কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়িই ফরিদপুর দিয়ে চলবে না, হুঁশিয়ারি ডিসির

চালকের লাইসেন্স ও কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়িই ফরিদপুরে ঢুকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। তিনি জেলার সব মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযান শুরু হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এজন্য সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা চাই।
বৃহস্পতিবার বিকালে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘সড়ক নিরাপত্তা কমিটির সভায়’ এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঈদের আগে সড়কে যে স্বস্তিদায়ক অবস্থা ছিল, ঈদের পরে বড় দুটি সড়ক দুর্ঘটনা পুরো মন্ত্রণালয়কে কাঁপিয়ে দিয়েছে। যার কারণে তারা খুবই অস্বস্তিতে আছেন এবং আমাদের উপরই চাপ এসে পড়েছে। প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার পেছনেই স্বল্পগতির গাড়ির একটা ভূমিকা থাকেই। আমরা দ্রুত এই গাড়িগুলো বন্ধ করব।
চালক সুস্থ শরীর ছাড়া গাড়িতে উঠা যাবে না উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেখানেই মোবাইল কোর্ট নিয়ে যাবো সেখানে একজন চিকিৎসক থাকবে। সঙ্গে ডোপ টেস্ট, ডায়াবেটিস মাপার কীট এবং পেশার মাপার যন্ত্র নিয়ে যাবো। গাড়ি থামিয়ে চালকের প্রেসার, ডায়াবেটিস ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। সুস্থ শরীর ছাড়া গাড়িতে উঠা যাবে না, এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। প্রেসার নিয়ে চালককে গাড়ি চালাতে দেওয়া যাবে না।
কাগজপত্র ও ফিটনেস বিহীন কোনো গাড়ি ফরিদপুরে প্রবেশ করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সারাদেশে বার্তা দিতে চাই, ফরিদপুর পার হতে হলে চালকের ও গাড়ির ফিটনেস থাকতে হবে। সেই সঙ্গে প্রেসার ও ডোপ টেস্ট অবতীর্ণ হতে হবে। এগুলো করে ফরিদপুর হয়ে যেতে হবে। অন্যথায় প্রবেশ করতে পারবে না। আর না হয় আমরা গাড়ি ডাম্পিং করে ফেলবো।
জেলা প্রশাসক বলেন, সোহাগ, হানিফ ও ইউনিক পরিবহনের অধিকাংশ বাসের কাগজপত্র নেই। মাত্র ২৫% গাড়ির কাগজপত্র আছে। সোজা কথা কাগজপত্র বিহীন গাড়িগুলো ফরিদপুর দিয়ে চলবে না। এজন্য যাত্রীরা ভুগতে পারে। জীবিকার জন্য আমরা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবো না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছুটা অমানবিক ও কঠোর হতে হবে, আইন প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ফরিদপুরের মহাসড়কে কোনো থ্রি-হুইলার চলবে না। এজন্য লোকাল বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এগুলো বাস্তবায়নে শীঘ্রই আমরা কঠোর অভিযানে নামবো। কারণ, জীবিকার আগে জীবন, এই জীবনের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আগামী সপ্তাহ তাদের সময় দেওয়া হবে, এরপর অভিযানে নামবো।
এ সময় ফরিদপুরের দুটি মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয় এবং অবিলম্বে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবি জানান বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি। এছাড়া সড়কে নিয়ন্ত্রিত স্পিড, খানাখন্দ ভরাটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
চারটি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ওভার লোড, ওভার স্পিড, ওভার কনফিডেন্স এবং ওভার ওয়েটের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এই চারটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। এছাড়া সরকারের কাছে প্রতিটি গাড়িতে কিউআর কোড বিশিষ্ট ডিভাইস বসানোর প্রস্তাব পাঠানো হবে। সেখানে গাড়ির লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সমস্ত তথ্য থাকবে। যাতে যাত্রী গাড়িতে উঠার আগে সেই গাড়ির ফিটনেস সম্পর্কে জানতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে ৭৫% গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। তারা কাগজপত্র ঠিক করে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, মাদারীপুর রিজিয়নের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহিনুর আলম খান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন, ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখসহ জেলা বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেতুলতলা দিকনগর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হন। এই দুর্ঘটনার পর সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা নিয়ে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন