শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে রঙিন হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

খুদে শিশুদের বিদ্যালয়মুখী ও আনন্দদায়ক পাঠদানের লক্ষ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সুসজ্জিত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ, বিভিন্ন দিবসের তারিখ। শ্রেণিকক্ষ ও ভবনের চারপাশে ফলমূল, দেশ-প্রকৃতি, কার্টুনসহ মনীষীদের ছবি ও বাণী।
লেখা আছে শিক্ষামূলক নানা নীতিবাক্য। দৃষ্টিনন্দন শ্রেণিকক্ষগুলো কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোটবেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, জানবে দেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে, তেমনি শিশুমনে শ্রেণিপাঠ সহজবোধ্য হবে।
তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সরকারি অর্থায়নে বিদ্যালয় সুসজ্জিত করা ও শিশুবান্ধব শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও সব শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব বিদ্যালয় ভবন ও শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিত করা হবে।
এ ছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, বই পড়ার অভ্যাস গড়তে শেখ রাসেল বুক কর্নার। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের বীর সেনানীদের ছবি ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে রঙিন চিত্রে। বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে শিশুদের ওজন ও উচ্চতা মাপার যন্ত্র। বয়সের সঙ্গে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও ওজন ঠিক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখেন শিক্ষকরা।
নানা রঙে সজ্জিত হয়েছে উপজেলার কালুপাড়া বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীপুর দরগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাটিয়ামালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালীদাসনিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলো রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রংতুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো এখন যে কারও দৃষ্টি কাড়ে।
চারুশিল্পীরা দেয়ালে-দেয়ালে এঁকেছেন ছোটদের মিনা কার্টুন, ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি। দিনের নাম, মাস ও বছরের নাম। অনেক বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙানো। বাংলা-ইংরেজি বর্ণ, বিভিন্ন দিবসের তারিখ। মাঝে মাঝে বিভিন্ন মনীষীর ছবি ও বাণী। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে শিক্ষামূলক নানা নীতিবাক্য।
কালুপাড়া বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোছা. মিম আক্তারসহ কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, সকালে স্কুলে এসেই তাদের আনন্দ লাগে। তারা ছবি দেখে অনেক কিছু শিখতে পারছে। এখন শিক্ষকরা অনেক উপকরণসহ পাঠ দেন। এতে তাদের ভালো লাগে। স্কুলটি এখন তাদের কাছে আনন্দের। এখন স্কুলে এসে আর বিরক্ত লাগে না। সাজানো গোছানো বিদ্যালয়, এটা তাদের জন্য খুব আনন্দের। এখন শিক্ষকরা যতক্ষণ ছুটি না দেন ততক্ষণ তারা স্কুলে থাকে।
কালুপাড়া-বাশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মামুন বাহারী জানান, আগের চেয়ে এখন সুসজ্জিত বিদ্যালয় ভবন পেয়ে শিশুরা খুশি, তারাও খুশি। দৃষ্টিনন্দন করে তোলায় স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
কালুপাড়া-বাশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে হাবিবা শিমুল বলেন, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় ও স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (স্লিপ) বরাদ্দকৃত টাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে রঙিন করে তোলা হচ্ছে বিদ্যালয়। এভাবেই রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে স্কুলকে শিশুবান্ধব করার সব রকম চেষ্টা চলছে।
উম্মে হাবিবা শিমুল আরও বলেন, সুন্দর মন, সুস্থ পরিবেশ খুব বেশি প্রয়োজন। স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিশুরা বেশি করে স্কুলমুখী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছে তারা। এমন উদ্যোগে তিনিসহ তার সহকর্মী শিক্ষকরাও উদ্দীপ্ত।
স্বপ্নের মতো করে রঙিন সাজে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সাজানো হচ্ছে জানিয়ে তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আইয়ূবুর রহমান রাজন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের এমন উদ্যোগে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে শিশুরা। আমি নিজেই আগে নিজের মতো করে সাজিয়েছি। যেন বাড়ির চেয়ে বিদ্যালয়টা ভালো লাগে শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় এবং ঝড়ে পড়ার হার কমে যায়।’ অতীতের চেয়ে এখন শিক্ষার মান অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৪০টি স্কুল সুসজ্জিত করা হয়েছে জানিয়ে তাড়াশের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী বলেন, স্কুল সুসজ্জিত করায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিশুবান্ধব হয়েছে। শিশুদের জানার পরিধি বাড়ছে। স্কুলের দেয়ালে আঁকা ছবি সবই পাঠ্যবই সংশ্লিষ্ট। এতে করে ছবি দেখেই শিশুরা পাঠ সম্পর্কে ধারণা লাভ করছে। তাদের অনুধাবন ক্ষমতা, সৃজনশীলতা বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিশুদের মনোবিকাশে কাজ করছে।
তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুসাব্বির হোসেন খান বলেন, সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যালয়গুলো স্মার্ট ও দৃষ্টিনন্দন করার চেষ্টা চলছে, যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখী হয়। পাঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা উপকরণ ব্যবহারে শিশুদের একঘেয়েমি দূর হবে। স্কুলগুলো হয়ে উঠছে শিশুদের জন্য আনন্দের পাঠ।’
(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/মোআ)

মন্তব্য করুন