মানুষ তৈরীর রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টাই হতে পারে ‘সোনার বাংলা দর্শনের’ অনন্য প্রতিপাদ্য

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
 | প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৮:২০

মহান সৃষ্টিকর্তার মহাজাগতিক সৃষ্টির অন্যতম বিস্ময়কর সৃষ্টি নিঃসন্দেহে মানবজাতি। প্রাণাত্না সম্পন্ন জীবজগতের সৃষ্টিরসেরা জীব হিসেবে মানুষ পরিচিত। প্রাণিজগতের সকল প্রাণীদের মধ্যে শিক্ষাদিক্ষা জ্ঞান-গরিমা বিবেকবোধ বিশেষত উন্নত ভোকাল কর্ডের বিশেষত্বে মানুষই প্রাণিকুলের শিরোমণি। আর এসব কারণেই অন্যান্য প্রাণীগুলির প্রজনন ব্যবস্থায় নবজাতকের জন্ম হলে অনুকূল পরিবেশ পরিস্থিতি ও সময়ের পরিক্রমায় ওই নির্দিষ্ট শ্রেণীর পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে পরিণত হতে পারে ব্যতিক্রম কেবলমাত্র মানুষের ক্ষেত্রে। গর্ভজাত মানব সন্তান শিশু অবস্থায় অন্যান্য যেকোনো প্রাণীকুলের নবজাতকের চেয়ে অনেক বেশি অসহায় আবার পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় শুধুমাত্র সময়ের পরিক্রমায় বড় হলেই পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়া যায়না। শিশু-কিশোর যৌবন ওপরিপক্ক পর্যায় অতিক্রম করে পৌঢ় অধ্যায়ের শেষে জীবন চক্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষাদিক্ষা জ্ঞান-গরিমা আচার-ব্যবহার, কৃষ্টি কালচার মূল্যবোধ ধর্ম-কর্ম দেশপ্রেম সহ হাজারো অনুষঙ্গকে ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে উন্নত প্রসেসিং সিস্টেম এর মধ্য দিয়ে ফিল্টার করে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, কল্যাণ-অকল্যাণ, উপকারী কিংবা ক্ষতিকর এ বিষয়গুলো সঠিক উপলব্ধি করতঃ ব্যক্তিগত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কিংবা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার সংবেদনশীল যথাযথ ব্যবহারের সক্ষমতা সম্পন্ন মানুষকেই প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির সেরা অভিধার প্রকৃত মানুষ বলা যেতে পারে।

অর্থাৎ মানব সন্তান হিসেবে জন্ম নিলেও সকলকেই প্রকৃতপক্ষে মানুষ বলার সুযোগ নেই। স্বশিক্ষা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কল্যাণ-অকল্যাণের পার্থক্য শিখে বাস্তব জীবনে সংবেদনশীল ভাবে দৃশ্যমান প্রয়োগ করার সামর্থ সম্পন্ন মানুষ যখন মানবসম্পদে পরিণত হয় তখন তাকে আমরা প্রকৃত মানুষ বলতে পারি এবং সৃষ্টিসেরা অভিধার মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। আবহমানকাল থেকে চর্চিত হয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিবেচনা করে কিছু কিছু কর্মকান্ডকে মনুষ্য সাধারণ ভুলভ্রান্তি হিসেবে বিবেচনার বাইরে, জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষাদিক্ষা অর্জন করা সত্ত্বেও যারা নেতিবাচক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অন্যান্য মানুষসহ জীবকুল প্রাণীকুল এমনকি মহাবিশ্বের অকল্যাণে তাদের অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ পৌণপুণিক অব্যাহত রেখে জীবনের পথ পরিক্রমা হেঁটে চলেছেন তাদেরকে কোন অর্থেই প্রকৃত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার বাস্তবসম্মত কোন সুযোগ নেই। অন্তত সৃষ্টিসেরা জীবের কাতারে স্থান দেওয়ার কোন অবকাশ নেই। মানুষের কাছে প্রশিক্ষিত হয়ে কিছু ইতর প্রাণী মানুষের উপকারে আসলেও তাদের যেমন মানুষ বলার কোন সুযোগ নেই তেমনি করে মানুষের মধ্যে পশুত্বের আচরণ পুণঃ পুণঃ পরিলক্ষিত হলে তাকে দেহধারী মানুষরূপী পশু আখ্যাত করাই সমীচীন।

বেড়ে ওঠার বিভিন্ন স্তরে নানা রকম জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে বুদ্ধিমত্তা ও সংবেদনশীলতার মাধ্যমে তা উতরিয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে সকল দেশ, জাতিরাষ্ট্র যত বেশি সফলকাম হতে পেরেছে সে সকল দেশে অপরাধপ্রবণতা কমতে কমতে শূন্যের কোঠামুখী হয়েছে। তারা এই অস্থির বিশ্বেও প্রকৃত মানুষ হিসেবে স্বর্গীয় জীবন যাপন করছে। সৃষ্টির সেরা মানুষের রোল মডেল হিসেবে তারা অনুসরণীয়।

আমরা সুইজারল্যান্ডের কথা বলতে পারি। বাঙালি জাতির মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের সোনার বাংলা কে সুইজারল্যান্ড বানাতে চেয়েছিলেন। বাঙালির জীবনে সে স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে বৈকি।

১৯৭৫ ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে জাতির পিতার জীবন অবসান উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার উন্মত্ত নষ্ট মনুষ্যত্বের কালো অধ্যায়কেই রাজনৈতিক চর্চার উত্তম পথ হিসেবে বেছে নেন। বঙ্গবন্ধুর নাম গন্ধ মুছে ফেলার চক্রান্তের অংশ হিসেবে জঘন্যতম হত্যাকান্ড শুধু সংগঠিত করেই ক্ষান্ত হননি তদুপরি তাকে যেন আপামর বাংলার মানুষ খুব সহজে কাছে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না পারে সেজন্য রাজধানীর বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই খুনি চক্রের নেতারা। শুধু কি তাই কোন প্রেক্ষাপটেই যেন আর বঙ্গবন্ধুকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজন না পড়ে সে লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে আরো একটি ইতিহাসের জঘন্যতম কালো অধ্যায়ের জন্ম দেন। মনুষ্যত্বের নষ্টামিতে যে বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে চোখে পড়ে তা হল জাতির পিতাকে পিতা বলতে না দিয়ে বাংলার মানুষকে বিকৃত ইতিহাস চাপিয়ে দিয়ে যেন পড়শীকে পিতা বলতে বাধ্য করার একটি অপচেষ্টা চালিয়েছেন দীর্ঘকাল। কেবল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে পবিত্র সংবিধানকে কলঙ্কিত করেই সন্তুষ্ঠ থাকেননি সেই সাথে সংবিধানের অন্যতম সৌন্দর্য অসাম্প্রদায়িকতাকে পরিহার করে বিপরীতমুখী সাম্প্রদায়িক পথে চলতে বাধ্য করলেন এ বাঙালি জাতিকে। ছাত্রজনতা এবং মৌলবাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করলেন যেন চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলা সংস্কৃতি চর্চার চিন্তা করাটা বড় রকমের কোন পাপ কর্ম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দিয়ে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে শক্তিশালী করতে মনুষ্যত্বের চরিত্র হননে হেনো কোন কাজ নাই যা তারা করেনি। একটি লম্বা সময় অতিক্রম করতে গিয়ে সময়ে-অসময়ে সুস্বভাবের অভাবে পরিকল্পনা ষড়যন্ত্রের ডালপালায় কয়েকটি প্রজন্ম মন্দের অনুসারী হয়ে সংখ্যাতত্ত্বে মন্দ মানুষের সংখ্যাই বেড়ে গেল এই দেশে। রুদ্ধ হতে থাকলো প্রকৃত মানুষ হওয়ার সকল পথ আর উন্মুক্ত হতে থাকলো মনুষ্যত্ব বিসর্জনের সকল দরজা।

এসকল রাষ্ট্রনায়করা মানুষকে প্রকৃত মনুষত্বের রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে প্রেষণা হিসেবে উপহার দিতে থাকলেন লুণ্ঠিত টাকা পয়সার কিছু ভাগবাটোয়ারা আর নির্মাণকাজে ব্যয়িত টাকার তথাকথিত উন্নয়ন। অপকর্মের পুরস্কার অন্যায় অর্থ অর্জনের দাপুটে প্রশান্তি নিয়েই বেড়ে উঠলো কয়েক প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এ দেশের সন্তানেরা। পূর্ব থেকে চলে আসা মৌলবাদের একটি বড় ধারা তাদের সাথে রাজনৈতিক সখ্যতা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ সম্মানটুকুতে লজ্জা অপমানের বিষাক্ত পেরেক ঠুকে দিলেন। চিহ্নিত রাজাকার-আলবদরদের কে মন্ত্রী বানিয়ে সরকারি গাড়িতে উড়াতে শুরু করলেন লাল-সবুজের পতাকা। সবাই যার যার মতো মতাদর্শ নিয়ে এদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন ঠিকই কিন্তু প্রকৃত মানুষ হবার জন্য কাউকে দেখিনি সৃষ্টিসেরা অভিধার মানুষ তৈরি করার কোন বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নিতে।

দুর্ভাগ্যের দুষ্টচক্র অতিক্রম করে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে জনমুখী করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়ে নব্বইয়ের গণআন্দোলনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। অনেক বেশি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বৈরশাসনকে উৎখাত করা গেলেও আন্দোলনের ফসল ঘরে আনতে সক্ষম হননি শুরুতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষগুলোর দীর্ঘদিনের নীরবতা, বিপরীতে প্রায় কুড়ি বছরের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল তাতে নির্বাচনী ফলাফলে শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রধান হিসেবে বন্ধুর রাজনৈতিক পথ পরিক্রমা পুণনির্মাণ করতে থাকেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতি ও ব্যক্তি শেখ হাসিনার মনে যে গভীর ক্ষত ছিল সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর বিস্তারিত স্বপ্নের ক্যানভাসে যে সকল পরিকল্পনা চিত্রিত হয়েছিল সব কিছুকে মিলিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সহ নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন তা সত্য। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণে তা খুব বেশি যথেষ্ট ছিলনা। পথের কাঁটা মুক্ত করার লক্ষ্যে অপরাধীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করবার ক্ষেত্র তৈরি করতে, ইতিহাসের কলঙ্কখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বাতিল করায় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র আবার উঠে পড়ে লাগল। এমনকি সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রয়োগ করে পাহাড়িদের মধ্যে বাঙ্গালীদের বসবাস করার ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি যখন পাহাড়ি-বাঙালি মধ্যে যুদ্ধাংদেহী অবস্থা বিরাজ করছিল, সেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এবং তার পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন সুবিধা প্রদানে নজিরবিহীন ইতিহাস রচনা করলেও নানামুখী ষড়যন্ত্রের জালে আটকে পড়ে পুণরায় রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদল হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতার বাইরে মাঠের রাজনীতিতেও যেন পুণরায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সে লক্ষ্যে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে খুন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। জঙ্গী সংগঠনের প্রকাশ্য শুরু আমরা দেখতে পেয়েছি বারংবার সর্বশেষ ২১আগস্ট ২০০৪ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনার মৃত্যুকে নিশ্চিত করতে আর্জেস বোমা স্নাইপার রাইফেলের ভয়ংকরী নৃশংস জঙ্গিপনা আইভি রহমানসহ ২২জন নেতা-কর্মীর প্রাণ কেড়ে নিল। কোন দৈব মাঙ্গলিক কারণে বেঁচে গেলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। মাঝখানে সামরিক-বেসামরিক যৌথ কায়দায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টিও নানারকম অনাচারেই পরিপূর্ণ ছিল। ক্ষমতালোভীদের কাঙ্গালীপনা বীভৎস রূপ ধারণ করতে থাকলো। পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ড কিংবা পাকিস্তানের মতো সামরিক কায়দায় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবার কৌশল হিসাবে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে মাইনাস- টু থিওরি বাস্তবায়নের চেষ্টায় শেষ অব্দি ব্যর্থ হয়েছেন।

সামরিক শাসন বাঙালি জাতি কোন সময়ই পছন্দ করতেন না বলে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দু' বছরব্যাপী জনগণকে তৃতীয় মুখী করতে যে অবারিত চেষ্টা করেছেন তা ব্যর্থ হওয়ায় জনরোষে তাদের নিজেদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে বিবেচনা উপলব্ধি করতঃ আটককৃতদেরকে পরবর্তীতে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এঘটনা উত্তর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জোট সরকার ক্ষমতায় আসেন।

জঙ্গী উত্থান,মৌলবাদী আগ্রাসন, দেশী-বিদেশী চক্রান্তে বুনন করা ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত জাল, বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বে জড়ানো বাঙালির ভঙ্গুর মনস্তত্ত্ব কে বিবেচনায় রেখে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকলেন একের পরে এক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি টানার লক্ষ্যে। জঞ্জালমুক্ত করতে, জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অপরাধী রাজাকার-আলবদরদের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করলেন। একই সাথে দেশকে স্বনির্ভরতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সকল সূচকে গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যাবে প্রাধিকার ভিত্তিতে সে দিকগুলোকে বিবেচনায় নিয়েও পথ চলতে শুরু করলেন। বিশেষ করে বিচারের কার্যক্রম এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের কুৎসিত চেহারা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে চলমান এ প্রজন্ম সেটি প্রত্যক্ষ করেছে কমবেশি সকলেই। অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার এমন সাহসী পদক্ষেপের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন অংশীদারদের বিমাতা সুলভ আচরণকে উপেক্ষা করেই নিজ দৃঢ়তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সূচকে পর্যায়ক্রমিক সাফল্য ধরে রেখে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন এবং উন্নত দেশে পরিণত হবার সামগ্রিক রোড ম্যাপ অংকন করে সে পথে সাফল্য অর্জনে ধারাবাহিক আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। সাধুবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের অসাধু মননে কুঠারাঘাত করে অসাধুদের আরোপিত কালিমা বাঙালির গায়ে যেমন লাগতে দেননি তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সফল পদ্মা সেতু নির্মাণ করে নিজেদের সক্ষমতার আত্মবিশ্বাসে যে নতুন শক্তি সঞ্চয় ও প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছেন তা বিশ্বে মাইলফলক হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।

উৎপাদন শিক্ষা স্বাস্থ্য শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য টেকনোলজি উল্লেখ করার মতো প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কর্মসৃজন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্রতা জয়ে অনেক সফলতাও এসেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে মানুষের মেধা উর্বর হয়েছে। তদুপরি অতি মূল্যবান দুটো বিশেষ দিক প্রকৃত অর্থে সৃজনশীল সুখপাঠ্য অর্থাৎ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এবং তা আরও বিকশিত করে টেকসই রাখতে এ জাতির মননের অবনমন ঘটেছে যা চোখে পড়বার মতো। পুরোপুরি জঞ্জাল মুক্ত করে অতঃপর উন্নত মনস্তত্ত্ব গঠনে যদি কোনো পদক্ষেপ এর পরিকল্পনা থাকেও তবু একথা বলাই যায় তা ভবিষ্যতে খুব বেশি অর্থবহ ও সহনশীল করা যাবে মর্মে ভেবে নেওয়াটা খুব সুবিধের নাও হতে পারে। ভুলে না যাওয়াই উত্তম যে এ জাতির অনেকেই জাতির পিতা কে পিতা না বলে পড়শীকে পিতা ভাবার বিকৃত মনস্তত্ত্ব প্রদর্শন করেছে বারংবার।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু এ জাতির মানুষের লোভ লালসা, লুটেরা স্বভাব, ঠকবাজিতা, অতি পুঁজিবাদীতার দুর্নীতি এমন আরো অব্যক্ত কত যে শঠতার চরিত্রে বাঙালিকে নতুন করে যেভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা থেকে পরিত্রাণ পেতেই তিনি রাষ্ট্রপরিচালনায় পরিবর্তন এনে সমগ্র বাংলাকে সমবায় ভিত্তিক যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কথা ভেবেছিলেন তাতে একদিকে যেমন গরীব দুখী মেহনতী সাধারণ মানুষের পর্যায়ক্রমিক ভাগ্যের পরিবর্তন হত, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি আরও সৌন্দর্য্য ছড়াত আর সেই সাথে একে অপরের সহায়ক হয়ে গড়ে উঠত বাঙালির অনন্যসাধারণ মনস্তত্ত্ব। যা ছাড়া প্রকৃত সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। দিব্যচক্ষে বিষয়টি সমাজতন্ত্রের চিত্র অংকন করলেও তা ছিল বঙ্গবন্ধুর একেবারেই নিজস্ব চিন্তার ফসল। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থেকে এ ফসল ঘরে এনে দিতে পারলে এটি হতে পারত বিশ্ব মানবতার সেরা অনুসরণীয় মডেল। কাজেই দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি সমান্তরালে নতুন প্রজন্ম এবং আগত শিশুদের জন্য উন্নত মনন তৈরিতে গবেষণালব্ধ মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার মধ্যদিয়ে সুনাগরিক তৈরীর রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা জরুরি প্রয়োজন। আপনার প্রচেষ্টায় একদিকে জঞ্জালমুক্ত হতে থাকবে দেশ অন্যদিকে সোনালি শিশুরা বেড়ে হয়ে উঠবে সোনার মানুষ, রক্ষা করবে আপনার প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সেই সাথে উন্নত মননের কষ্টিতে বিকশিত হয়ে আরো বেশি টেকসই হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য লাল সবুজের পতাকা।

লেখক: পুলিশ সুপার, কবি ও কন্ঠশিল্পী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :