তীব্র খরার পুড়ছে পাটক্ষেত, পাতালেও মিলছে না পানি! দিশেহারা কৃষক

নুরুল ইসলাম, সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:০৭| আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:০৯
অ- অ+

মাস দেড়েক আগে সোনালী আঁশ পাট বীজ বপণ করেন কৃষকেরা। এরপর থেকে আর বৃষ্টির দেখা মিলছে না। কৃষকরা পানির জন্য হাহাকার করছেন। তীব্র খরায় নুয়ে পড়ছে তাদের ক্ষেতের পাট। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়েও ঠিকমতো সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে ফসলের মাঠ ফেটে হচ্ছে চৌচির।

পাট উৎপাদনে দেশসেরা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার চিত্র এটি। দুশ্চিন্তা তাই জেঁকে বসেছে এখানকার কৃষকদের মনে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়ে থাকে সালথায়। তারপরেই পাশের নগরকান্দা উপজেলায়। যে কারণে সালথাকে পাটের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। এবারও সালথা ও নগরকান্দায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে।

তবে দেশের এই অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল নষ্ট হলে শুধু কৃষকই নয়, কৃষিখাতেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। যা দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ওপরেও নেচিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই চলমান তাপদাহের দুশ্চিন্তা এখন কৃষকের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে আরও অনেকের মনেই। সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে কৃষিবিভাগ বলছে, এই খরায় পাটের তেমন কিছুই হবে না।

নগরকান্দার ছাগলদী মাঠে গিয়ে দেখা মিজান শেখ নামে ৬৫ বছর বয়সি এক পাটচাষির সঙ্গে। তীব্র খরায় ছাতা মাথায় দিয়ে দিয়ে একা একা ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন তিনি। মিজান শেখ বলেন, অতিরিক্ত গরমের মধ্যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে একা একা পাটক্ষেত পরিচর্যা করছি। গত এক-দেড় মাস আগে আমি আড়াই বিঘা জমিতে পাট বীজ বপণ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টি না নামায় অতিরিক্ত রোদের তাপে আমার সবগুলো জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে পাটের চারাও বেড়ে ওঠছে না। এক থেকে দেড় মাসে প্রতিটি পাটের গাছ দুই হাত করে লম্বা হওয়া কথা। কিন্তু পানির অভাবে এখন পর্যন্ত ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে লম্বা হয়েছে পাটের গাছ। এমন অবস্থায় বাড়তি টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন ঘনঘন সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এতেও কাজ হচ্ছে না। সকালে সেচ দিলে বিকালে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই এবার ভালো ফলন পাওয়ার কোনো সম্ভাবণা দেখছি না।’

সালথার গট্টি ইউনিয়নের জয়ঝাপ গ্রামের পাটচাষি দবির হোসেন বলেন, ‘এবার পাট চাষ করে চরম সমস্যায় আছি। তীব্র দাবদাহে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। পাটক্ষেতে সেচ দিতে গিয়ে ডিজেল কিনে কৃষকদের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মহান আল্লাহ যদি মাত্র একবার বৃষ্টি দিতেন, তাহলে আমাদের বুক সমান পাটের চারা বেড়ে উঠতো। সেইসঙ্গে মাঠের পর মাঠ পাটের পাতা সবুজে ছেয়ে যেত।

হারুন শেখ নামে আরেক পাটচাষি বলেন, ‘বৃষ্টি তো নেই। পাতালেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকেও পানি উঠিয়ে সেচ দিতে গিয়ে অনেক সময় ব্যর্থ হই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো।’

তবে সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, ‘সালথায় এবারও প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাটের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তীব্র খরায় পাট গাছগুলো ধীরগতিতে বেড়ে ওঠছে। তবে আরও এক সপ্তাহ পরেও যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে মাত্র ৭-৮ দিনেই পাটগাছ মানুষ সমান বেড়ে উঠবে।’

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোস বলেন, ‘নগরকান্দায় এবার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। বর্তমানে পাটের আশানুরূপ বৃদ্ধি চলমান রয়েছে। চলমান খরায় কৃষকদের জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে পাট জাগের উপযোগী পরিবেশে গুনগত মানসম্পন্ন সোনালি আঁশ উৎপাদন হবে।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাট খরা সহনশীল ফসল। তবে পাটের ভালো ফলন নির্ভর করে বৃষ্টির উপরেই। চলামান খরার মধ্যে যেসব পাটের গাছ বড় হয়ে গেছে, সেগুলোর কোনো সমস্যা হবে না। খরায় ছোট পাটগাছের সামান্য সমস্যা হলেও বৃষ্টির পানি পেলে ঠিক হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদিও পাটগাছ ধীরগতিতে বেড়ে ওঠায় কৃষকরা চিন্তিত। তবে কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। জেলাব্যাপী মাঠে কাজ করছে আমাদের টিম। ভালো মানের পাট উৎপাদনের লক্ষ্যে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশের সাত অঞ্চলে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত
সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’, ভয়াবহ তাণ্ডবের আশঙ্কা
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত
গরমে দিনে কতটুকু পানি পান করলে শরীর সুস্থ থাকবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা