মানিকগঞ্জে কাঁচামরিচের ফলন কম, দিশেহারা চাষি

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৪, ১৩:২১
অ- অ+

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় কাঁচামরিচের দাম আকাশছোঁয়া। কিন্তু ফলন তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মরিচচাষি। এদিকে ফলন কমে যাওয়ায় দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে।

বর্তমানে হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৫০ থেকে ১৭৫ কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দরে। মৌসুমে মরিচের এমন দামের ফলে সাধারণ ক্রেতাদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে নাভিশ্বাস। এ সময় মরিচের স্বাভাবিক দাম ২০-৩০ টাকা কেজি হওয়া উচিত বলে দাবি করেন সাধারণ ক্রেতারা।

জানা যায়, এবছর সারাদেশে তীব্র দাবদাহে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ। তখন এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। মরিচ গাছ ভালো হলেও অত্যধিক খরায় ফলন খুবই কম। মরিচে ফুল আসলেও কয়েক দিনে তা ঝরে পড়ছে। অনাবৃষ্টির কারণে অনেক জমিতে মরিচ গাছও মরে যাচ্ছে। জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি দিয়েও ফল ভালো পাচ্ছেন না বলেও জানান অনেক কৃষক।

হাতে গোনা কিছু সংখ্যক কৃষক ফলন ভালো পেলেও অধিকাংশ কৃষকই পড়েছেন বিপাকে। পড়েছেন লোকসানের কবলে। আগের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা শিথিল হলেও অনাবৃষ্টির কারণে ঝরে পড়ছে মরিচের ফুল। এতে মোটা অঙ্কের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন কয়েক হাজার কৃষক।

বাল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম খেরুপাড়া গ্রামের সুমন বলেন, এবছর আমি ৩ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। গাছ ভালো হলেও আশানুরূপ ফলন নেই। এ পর্যন্ত দুই মাসে মাত্র ৪ মণ মরিচ বিক্রি করেছি। মরিচের পেছনে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ২-১ দিন পর পর ৫ থেকে ৭ কেজি বিক্রি করেছি। অথচ এ সময় কমপক্ষে দুই থেকে তিন মণ করে মরিচ তোলা দরকার ছিল। তাহলে হয়তো ভালো লাভবান হতে পারতাম। পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর মরিচ তুলনামূলক অনেক কম ফলন হয়েছে।

দক্ষিণ গোড়াইল গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া জানান, আমি এবছর ৮০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করছি। খরায় অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। রাতে মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও গাছ সতেজ রাখার চেষ্টা করেছি। তারপরেও অনেক গাছের ফুল ঝরে যাচ্ছে। ফলন যা হওয়ার দরকার ছিল তা হয়নি। তারপরেও আমার তেমন লোকসানের সম্ভাবনা নেই। কারণ উৎপাদন কম হলেও দাম ভালো পাচ্ছি।

উপজেলার ঝিটকা বাজারের কাঁচা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন বলেন, এ বাজার থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৭-৮ টন মরিচ দেশের বিভিন্ন আড়তে রপ্তানি করা হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য বছর এ সময় ১০০-১৫০ টন মরিচ রপ্তানি হতো। আবাদ ভালো হলেও খরার কারণে ফলন নেই বললেই চলে। শুক্রবার বাজারে মরিচ বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। কোনো কোনো দিন দাম আরো বেশিও হয়। তবে খরায় এবার মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি। তবে মরিচের আমদানি বেশি হলে দাম অনেক কম হতো। তাতে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার অনেকটাই সহজ লভ্য হতো।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বিন্দু মরিচের আবাদ হয়েছে ১৭৫০ হেক্টর আর কৃষিবিদ মরিচ ১১০৬, কারেন মরিচ ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬৬৫ হেক্টর জমি।

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামান খান জানান, এ বছর সারাদেশে চলমান প্রচণ্ড দাবদাহে মাঠে দণ্ডায়মান ধান, মরিচ, পাট, ভুট্টা, তিলসহ সব ফসলের ফলনে বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা রয়েছে। বিশেষত উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সবচেয়ে বেশি মরিচ গাছের ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ কম বলেই দাম বেশি। এক্ষেত্রে যাদের একটু মরিচ ভালো হয়েছে, তাদের অনেকেই কিন্তু ভালো লাভবানও হচ্ছেন। তীব্র দাবদাহের কারণে আমরা কৃষকদের সচেতনতা ও করণীয় সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্ন ব্লকে উঠান বৈঠকের কার্যক্রম করেছি।

এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠকর্মীদের নিজ নিজ ব্লকে উপস্থিত থেকে মাঠ ফসলের মনিটরিংসহ সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

(ঢাকা টাইমস/৩১মে/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এনসিসি ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি 
অন্তর্বর্তী সরকারও শেখ হাসিনার মত নানাভাবে ন্যারেটিভ তৈরি করছে: রিজভী 
হবিগঞ্জের সীমান্তে বিজিবির সতর্ক পাহারা, ২ স্তরের নিরাপত্তা বলয়
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা