থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না সাকিব-লিটন, বিপদে বাংলাদেশ

সিলেট টেস্টের মতো চট্টগ্রাম টেস্টেও বাংলাদেশকে পাহাড়সম লক্ষ্য দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের দেওয়া এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। কোনো উইকেট হারিয়ে ৮ ওভারে ৩১ রান করে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায়। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে দ্রুত উইকেট হারাতে থাকা বাংলাদেশ ১৩৪ রানেই হারায় ৪ উইকেট। এরপরেই জুটি গড়ে দলের হাল ধরেন সাকিব ও লিটন। দুই ব্যাটারই থিতু হয়েছিলেন। তবে থিতু হয়েও নিজেদের ইনিংস বেশিদূর নিয়ে যেতে পারলেন না। থিতু হয়ে ইনিংস বড় করার আগেই ফিরে গেলেন তারা। যার ফলে ১৯৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৫১১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করার ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। ৮ ওভারে ৩১ রান করে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান তারা। তবে মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে নিজেদের জুটিকে আর বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি তারা। প্রবাথ জয়সুরিয়ার বলে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয়। আউট হওয়ার আগে করেন ৩২ বলে ২৪ রান।
জয়ের বিদায়ের পর টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জুটি বাধেন জাকির। তবে তারাও ব্যর্থ হন নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে। দলীয় ৫২ রানে জাকিরের বিদায়ে ১৪ রানেই ভেঙে যায় এই জুটি।
এই দুই ব্যাটারের বিদায়ের পর জুটি গড়েছেন মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেট ধরে রেখে দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। তাদের এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাংলাদেশ। তবে দলীয় ৯৪ রানে শান্তর বিদায়ে ৪৩ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। ৫৫ বলে ২০ রান করা শান্ত লাহিরু কুমারার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ৯৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
৯৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুট গড়েন সাকিব ও মুমিনুল। তারাও দেখেশুনেই খেলতে থাকেন। লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন মুমিনুল। কিন্তু নিজের ইনিংসকে আর বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ৫৬ বলে ৫০ রান করে প্রবাথ জয়সুরিয়ার বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে লাহিরু কুমারার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৮ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত ৩৪ ওবার খেলে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান করে চা পানের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতি থেকে ফিরে দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন ও সাকিব। দুই ব্যাটারই উইকেটে থিতু হয়েছিলেন। এই জুটিতে ভর করে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছিল সবাই। কিন্তু দলীয় ১৯৩ রানে সাকিবের বিদায়ে ৬১ রানে ভেঙে যায় এই জুটি।
৫৩ বলে ৩৬ রান করা সাকিব কামিন্দু মেন্ডিসের বলে গালিতে নিশান মাদুশকার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
সাকিবের পরে সাজঘরে ফিরে যান লিটস দাসও। তাকে ফেরান লাহিরু কুমারা। লাহিরু কুমারার বলে উইকেটরক্ষক কুশ মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ৭২ বলে ৩৮ রান। তার বিদায়ে ১৯৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ম্যাচের চতুর্থ দিনে ১০২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট করতে নেমে থিতু হয়ে খেলে স্কোর বড় করার চেষ্টা করেন প্রবাথ জয়সুরিয়া ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ফিফটিও হাঁকিয়ে ফেলেন ম্যাথিউস। তবে ফিফটির পর তাকে বেশি সামনে এগুতে দেননি সাকিব আল হাসান। ৭৪ বলে ৫৪ রানের মাথায় এই লঙ্কান ব্যাটারকে বোল্ড করে দেন সাকিব।
ম্যাথিউসকে চতুর্থ দিনের প্রথম ও একমাত্র শিকার বানান বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার।কারণ এরপর মাত্র ৪ ওভার ব্যাট করে লঙ্কানরা। পিচে থাকা প্রবাথ জয়সুরিয়া ও বিশ্ব ফার্নান্ডোকে ডেকে তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ততক্ষণে অবশ্য সফরকারীদের লিড গিয়ে ঠেকেছে ৫১০ রানে। বাংলাদেশের সামনে এখন টার্গেট ৫১১। এই টেস্টে জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে টেস্ট ক্রিকেটে রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হবে।
জেতার জন্য চতুর্থ ইনিংসে ইতিহাসই গড়তে হবে টাইগারদের। টেস্ট ইতিহাসে রান তাড়ার রেকর্ড ৪১৮ রানের। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের হিসেবে যা অসম্ভব কল্পনাই বলা যায়। চলতি সিরিজে এখন পর্যন্ত ২০০ রান করতে না পারা বাংলাদেশের জন্য তাই বড় এক পরীক্ষা অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের মাঠে। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড ২১৫ রানের। সেটাও এসেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আগের দিন এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রানের বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়ে লঙ্কানরা। ৮৬ রানে চলে যায় ৬ উইকেট।
(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/এনবিডব্লিউ)

মন্তব্য করুন