ধারাবাহিক তাফসির, পর্ব-১০

বদর যুদ্ধে সফলতার রহস্য

মুফতি আরিফ মাহমদু হাবিবী
| আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ২০:২৯ | প্রকাশিত : ২০ মার্চ ২০২৪, ২০:১২

প্রিয় পাঠক, দশম পারায় সুরা আনফালের কিছু অংশের আলোচনা এসেছ। এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের সাহায্য লাভের উপায়, মুনাফিক কর্তৃক রাসূলের সমালোচনা ও কোরআনের সত্যতা এবং বিভিন্ন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলুন ধারাবাহিকভাবে আমরা আলোচনা প্রবেশ করি....

আগের পর্ব: আল্লাহ তাআলার কাছে যে ইলমের মূল্য নেই

আনফাল নফল এর বহুবচন। গনিমতের সম্পদকে নফল বলা হয়। গনিমত সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে সূরার প্রথম আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। দশম পারার শুরুতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার নিকটাত্মীয় এবং এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরকে দেওয়া হবে। অবশিষ্ট চার অংশ মুজাহিদদের মাঝে বণ্টন করা হবে।

গনিমত বণ্টনের বিধান দেওয়ার পর পুনরায় বদরযুদ্ধের আলোচনা করা হয়েছে। কোরআন আপন বর্ণনাভঙ্গিতে এমনভাবে এ যুদ্ধের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে, শ্রোতারা যেন স্বচক্ষে সে যুদ্ধের অবস্থা পরিলক্ষ করছে। বলা হয়েছে, ‘ওই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা উপত্যকার নিকটবর্তী প্রান্তে ছিলে এবং তারা ছিল দূরবর্তী প্রান্তে, আর তোমাদের নিচ (নিম্নভূমি) দিয়ে কাফেলা যাচ্ছিল।’ (৪২)

বদরযুদ্ধের ব্যাপারে এখানে যা যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার থেকে বিশেষ কিছু বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১. যেন কোনো দলই অপর দলের সংখ্যাধিক্যের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পলায়ন না করে, এজন্য আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের চোখে মুসলমানদের স্বল্প সংখ্যক দেখাচ্ছিলেন আর মুসলমানদের চোখে কাফেরদের অল্প সংখ্যক দেখাচ্ছিলেন। (৪৩-৪৪) আল্লাহর সাহায্য লাভের চারটি উপায়

২. বদরযুদ্ধে মুসলমানদের সাহায্যের কথা আলোচনা করার পর আল্লাহর সাহায্য লাভের চারটি উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। (৪৫-৪৬) যুদ্ধের ময়দানে অবিচল থাকা। আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা। পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থাকা। শত্রুর মোকাবেলা করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করা।

কাফেরদের পরিণতি

৩. বদরযুদ্ধে শয়তান মুশরিকদের সামনে তাদের কর্মকাণ্ড সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে এবং তাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আজ তাদের উপর জয়ী কেউ নেই।

পক্ষান্তরে মুসলমানদের সাহায্যে আকাশ থেকে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়েছে, যারা কাফেরদের চেহারা ও পিঠে আঘাত হেনেছেন। (৪৮-৫১) মুফাসসিরগণ বলেন, আয়াতটি যদিও বদরযুদ্ধের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে; কিন্তু এটি ব্যাপক অর্থবোধক। প্রত্যেক কাফেরকেই মৃত্যুর সময় পেটানো হয়। কুরাইশের লাঞ্ছনার কারণ।

৪. বদরযুদ্ধে কুরাইশদের লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার রীতি হল, যখন কোনো সম্প্রদায় শুকরিয়ার পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা করে, আনুগত্যের পরিবর্তে অবাধ্যতা শুরু করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে স্বীয় আচরণ পরিবর্তন করে দেন। নেয়ামতের পরিবর্তে তাদের শাস্তিতে নিপতিত করেন। রহমতের পরিবর্তে তাদের উপর বালা-মুসিবত চাপিয়ে দেন।

মুসলমানদের থাকতে হবে সদাপ্রস্তুত

৫. বদরযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের আদেশ করা হয়েছে, তারা যেন সবসময় শত্রুর মোকাবেলায় সৈন্যবাহিনী, অস্ত্রশস্ত্র ও দৃঢ় মনোবল-এ তিন দিক থেকে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। বস্তুত বদরযুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে মুসলমানদের পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল না। কেবল আল্লাহ তায়ালার সাহায্যেই অস্ত্রশস্ত্র ও লোকবলের স্বল্পতা এবং দু-দলের মাঝে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও বদরে মুসলমানদের বিজয় হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ের জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। যেন তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রস্তুতি দেখেই শত্রুরা ভয় পেয়ে যায়। তারা মুসলিম-বাহিনীর সামনে দাঁড়ানোরই যেন সাহস না পায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, শক্তি ও ঘোড়ার পালের মাধ্যমে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিয়ে রাখো।' যার মাধ্যমে তোমরা আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে দিতে পারবে। তাদের ছাড়া আরও কিছুলোক রয়েছে, যাদের কথা তোমরা জানো না, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে জানেন। (৬০) এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি যে, পার্থিব শক্তি-সামর্থ্যের উপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে রুহানিশক্তির বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। বরং বাস্তবতা হচ্ছে, শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় লাভের জন্য অন্যসব শক্তি ও উপকরণের চেয়ে রুহানিশক্তিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটাই সেই শক্তি, যা দুর্বলকে শক্তিশালী করে তোলে। ছোটকে বড় দলের সাথে লড়াই করার সাহস যোগায়। শাহাদাতের পথে চলা সহজ করে দেয়। যার ঈমানি শক্তি রয়েছে, তাকে এমন গাম্ভীর্য দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে বড় বড় পালোয়ানেরও পা প্রকম্পিত হয়ে যায়। কিন্তু আজ আমরা মুসলমানরা চিন্তাচেতনা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও রুহানি উপকরণ সর্বদিক থেকে পিছিয়ে পড়েছি।

সন্ধির প্রস্তাব ফিরাবে না

মুসলমানদের সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার হুকুম দেওয়ার পাশাপাশি এই হুকুমও দেওয়া হয়েছে যে, তারা (কাফেররা) যদি সন্ধির প্রতি ঝোঁকে তা হলে তোমরাও তার প্রতি ঝুঁকো। (৬১)

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, সন্ধির মধ্যে যদি মুসলমানদের স্বার্থ ও কল্যাণ থাকে তা হলে সন্ধি করা উচিত। যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং জিহাদের উদ্দেশ্য এই নয় যে, সব সময়ই যুদ্ধ করতে হবে, সন্ধি করা যাবে না। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সন্ধির পন্থা অবলম্বন করেছেন।

রাসূলের সমালোচনা ও কোরআনের সত্যতা

৭. বদরযুদ্ধে মুসলমানদের হাতে সত্তরজন মুশরিক বন্দি হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করেন। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ কিছু সাহাবি তাদের হত্যা করার পরামর্শ দেন। পক্ষান্তরে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ কিছু সাহাবি পরামর্শ দিয়েছিলেন মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়ার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মতটি পছন্দ করেন। মুক্তিপণ নিয়ে তাদের মুক্ত করে দেন।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তিরস্কার করে বলা হয়, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা না হয়ে থাকত তা হলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ এ কারণে তোমাদেরকে কঠিন আজাব পাকড়াও করত। (৬৮)

এ সকল আয়াত, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সতর্ক করা হয়েছে, কোরআন হক হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কোরআন যদি আল্লাহর কালাম না হতো তা হলে এ ধরনের আয়াত কখনোই কোরআনে স্থান পেতো না। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মুশরিকদের থেকে গৃহীত মুক্তিপণের কারণে তিরস্কার করা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য তা খাওয়া নিষেধ করেননি; বরং তাকে হালাল এবং পবিত্র ঘোষণা করেছেন। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করে, জিহাদ করে, একে অন্যকে সাহায্য করে, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়, এই সুরার শেষাংশে তাদেরকে বন্ধু বলা হয়েছে।

সূরাটির সূচনা হয়েছিল জিহাদ ও গনিমতের আলোচনার দ্বারা আর শেষ হয়েছে সাহায্য ও হিজরতের আলোচনা দ্বারা, যেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই সুরার পুরোটাই জিহাদ সম্পর্কে।

সূরা তাওবা

এটি মাদানি সুরা। আয়াত সংখ্যা: ১২৯। রুকু সংখ্যা: ১৬

প্রেক্ষাপট নবম হিজরিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বের হয়েছিলেন তখন সুরাটি অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধকে গাজওয়ারেয় তাবুক (তাবুকের যুদ্ধ)-ও বলা হয়।

তখন ভীষণ গরম ছিল। সফর ছিল অনেক দীর্ঘ। মদিনাবাসীদের জীবনধারণের প্রধান মাধ্যম-ফলফলাদিও তখন পাকা শুরু হয়েছিল। শত্রুবাহিনীও ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী, তৎকালীন বিশ্বে যারা নিজেদেরকে পরাশক্তি মনে করত। মোটকথা, এ যুদ্ধ মুমিনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। এটি তাদের ইখলাস ও সত্যবাদিতার পরীক্ষা ছিল। এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুমিন ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়।

সূরা তাওবার মৌলিক উদ্দেশ্য

সুরা তাওবার মৌলিক উদ্দেশ্য দুটি।

১. মুশরিক ও আহলে কিতাবদের সাথে জিহাদের বিধান বর্ণনা করা। ২. তাবুকযুদ্ধের মাধ্যমে মুমিন ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্যরেখা টেনে দেওয়া। মুসলমান ও মুশরিকদের মাঝে যেসব চুক্তি হয়েছিল শুরুতে সেসব চুক্তি থেকে দায়মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। তাদের জন্য সর্বোচ্চ চার মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বাইতুল্লাহর হজ পালন থেকে মুশরিকদের নিষেধ করে দেওয়া হয়। কেননা তারা বহুবার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। ইসলামের প্রসার রুখে দেওয়ার জন্য ইহুদিদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে। আহলে কিতাবদের সাথে যুদ্ধের অনুমতি

মুশরিকদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার পর আহলে কিতাবদের সঙ্গে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা, চুক্তিভঙ্গ, কপটতা প্রভৃতি তাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইহুদিগোষ্ঠী বনু কুরাইজা, বনু নাজির, বনু কইনকা-কেউ-ই ইসলামের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ হাতছাড়া করোনি। প্রায় বিশটি আয়াতে তাদের অন্তরের ঘৃণা-বিদ্বেষের মুখোশ খুলে দেওয়া হয়েছে।

মুসলমানদের বলা হয়েছে, আহলে কিতাবের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনে না, পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ ও তার রাসূল যে জিনিস হারাম সাব্যস্ত করেছেন, তা হারাম মনে করে না, সত্যধর্ম কবুল করে না, লাঞ্ছিত অবস্থায় জিজিয়া প্রদান করা পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। (২৯) মুনাফিকদের আলামত

এ সূরায় মুনাফিকদের আলামত, তাদের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সর্বসম্মুখে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করা হয়েছে, যা এ সূরার প্রধান উদেশ্যও বটে। এ কারণে এ সূরাকে (سورة الفاضحة) অপদস্থকারী সূরা বলা হয়। সুরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তারা মুখে মুখে ইসলামের কথা বলে নিজেদের বাতেন (অন্তরের ভেদ) ঢেকে রাখতো। কিন্তু সূরাটি তাদের বাতেন এমনভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে যে, সকলেই জেনে গেছে কে মুনাফিক আর কে প্রকৃত মুমিন? তাবুকযুদ্ধের ফলে মুনাফিকদের দুর্বলতা ও দোষত্রুটি প্রকাশ পেয়ে যায়।

জিহাদ এমন এক ইবাদত, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যা সম্পন্ন করতে হয়। উপরন্তু তাবুকযুদ্ধ ছিলো তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে, তাও প্রচণ্ড গরম ও দারিদ্র্যের সময়। তাই যুদ্ধকালে মুনাফিকদের কিছু কিছু কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সূরা তাওবার কিছু আয়াতের আলোকে তাদের কর্মকাণ্ডের উপর একবার নজর বুলানোর চেষ্টা করা হলো। ১. আল্লাহ তায়ালা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মুনাফিকরা কসম করে বলবে, যদি আমাদের শক্তি-সামর্থ্য থাকতো তা হলে আমরা অবশ্যই আপনার সাথে তাবুক যুদ্ধে বের হতাম। (৪২) আর বাস্তবে এমনটাই হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাবুক থেকে ফিরে আসেন মুনাফিকরা তখন কসম খেয়ে মিথ্যা ওজর পেশ করেছে।

২. কয়েকজন মুখলিস মুসলমান ব্যতীত সকলেই তৎক্ষণাৎ তাবুকযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। পক্ষান্তরে মুনাফিকরা বিভিন্ন অজুহাত ও বাহানা দেখিয়ে মদিনায় থাকার অনুমতি নিয়ে নেয়। ৩. আল্লাহ বলেন, মুনাফিকদের জিহাদে বের না হওয়াই উত্তম। যদি তারা জিহাদে শরিক হতো তবে তারা মুসলমানদের মাঝে বিভিন্ন ফেতনা সৃষ্টি করত। (৪৭)

৪. তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন ছিল, যারা হাস্যকর ওজর পেশ করে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার প্রয়াস চালিয়েছিল। যেমন, জাআদ বিন কায়েস বলেছিল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি বড় দুর্বল মানুষ। রোমীয় নারীরা ফর্সা চেহারার অধিকারী। আমার আশঙ্কা হয় যদি আমি জিহাদে যাই তা হলে তাদের দেখে ফেতনায় পড়ে যাবো।’ (৪৯

৫. তাদের অন্তর মুসলমানদের প্রতি ঘণা-বিদ্বেষ ও হিংসায় ভরপুর। (৫০) মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হলে কিংবা গনিমতের সম্পদ হস্তগত হলে তারা মালেশান হয়ে যায়। আর যদি তার উল্টো পরিস্থিতি হয় বা মুসলমানরা কোনো বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হয় তা হলে তারা অত্যন্ত খুশি হয়। ৬. তারা শপথ করে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে যে, হে মুসলমানগণ, আমরা তো তোমাদেরই দলভুক্ত; অথচ তারা মুসলমান নয়। (৫৬) ৭. তাদের দৃষ্টি সর্বদা অর্থ-সম্পদের প্রতি নিবদ্ধ থাকে। যদি তারা তা লাভ করে তা হলে খুশি হয় আর যদি বঞ্চিত হয় তা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরও অপবাদ আরোপ করতে তারা পিছপা হয় না। ৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সবার কথা শুনতেন এ কারণে তারা তার ব্যাপারে বলত যে, তিনি কানসর্বস্ব। (৬১)

১. নবীজির জীবদ্দশায় তারা আশঙ্কা করতো, না জানি কখন এমন সুরা অবতীর্ণ হয়ে যায়, যাতে তাদের গোমর ফাঁস করে দেওয়া হয়। (৬৪) ১০. তাদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা একে অপরকে খারাপ কাজের নির্দেশ দেয়। ভালো কাজ থেকে বিরত রাখে। কৃপণতা করে। (৬৭) এই মুনাফিকরা কাজকর্ম ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অতীতের কাফেরদের মতো। (৬৯) ১১. তাদের অন্তর আল্লাহ তায়ালার মহব্বত, তার কৃতজ্ঞতা ও বড়ত্ব-মহত্ত্ব থেকে সম্পূর্ণ খালি। বলাবাহুল্য, যার অন্তরে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মহত্ত্ব থাকবে না, তার জন্য পাপাচার, অনাচার ও অবাধ্যতা করা অনেক সহজ হয়ে যায়। মুনাফিকদের কাফেরদের সাথে তুলনা করার পর নুহ, আদ, সামুদ, লুত ও ইবরাহিম আ. এর ম্প্রদায় এবং মাদয়ানবাসীদের আলোচনা করা হয়েছে। দশম পারার শেষ পর্যন্ত মুনাফিকদের আলোচনা করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা এমনও বলেছেন যে, ‘হে আমার নবী, যদি আপনি তাদের জন্য সত্তরবারও ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তবু আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না।’ (৮০) তিনি এমনও বলেছেন যে, ‘যদি তাদের কারও মৃত্যু হয়ে যায়, আপনি তার জানাজার নামাজও পড়াবেন না।’ (৮৪)

মুনাফিকদের পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু মুখলিস মুসলমানের আলোচনাও করেছেন, যাদের কেউ কেউ বার্ধক্য, অসুস্থতা, উপকরণহীনতার (যুদ্ধসামগ্রী না থাকার) কারণে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। জিহাদের প্রতি তাদের এতটাই আগ্রহ ছিল যে, জিহাদে অংশগ্রহণ করতে না পারায় তাদের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘এতে তাদের কোনো গুনাহ হবে না।’ (৯১, ৯২)

চলবে ইনশাআল্লাহ....

লেখক: আলেম ও ওয়ায়েজ; খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মিরপুর-০১।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :