রেডিওলজি পরীক্ষার ভুল রিপোর্টে ভোগান্তির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৩
বাবুল হোসাইন ও মেহেরুন্নেছা দম্পতি

নাটোরে একটি বেসরকারী হাসপাতালে গর্ভবতী মায়ের রেডিওলজি পরীক্ষার ভুল রিপোর্টে ভোগান্তির স্বীকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী রায়পুর এলাকার বাবুল হোসাইনের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা(২৩) গর্ভবতী অবস্থায় নাটোরের সততা স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালের রেডিওলজি পরীক্ষা-পরবর্তী বিভ্রান্তিকর ও হতাশাজনক চিকিৎসা-পরামর্শ পেয়ে চরম ভোগান্তির স্বীকার হন।

পরবর্তীতে এই ভোগান্তি কাটিয়ে উঠে পুত্র সন্তান জন্ম নিলেও আর কেউ যেন এমন ভোগান্তির স্বীকার না হয় তার জন্য প্রতিকার চেয়ে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত আবেদন করলে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মশিউর রহমান ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে চিঠি ইস্যু করেছেন।

চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডাঃ তাসলিমা বেগমকে সভাপতি, একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও রেডিওলজিস্ট ডাঃ তাসনীম আলমকে সদস্য এবং নাটোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ রাসেলকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মেহেরুন্নেছার স্বামী মোঃ বাবুল হোসাইন জানান, গত বছরের ২২ অক্টোবর আমার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী মেহেরুন্নেছাকে নাটোরের সততা স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট (গাইনী এন্ড অবস্) ডা: আকলিমা খাতুনের স্মরণাপন্ন হই। এর পর গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ডাঃ আকলিমা খাতুনের পরামর্শ অনুযায়ী উক্ত হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের রেডিওলজিস্ট ডাঃ উম্মুল খায়ের ফাতেমার কাছে তার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে গর্ভের বাচ্চার মাথায় মাইল্ড আকারে পানি জমা থাকতে দেখে ডাঃ আকলিমা ছয় সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করতে বলেন। ছয় সপ্তাহ পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পুনরায় সততা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্টে পুনরায় পানি জমা হয়ে আছে বলে জানান ডাঃ আকলিমা খাতুন।

ভুক্তভোগী বাবুল জানান, এই রিপোর্ট দেখে ডাঃ আকলিমা খাতুন তাকে তার স্ত্রীর গর্ভে থাকা ৩৩ সপ্তাহের পরিণত বাচ্চা নষ্ট করতে বলেন, এমনকি এই বাচ্চা যদি ভূমিষ্ট হয় তাহলে বিকলাঙ্গ (বুদ্ধি প্রতিবন্ধি) হয়ে জন্মাবে বলেও উল্লেখ করেন। ডাঃ আকলিমার এমন কথা শুনে বাবুলের স্ত্রী মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়েন।

পরবর্তীতে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে বাবুল হোসাইন তার ঢাকাস্থ কর্মস্থল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ মাসুদুর রহমানকে বিষয়টি জানান। পরে মাসুদুর রহমানের পরামর্শে বাবুল তার স্ত্রীকে ঢাকাস্থ বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (গাইনী এন্ড অবস্) ডাঃ রোনা লায়লার স্মরণাপন্ন হন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডাঃ রোনা লায়লার পরামর্শে বারডেম এর রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শামসি আরা বেগমের কাছে বাবুল তার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম করান যার রিপোর্টে দেখা যায়- গর্ভের বাচ্চার উল্টো পজিশন ব্যতিত অন্য সবকিছু পুরোপুরি নরম্যাল। ফলে ডাঃ রোনা লায়লা বাবুলকে দুঃশ্চিন্তা না করে স্ত্রীকে নাটোরে নিয়ে যেতে বলেন এবং গর্ভের বাচ্চার পজিশন ঠিক হলো কি না তা দেখার জন্য মার্চ মাসের ১৬ তারিখে আরও একটা আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখতে বলেন। এই খবরে বাবুল, তার স্ত্রী ও পরিবারের সকল সদস্য দুঃশ্চিন্তামুক্ত হন এবং নাটোরে ফিরে আসেন।

এরপর গত ১৬ মার্চ নাটোরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিকে ডাঃ আব্দুস সামাদের তত্বাবধানে বাবুলের স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। এই রিপোর্টে গর্ভের বাচ্চার পজিশন ডেলিভারি হওয়ার উপযোগী বলে নিশ্চিত করেন এবং প্রসবের অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন ডাঃ আব্দুস সামাদ। এরপর গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা ১০ মিনিটে নাটোরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বাবুলের স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।

সততা হাসপাতালের ভুল রিপোর্ট ও ডাঃ আকলিমা খাতুনের অসৎ পরামর্শের ব্যাপারে বাবুলের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা এই প্রতিবেদককে জানান, একজন ডাক্তারের মুখ থেকে ৩৩ সপ্তাহ বয়সী একটা গর্ভের বাচ্চা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে নষ্ট করে দেয়ার কথা শুনে আমি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার গর্ভের সন্তান যদি বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বা অস্বাভাবিকভাবেও জন্ম নেয় তবুও আমি আমার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করতে পারিনা, বলেন মেহেরুন্নেছা।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডাঃ আকলিমা খাতুন এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে সততা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের রেডিওলজিস্ট ডাঃ উম্মুল খায়ের ফাতেমা ভুক্তভোগীর অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে নিশ্চিতভাবে দাবী করেন তার রিপোর্টে তো কোন ভুলই নেই। আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী এধরনের রোগীর ক্ষেত্রে বাচ্চা নষ্ট করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা গাইনীকোলজিস্ট বলতে পারবেন, আমি কিছু বলতে পারবো না।

এ ব্যাপারে নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান জানান, স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত সেনসিটিভ। বিষয়টি যেহেতু মানুষের জীবন নিয়ে, সেহেতু আমরা সবসময়ই আশা করি যে ডাক্তাররা তাদের সর্বোচ্চ জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের সর্বোচ্চ ভালটা করার চেষ্টা করবে এবং সেই লক্ষ্যেই সবাই কাজ করবে।

এছাড়াও সিভিল সার্জনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী বাবুল হোসাইন তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে যা হয়েছে- এমন ভোগান্তি যেন আর কারও জীবনে না ঘটে সে বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৮ এপ্রিল লিখিত আবেদন জমা দেন। এর প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন গত ২২ এপ্রিল ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :