরা গাড়ি থামিয়ে চা খাচ্ছিলেন। সেখানে কথা হয় নাটোরের মো. আব্দুল জব্বারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ভটভটিতে (১০ কাউন) ১২ হাজার ৮০০টি খড়ের আঁটি রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি এই খড় কিনে নিয়েছেন। প্রতি কাউনের দাম পড়েছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। সেই হিসাবে এক আঁটি খড়ের দাম পড়েছে সাড়ে চার টাকা। একই কথা বললেন মাগুরার ব্যবসায়ী মো. সাখাওয়াত।

উপজেলার রামনগর গ্রামে কথা হয় খড় স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আব্দুল আলীমের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এখন স্বর্ণা জাতের ধানের ভালো খড় ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় কিনছি। এসব খড় ট্রাকে করে খুলনা, বাগেরহাট, পাবনা,ফরিদপুর, নাটোর জেলায় পাঠায়। তিনি আরও জানালেন, নিয়ামতপুরে আমনের খড় সারা বছর বিক্রি হলেও ধান মাড়াইয়ের পরপরই আর বোরো ধান রোপণের আগে বেশি বিক্রি হয়। আমি প্রতিদিন গড়ে ১লাখ ৫০ হাজার টাকার খড় কিনছি।

আরেক ব্যবসায়ী মো. জয়নাল জানালেন, আমি প্রতি বছর প্রায় কয়েক কোটি টাকার খড় কিনি। গত ডিসেম্বর মাসের তুলনায় এখন প্রতি কাউন খড়ের দাম ১০০০ টাকা বেশি।

ভাবিচা গ্রামের কৃষক শ্যামল কৃষ্ণ রায় জানালেন, আমি গত কয়েকদিন আগে ৩ কাউন খড় বিক্রয় করেছি। গত বছরের চাইতে এবার দাম বেশি পেয়েছি।

একই গ্রামের কৃষক সুবোধ সরকার জানালেন, আমি এবার বর্গা দেওযা জমি থেকে ব্রি- ৫১ ধানের খড় পেয়েছি। আমার বাড়িতে কোনো গবাদিপশু নাই। তাই সব খড়ই বিক্রি করে দিয়েছি।দামও ভালো পেয়েছি।

ভাবিচা আনন্দ বাজারের চা দোকানি মো. ইসমাইল জানালেন, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি খড়ের ভ্যান, ভটভটি আর ট্রাক যেতেই আছে। যেতেই আছে। তাতেই বোঝা যায় এই উপজেলায় খড়ের ভালো কেনাবেচা হয়।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলায় এবার আমন মৌসুমে স্বর্ণা ৫; ব্রি ধান- ৫১,৯০,৯৫,৯৩; বিনা- ৭, ১৭, ৩৪, ৪৯ এবং বিন্নাফুলি জাতের ধান রোপণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ব্রি-৫১,৯৫ ও স্বর্ণা ৫ জাতের ধানের খড় খুব ভালো হয়। খড়ের জন্য কৃষকেরা এই দুই জাতের ধান বেশি রোপণ করেন। এই খড় প্রধানত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই উপজেলা ধান প্রধান হওয়ায় খড়গুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে কৃষকেরা ৬০-৭৫ ভাগ খড় বিক্রি করে দেন। তিনি আরও জানান, দেশের অনেক জায়গায় বন্যা হওয়ার কারণে খড় নষ্ট হয়ে যায়। তখন খড়ের জন্য চাহিদা বেড়ে যায়। তখন কৃষকেরা বেশি দামে এই খড় বিক্রি করেন। তাই ধান ও খড়—দুটোই কৃষকের জন্য সমান লাভজনক।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এআর/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আইইউবিএটি’র প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এম. আলিমউল্যা মিয়ানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এনসিসি ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি 
অন্তর্বর্তী সরকারও শেখ হাসিনার মত নানাভাবে ন্যারেটিভ তৈরি করছে: রিজভী 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা