সিলেটে হু হু করে বাড়ছে পানি, বন্যার আশঙ্কা

সিলেটে অতি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি। হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সিলেট এবং এর উজানে টানা ভারী বর্ষণের কারণে ফুঁসে উঠছে এ অঞ্চলের নদীগুলো। বিশেষ করে প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার অবস্থা অনেকটা বেসামাল। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সুরমা নদীর পানি। সিলেট শহরের অনেক এলাকার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় ভয়ে আছেন সিলেট নগরীর লোকজন।
বুধবার দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে সিলেটের সকল উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। তবে বেশি প্লাবিত হচ্ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ।
বুধবার রিডিং অনুযায়ী সিলেটের সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। গত রাতের বিরামহীন বৃষ্টিপাতের পর আজ সকাল ৬টার দিকে এ পয়েন্টে অনেক পানি বৃদ্ধি পায়। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৩ দশমিক ৭৪ মিটার যা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কানাইঘাট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬ মিলিমিটার বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।
সুরমার মতোই ফুঁসছে কুশিয়ারা। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৯ দশমিক ৪৫ মিটার কিন্তু শ্যাওলায় ১৩ দশমিক ৫ মিটার, আমলসিদ পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। সারিনদীর ডাউকি পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১২ দশমিক ৫ মিটার যা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুরের ইউএনও জাহাঙ্গীর বখত জানান, এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬ মিলিমিটার।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি। আমি নিজে বন্যা পরিস্থিতি তদারকি করছি। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেলের অফিসারসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্যাদুর্গত ও ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাসমূহে জনপ্রতিনিধিগণসহ সরেজমিনে কার্যক্রম পরিচালনা করছি সকাল থেকে। যে সকল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবিত হতে পারে সে সকল এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার ও দোকানসমূহ থেকে জানমাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করছি। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবনপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কের দুটি পয়েন্টে যথাক্রমে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।
হাওরাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দি। রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি। আমি নিজে কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকাসহ বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা পরিদর্শন করেছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ-সুবিধাসহ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের মজুত রেখেছি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবনপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
কানাইঘাট উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট টু বাগান সংযোগ সড়কের মন্দির, আমবাড়ি, আমরি খাল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।
নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দি। ১ ও ২ নম্বর ইউপির মুলাগুল বাজার, কান্দলা, মেচা, উত্তর ও দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রাসাদ, কুওরগড়ীতে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে শালিক রুমাইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের চারিকাটা ও নিজপাট ইউনিয়নের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ প্রস্তুত রেখেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন ঢাকা টাইমসকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সিলেটের ওপর দিয়ে গিয়ে ভারতের মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে, এর প্রভাবে সিলেট ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে যার দরুন সিলেটের নদীগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫-১৬ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি নামতে শুরু করলে এ পানি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কমে যাবে।
(ঢাকা টাইমস/২৯মে/এসএ)

মন্তব্য করুন