ধারাবাহিক তাফসির, পর্ব-০৯

আল্লাহ তাআলার কাছে যে ইলমের মূল্য নেই

​​​​​​​মুফতি আরিফ মাহমুদ হাবিবী
| আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ২০:২৮ | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২১:১৯

প্রিয় পাঠক, রহমতের সময়গুলো দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত দয়াময় রবের অশেষ দয়ায় ৮ম পারার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। আজ আমরা ৯ম পারা থেকে জানবো ইনশাআল্লাহ...

আগের পর্ব: আদম (আ.)-কে আল্লাহ যে দোয়া শিখিয়েছিলেন

অষ্টম পারার শেষে হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালামের ঘটনার বর্ণনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার অবশিষ্টাংশ নবম পারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।

হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম যখন তার সম্প্রদায়কে ফেতনা-ফাসাদ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছিলেন তখন তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সরদাররা তাকে ধমক দিয়ে বলেছিল, ‘শোয়াইব, তুমি আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে নইলে আমরা তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে এই জনপদ থেকে বের করে দেব।’ তিনি তাদের বলেন, এটা কখনোই হতে পারে না। তোমরা যা খুশি করতে পারো। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখি।

মিথ্যাবাদীদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার রীতি

বিভিন্ন নবীর ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই মিথ্যাবাদীদের ব্যাপারে আমার রীতি হল, যাতে তারা আমার নিকট ফিরে আসে এজন্য আমি তাদেরকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি। তাদের বিভিন্ন কষ্ট-মুসিবতে নিপতিত করি। যদি তারা এই প্রথম পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, আমার দিকে প্রত্যাবর্তন না করে, তা হলে দ্বিতীয় পরীক্ষা হিসাবে তাদের কষ্ট-মুসিবতের পরিবর্তে ধনসম্পদের প্রবৃদ্ধি, সুন্দর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দান করি। কিন্তু যখন নরম- গরম-কোনো পদ্ধতিতেই তাদের বোধোদয় না ঘটে তখন আমি হঠাৎ তাদেরকে আজাবের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করি।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সান্ত্বনা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন স্বীয় কওমের অস্বীকৃতি ও অবাধ্যতার কারণে বিরক্ত ও চিন্তিত না হন— সূরার শেষে এ ব্যাপারে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এসব হচ্ছে পূর্ববর্তীদের কিছু অবস্থা, যা আমি আপনাকে শোনালাম। তাদের নিকট রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারা ঈমান আনেনি; বরং পূর্ববর্তীরা যেমন মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল (তারাও তেমনই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে) এভাবেই আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের অন্তরে মোহর মেরে দেন।’

মুসা আলাইহিস সালাম

সূরা আরাফে যে ছয় নবীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা অন্যান্য জাতির তুলনায় তার জাতির মূর্খতা ও অজ্ঞতা অনেক বেশি ছিল। তার জাতির মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিল, যে প্রভুত্বের দাবি করেছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে যে মুজিজা প্রদান করা হয়েছিল তা ছিলো অন্যান্য নবীর মুজিজার তুলনায় অধিক সুস্পষ্ট। বিশেষত লাঠি ও উজ্জ্বল হাত-এই দুটি এমন মুজিজা ছিলো, একমাত্র অন্ধ হৃদয় ব্যক্তিই হঠকারিতাবশত তা অস্বীকার করতে পারে।

ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় বনি ইসরাইলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছিল। নিত্যনতুন পদ্ধতিতে তাদের শাস্তি দিত। মিসরে যখন চরম দুর্ভিক্ষ চলছিল বনি ইসরাইল তখন মিসরে আসে। এরপর হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মাধ্যমে তারা সেখানে বসতি গড়ে তোলে। প্রতিনিয়ত তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটতে থাকেন এমনকি একসময় তারা মিসরের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এরপর মিসরের বিভিন্ন রাজা-বাদশাহ তাদেরকে জুলুম-নির্যাতনের টার্গেট বানায়।

হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাইলকে এই লাঞ্ছনাকর গোলামির জীবন থেকে মুক্তি দেন। তাদের নিজেদের পবিত্র ভূখণ্ডে (বাইতুল মাকদিসে) নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি ফেরাউনকে বলেন, বনি ইসরাইলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও। মুসা আলাইহিস সালাম যখন ফেরাউনকে বলেন, আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল তখন ফেরাউন তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুরু করে। সে বলে, আচ্ছা তুমি যদি তোমার দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাক তা হলে কোনো মুজিজা দেখাও।

তখন তিনি মাটিতে লাঠি নিক্ষেপ করেন। পড়ামাত্র তা এক ভয়ঙ্কর অজগর সাপের রূপ নেয়। এরপর তিনি স্বীয় হাত বের করেন। তা থেকে এমন উজ্জ্বল আলো বের হয়, যার মাধ্যমে আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থান আলোকিত হয়ে যায়।

তাবারি, ইবনে কাসিরসহ বিভিন্ন তাফসিরে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বরাতে বলা হয়েছে, ফেরাউন লাঠিকে সাপ হতে দেখে চিৎকার করে সিংহাসন থেকে নেমে পালাতে শুরু করে। এরপর তার আশঙ্কা হয়, তার সম্প্রদায় মুসা আলাইহিস সালামের ওপর ঈমান আনবে। তাই সে নিজের উপদেষ্টাদের বলে, মুসা (আ.) একজন জাদুকর। এই দেশে সে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। তাই তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও আমি এখন কী করতে পারি? তারা তাকে বলল, আমাদের শহরে বড় বড় জাদুকর আছে। তাদের সবাইকে একত্র করা হোক। যেন এক জনসমাবেশে তারা মুসাকে (আলাইহিস সালাম) পরাজিত করে দিতে পারে। পরে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এক বিশেষ দিনে মিসরের হাজার হাজার লোক একত্র হয়। জাদুকরদের জাদুর উত্তরে মুসা আলাইহিস সালাম মুজিজা প্রদর্শন করেন। মিসরের জাদুকররা তখন অপ্রত্যাশিতভাবে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং ঈমান গ্রহণ করে। তাদের ঈমানগ্রহণের ঘটনায় ফেরাউন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। তাদেরকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। কিন্তু সামান্য সময়ে এ নওমুসলিমদের অন্তরে এমন গভীর ঈমান প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল যে, ফেরাউনের এসব হুমকি-ধমকিতে তাদের পা সামান্য কম্পিত হয়নি।

মুসা আলাইহিস সালামের দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় ধারাবাহিকভাবে অহংকার, অবাধ্যতা, অস্বীকৃতি ও জুলুম-নির্যাতন করেই যাচ্ছিল। একসময় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের আজাব মুসিবতে আক্রান্ত করা শুরু করেন। তাদের উপর এক তুফান পাঠান, যার মাধ্যমে তাদের সকল শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যায়। পঙ্গপাল আসে, যারা গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়ে ফেলত। উকুনের এমন প্রকোপ শুরু হয় যে, এসব উকুন তাদের জমাকৃত শষ্য ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলে। ব্যাঙের উৎপাত শুরু হয়। কথা বলার জন্য মুখ খোলামাত্র তা তাদের মুখে লাফিয়ে আসতে থাকে। তাদের নদী-নালা কূপ ও মশকের পানি রক্তে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

যখনই কোনো আজব আসতো তখন তারা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট আহাজারি করে বলত, আল্লাহ যদি এই আজাব থেকে মুক্তি দেন তা হলে আমরা ঈমান আনব। কিন্তু যখন আজাব উঠিয়ে নেওয়া হতো তখন তারা পূর্বের মতো আচরণ শুরু করে দিতো।

এরপর আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের আজাব থেকে মুক্তি দেন। মুসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে রাতের অন্ধকারে মিসর থেকে বের করে আনেন। স্বাধীনতা লাভের পর তাদের জীবনযাপনের একটি নীতিমালার প্রয়োজন হয়। আল্লাহ তায়ালা তখন মুসা আলাইহিস সালামকে তুর পাহাড়ে ডেকে নেন। সেখানে তিনি চল্লিশদিন অবস্থান করেন। এরপর আল্লাহ তায়ালার সাথে তার কথা বলার সৌভাগ্য হয়। জীবনবিধান হিসেবে তাদেরকে তাওরাত দেওয়া হয়।

মুসা আলাইহিস সালামের অনুপস্থিতিতে সামেরির ফুসলানোর কারণে বনি ইসরাইল বাছুরের পূজা শুরু করে। ফিরে এসে এই শিরকি কর্মকাণ্ডে মুসা আলাইহিস সালাম ভীষণ দুঃখিত ও ব্যথিত হন।

বনি ইসরাইল এক অদ্ভুত সম্প্রদায়। কদমে কদমে তারা পিছলে যায়। ওয়াদা করে আর তা ভঙ্গ করে। খোদায়ী বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাতে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও বিকৃতি সাধন করে।

তাদেরকে হুকুম দেওয়া হয়েছিল যেন মাথানত করে তারা বাইতুল মাকদিসে প্রবেশ করে। কিন্তু তারা মাথা উঁচু করে নিতম্ব ঘষতে ঘষতে শহরে প্রবেশ করে। তাদেরকে বলা হয়েছিল শনিবার যেন তারা আল্লাহর ইবাদত ছাড়া কিছু না করে। কিন্তু তারা বাহানা করে সেদিন মাছ শিকার করতে থাকে। মাথার উপর তুর পাহাড় উঠিয়ে তাদের থেকে তাওরাতের উপর আমল করার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ওয়াদাপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এ সুরায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

বনি ইসরাইল থেকে অঙ্গীকার নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখপ্রসঙ্গে বারোতম রুকুতে বলা হয়েছে, রুহের জগতে সমস্ত মানুষ থেকেও আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালনের অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সেই অঙ্গীকারের কথা ভুলে গেছে।

এরপর সুরার শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বালআম বিন বাউরাকে বহু ইলম ও জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ হতভাগা কিছু অর্থকড়ির বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিয়েছে। (১৭৫-১৭৮)

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা

এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, আমল ও উত্তম চরিত্রবিহীন ইলম আল্লাত তায়ালার নিকট মূল্যহীন। এই কারণে এক আরব কবি বলেন, তাকওয়াবিহীন ইলমের যদি মূল্য থাকতো, তা হলে ইবলিস সবচেয়ে সম্মানিত হতো।

২. কাফেররা চতুষ্পদ জন্তুর মতো। কেননা তারা নিজেদের দিল-দেমাগ, চক্ষু, কান প্রভৃতি দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। যার কারণে তারা ঈমান থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। (১৭৯)

যারা দীনের জন্য আপন বুদ্ধি-বিবেক খাটায় না, তারা পাগল। যারা আল্লাহর আয়াত শ্রবণ করে না, তারা বধির। যারা শিক্ষার জন্য আয়াতসমূহের প্রতি নজর দেয় না, তারা অন্ধ।

৩. দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। একসময় তাদেরকে হঠাৎ পাকড়াও করেন। (১৮২)

অবকাশ দেওয়ার কারণে মানুষ কখনো কখনো ধোঁকায় পড়ে যায়। অধিক পরিমাণে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়।

৪. কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়কালের ব্যাপারে কারও কোনো জ্ঞান নেই। একমাত্র আল্লাহর কাছেই এর জ্ঞান রয়েছে। (১৮৭)

৫. আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনি ক্ষমা করুন। উত্তম কাজের হুকুম দিন। মূর্খদের থেকে দূরে থাকুন।

ইসলাম যে উত্তম চরিত্রের প্রতি আহ্বান করে থাকে, এই সংক্ষিপ্ত আয়াতে তা চলে এসেছে। সেসব মন্দ আচরণ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশও চলে এসেছে, একজন নেককার মানুষের জন্য যা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

কোরআনের বড়ত্ব ও মহত্ত্বের বর্ণনার মাধ্যমে সুরা আরাফের সূচনা হয়েছে। আর এ মহত্ত্ব ও বড়ত্বের বর্ণনার মাধ্যমেই তার সমাপ্তি টানা হয়েছে। বলা হয়েছে, যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করো, নিশ্চুপ থাকো, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো।

যখন কোনো ব্যক্তি কোরআনের বড়ত্বের প্রতি লক্ষ রেখে মনোযোগের সাথে তা শোনে, তার আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে তখন এতে তার অন্তর প্রভাবিত হয়। শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ে।

সুরা আনফাল

এটি মাদানি সুরা। আয়াত সংখ্যা: ৭৫। রুকু সংখ্যা: ১০

নামকরণ

যেহেতু এ সুরাতে আনফাল তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে, তাই এর নাম আনফাল। সুরাটি দ্বিতীয় হিজরি সনে মদিনায় নাজিল হয়েছে।

জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ

অন্যান্য মাদানি সুরার ন্যায় এতে শরয়ি বিধিবিধান বর্ণনার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সূরাটি ইসলামি ইতিহাসের সকল যুদ্ধের ভিত্তি বদরযুদ্ধের পর অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধে চর্ম চোখে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য পরিলক্ষিত হয়েছে। একটি ছোট্ট বাহিনী বহুগুণ বড় বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেছে।

গনিমতের অর্থ-সম্পদের বিধান বর্ণনার মাধ্যমে সুরাটির সূচনা হয়েছে। কেননা তা বণ্টনের ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা দিয়েছিল।

প্রকৃত মুমিনের পাঁচটি গুণ

এরপর প্রকৃত মুমিনের পাঁচটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে-

১. আল্লাহর স্মরণ হলে তাদের হৃদয় ভীত হওয়া।

২. কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পাওয়া।

৩. দয়াময় আল্লাহর উপর ভরসা করা।

৪. নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া।

৫. আল্লাহর দেওয়া রিজিক হতে তার পথে খরচ করা।

বদরযুদ্ধের বিস্তারিত আলোচনা সামনের আয়াতগুলোতে বদরযুদ্ধের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সূরা আনফালের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

সুরা আনফালের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা এতে মুমিনদের ছয়বার بانها الذين آمنوا )হে মুমিনগণ)-এর মতো ভালোবাসামিশ্রিত বাক্য স্বারা সম্বোধন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এমন মূলনীতি বলে দিয়েছেন, যার উপর আমল করে জিহাদের ময়দানে তারা সফল হতে পারে।

আল্লাহ তায়ালার সম্বোধন

১৫নং আয়াতে প্রথম সম্বোধন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কাফেরদের সাথে লড়াই করবে তখন তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না।’

২০নং আয়াতে দ্বিতীয়বার সম্বোধন করা হয়, যাতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুমের অনুসরণ করবে, তা শুনে তোমরা বিমুখ হবে না।’

২৪নং আয়াতে তৃতীয়বার সম্বোধন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম মান্য করো, যখন তোমাদেরকে এমন বিষয়ের প্রতি আহ্বান করেন, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে।’

২৭নং আয়াতে চতুর্থবার আহ্বান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে খেয়ানত কোরো না। জেনে-বুঝে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না।’

২৯নং আয়াতে পঞ্চমবার সম্বোধন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, প্রদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তা হলে তিনি তোমাদেরকে ফুরকান (সত্য ও মাখ্যার মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি)' প্রদান করবেন। তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন। তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল।’

৪৬নং আয়াতে ষষ্ঠবার সম্বোধন করা হয়েছে। এ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন কোনো বাহিনীর সাথে তোমরা লড়াই করবে, তখন তোমরা অবিচল থাকবে। আল্লাহ তায়ালাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে চলো। পরস্পর ঝগড়া- বিবাদ করো না। অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে। তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’

হায় আফসোস!

এসব আয়াতে মুসলমানদের যেসব বিষয় পালন করার ও যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করলে মুসলমানগণ অবশ্যই দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারবে। এমন জাতি কখনো পরাজিত হতে পারে না, যারা শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকে, আল্লাহর বিধান মেনে ও তার রাসূলের আনুগত্য করে চলে, যে কাজে অন্তরের জীবন এবং সফলতা ও সম্মানের রহস্য নিহিত রয়েছে, সেকাজে তারা লাব্বাইক বলে, ইহকালীন ও পরকালীন কোনো বিষয়ে যারা খেয়ানত করে না।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তারা খোদাভীতির গুণ অর্জন করবে। আর শেষকথা হলো গোলাবারুদের মুখেও তারা আল্লাহকে স্মরণ করবে। তাদের বুলি হবে এক ও অভিন্ন। তাদের মধ্যে পূর্ণ ঐক্য থাকবে। তারা ব্যক্তিগত ও দলীয় কোন্দলে জড়াবে না।

একটু চিন্তা করুন, যে জামাতের মধ্যে এসব গুণ পাওয়া যাবে, তারা কি কখনো পরাজিত হতে পারে? যদি পাহাড়ও তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবু তারা জয়ী হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ...

লেখক: আলেম ও ওয়ায়েজ; খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মিরপুর-০১।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এসআইএস/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :