নাবিকদের নিয়ে আরব আমিরাতে পৌঁছেছে এমভি আব্দুল্লাহ
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে মুক্তিপণ দিয়ে সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও তার ২৩ নাবিক।
রবিবার বিকাল ৪টা নাগাদ নাবিকদের নিয়ে আল হামরিয়ার বহির্নোঙরে পৌঁছে জাহাজটি। এর আগে ওমান উপসাগর হয়ে নিরাপদে ফুজাইরা উপকূল ও হরমুজ প্রণালি পার হয় জাহাজটি। আল হামরিয়া বন্দরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পূর্ব উপকূলে শারজাহ শহরে অবস্থিত।
৩১ দিন জিম্মি থাকার পর গত ১৩ এপ্রিল শনিবার জাহাজটি দস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পায়। এরপর সোমালিয়ার ডেরা থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
বহির্নোঙরে জাহাজ পৌঁছার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দেশে রড উৎপাদনকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কেএসআরমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম।
তিনি বলেন, জাহাজটি শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর দেশটির জলসীমায় প্রবেশ করে। জাহাজটি ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার গতিতে রবিবার বিকালে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে।
এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা হলেন—জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এদিকে এক ভিডিও বার্তায় জাহাজের মাস্টার আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, নাবিকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। জাহাজটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাত্রা সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল, পানি ও খাদ্য মজুদ ছিল। দেশে নিরাপদে পৌঁছার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। অস্ত্রের মুখে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটিকে জিম্মি করে দস্যুরা। এরপর দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপর শুরু হয় দর-কষাকষি।
পরে ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গত ১৩ এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার পরই ১ হাজার ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকা আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। জাহাজটিতে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে।
মুক্তি পাওয়ার পর জাহাজটিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জলসীমা পার করে দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধজাহাজ ও তিনটি টহল জাহাজ এর আগেও আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর দস্যুদের কবলে পড়া এমভি জাহান মণি নামে জাহাজে ২৫ বাংলাদেশি নাবিক ও এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জন ছিলেন। ১০০ দিন জিম্মি থাকার পর সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ মুক্তি পান নাবিকরা।
(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/ইএস)
মন্তব্য করুন