কার স্বার্থে নিয়ম ভাঙল বাংলাদেশ ব্যাংক?
শাহ আলম সারওয়ারকে আইএফআইসি ব্যাংকের উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন

আইএফআইসি ব্যাংকের সদ্য অবসরে যাওয়া এমডিকে ওই ব্যাংকের ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন দিয়ে নিজেদেরই করা বিধানকে লংঘন করল বাংলাদেশ ব্যাক।
ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নিয়মকে পাশ কাটিয়ে এই নিয়োগকে ‘বাজে’ দৃষ্টান্ত বলছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা, এখন অন্য ব্যাংকগুলোও একই পথে হাঁটার চেষ্টা করবে।
জানা যায়, গত ১৩ মে আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারওয়ারের মেয়াদ শেষ হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তিনি এই পদে যোগদান করেন। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যাংকটিতে এখনো পূর্ণকালীন এমডি নিয়োগ হয়নি।
আর গত ১১ মে আইএফআইসি ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ‘বিশেষ বিবেচনায়’ শাহ আলম সারওয়ারের নিয়োগ অনুমোদন করেন।
এদিকে ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর শাহ আলম সারওয়ার ২৬ মে ওই পদে যোগদান করেন। তিনি আগের মতো একই কক্ষে বসে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, শাহ আলম সারওয়ার দুই বছরের জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের ‘কৌশলগত উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ জন্য প্রতি মাসে তার বেতন অনুমোদন করা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
২০২১ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধান করে, কোনো ব্যাংকের এমডি বা পরের দুই পদ পর্যন্ত কর্মকর্তারা অবসরে যাওয়ার পাঁচ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপদেষ্টা বা পরামর্শক হতে পারবেন না। এই বিধান প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিধান করার আগে অবসরের এক বছর পার হলেই এমডি বা পরের দুই পদ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপদেষ্টা বা পর্যবেক্ষক হওয়ার সুযোগ ছিল।
আইএফআইসি ব্যাংকে শাহ আলম সারওয়ারের নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আইএফআইসির ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) জানিয়েছে, ব্যাংকটি বেশ কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, এজন্য তাকে (শাহ আলম সারওয়ার) প্রয়োজন।”
“তাদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নিয়োগের বিশেষ অনুমোদন দিয়েছে। নিয়মের বাইরে বিশেষ বিবেচনায় এ ধরনের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে।”
তবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক ওই বিধানটি করেছিল। এখন তারা নিজেরাই নিজস্ব নিয়ম ভাঙছে। এমন বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করে ব্যাংক খাত কখনো ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য তাদের।
প্রসঙ্গত, আইএফআইসি ব্যাংকের আগে গত জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়া এমডি মেহমুদ হোসেনকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিতে ন্যাশনাল ব্যাংকও অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছিল। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের ওই আবেদন অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
(ঢাকাটাইমস/৩০মে/ডিএম)

মন্তব্য করুন