গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: আগুন দেখতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ৩২ জন

গাজীপুরে কালিয়াকৈরের টপস্টার এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ ৩২ জন দগ্ধ হয়েছেন। তারা বেশিরভাগই পোশাকশ্রমিক। ভুক্তভোগীদের স্বজনরা বলছেন, সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হওয়ার ঘটনাটি দেখতে গিয়ে তারা দগ্ধ হন।
আহতরা সবাই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তবে সবার অবস্থা আশঙ্কাজন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বুধবার ইফতারের আগ মুহূর্তে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের টপস্টার এলাকায় দু’পাশে সারি করে লম্বা আকৃতির টিনশেড বাড়ির একটি ঘরের বাইরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়।
জানা যায়, শফিক নামের একজন কন্ট্রাক্টে এই টিনশেড বাড়িগুলো করেন। এখানে ছোট ছোট ঘরে আলাদা আলাদা পরিবার থাকে। বুধবার বিকালে নিজের ঘরে রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার কিনে আনেন শফিক। এরপর সেটি সংযোগ দেওয়ার সময় সেখান থেকে প্রচুর গ্যাস বের হয়। এসময় তিনি সিলিন্ডারটি ঘর থেকে বের করে করিডরে ফেলে দেন। এ ঘটনা দেখতে জড়ো হন অনেকে। এসময় পাশে মাটির চুলায় রান্না করছিলেন মুক্তি নামে এক নারী। তখন সেখান থেকে আগুনের সংস্পর্শে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে নারী, শিশুসহ ৩২ জন দগ্ধ হন।
দগ্ধদের মধ্যে এই টিনশেড বাড়ির মালিক শফিকের পাঁচজন স্বজনও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চতুর্থ তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে বসে কথা হয় শফিকের বোন ময়ূরী সঙ্গে।
তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমার পরিবারের পাঁচজন এই আগুনে পুড়েছে। আমার ছোট ভাই মহিদুল, বোন শিল্পী, ভাইয়ের বউ নারগিস, ভাগ্নে নূরন্নবি, আরেকজন নিরব।
সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কীভাবে হয়েছে জানেতে চাইলে ময়ূরী বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না হচ্ছিল বাসায়। হঠাৎ গ্যাস শেষ হওয়ায় নতুন সিলিন্ডার নিয়ে আসে আমার ভাই শফিক। কিন্তু রেগুলেটর ঠিক মতো লাগাতে না পারায় গ্যাস বের হচ্ছিলো। এতে আমার ভাইয়ের পুরো শরীরে গ্যাস লেগে যায়। ভাই ভয় পেয়ে দ্রুত সিলিন্ডারটি ঘরের বাইরে নিয়ে ফেলে। তখনও গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। সেসময় ঘরের বাইরে তেমন মানুষ ছিল না। এক মহিলা (নাম মুক্তি) তখন বাইরে লাকড়ি দিয়ে রান্না করছিল। আমি ওই মহিলারে বলেছি যে আপনি চুলাটারে পানি দিয়ে নিভিয়ে দেন। কিন্তু মহিলা কথা শুনে নাই। এ ঘটনা দেখে আশেপাশে অনেকে জড়ো হন। তারা সবাই মনে করেছেন সিলিন্ডারের গ্যাস সব বের হয়ে গেছে, এখন আর সমস্যা হবে না। এরপর হঠাৎ চুলার আগুনের সংস্পর্শে এসে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতেই সবাই দগ্ধ হন।
ময়ূরী আরও বলেন, ঘটনা ইফতারের আগ মুহূর্তে হওয়ায় অফিস ছুটি হওয়া সবাই এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, যার ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে তার দোষ নেই। যারা দেখতে গিয়ে পুড়েছে তাদেরই দোষ। আর যে চুলায় রান্না করছিলো সে কথা না শুনে উল্টো বলেছে ‘কোনো সমস্যা হবে না। আমি রান্না করছি না।’ তিনি চুলা নিভিয়ে দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ১১ বছরের নাঈম শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে কাঁতরাচ্ছেন। বাইরে অপেক্ষা করছেন তার মা খুশি বেগম।
নাঈমের মা ঢাকা টাইমসমে বলেন, ‘নতুন গ্যাস সিলিন্ডারের মুখে রেগুলেটর লাগাতে গিয়ে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। অর্থাৎ সিলিন্ডারের মুখে রেগুলেটর লাগাতে পারছিল না বাড়ির মালিক (শফি)। এতে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। ঘরে আগুন লাগার ভয়ে তিনি সিলিন্ডার বাইরে ফেলে দেন। পরে আগুন পেয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়।’
খুশি বেগম বলেন, ‘টিনশেড বাসা একটার সঙ্গে অন্যটা লাগোয়া থাকায় এবং বাসার সামনেই যাতায়াতের রাস্তা হওয়ায় এতোগুলো মানুষ দগ্ধ হয়েছে। তবে যে ব্যক্তির গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আগুন লেগেছে তার ক্ষতি হয়নি। ইফতারের ১০ মিনিট আগে বিস্ফোরণ ঘটে। এখানের বাসিন্দারা অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক।’
তিনি বলেন, ‘অফিসে বসে শুনেছি আগুন লাগার ঘটনা। কে কাকে কোথায় নিয়েছে জানি না। পরে খবর দেখে আমরা এখানে এসেছি।’
গাজীপুরে গ্যাস সিলেন্ডারে দগ্ধ রোগীদের বিষয় বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ৩২ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে ১৬ জনের। আর ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে ১০ জনের বেশি। শিশুও আছে। দগ্ধ সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের ১০ শতাংশের বেশি বার্ন হলেই মেজর হয়ে যায়। সেখানে ৩০ শতাংশের বেশি বার্ন আছে। শিশু ১০ বছরের মধ্যে ৭ জন আর ১১ বছর থেকে ১৮ বছরের আছে ৬ জন। মোট ১৩ জন শিশু।
(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/টিআই/ইএস)

মন্তব্য করুন