বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী শনিবার 

যার রং তুলিতে খেটে খাওয়া মানুষগুলো হয়েছেন পেশিবহুল আর শ্রমজীবী মানুষগুলো শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী, তিনি বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ হিসেবে বেশ পরিচিতও তিনি।

খ্যাতিমান এই চিত্রশিল্পীর ১০০তম জন্মদিন আগামীকাল শনিবার। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় মেছের আলী ও মাজু বিবি দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

চিত্রকর্মের স্বকীয়তা দিয়ে ‘লাল মিয়া’ থেকে হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি ‘মাটি ও মানুষের শিল্পী’ হিসেবেও পরিচিতি। সম্প্রতি সুলতানের জন্মসাল নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গত বছর (২০২৩) এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করেছেন। তবে, নড়াইলবাসীসহ সুলতানপ্রেমীরা তা প্রত্যাখ্যান করে সুলতানের ৯৯তম জন্মবার্ষিক পালন করেন।

এ বছর (২০২৪) বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালনে সুলতানপ্রেমীরা নড়াইলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও দেশে চলমান পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র কোরআন খতম এবং সুলতানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আশফাকুল হক চৌধুরী।

সুলতান ফাউন্ডেশনসহ স্থানীয়দের মতে, ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট এস এম সুলতান জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিবছর এ হিসেবে জন্মবার্ষিকী পালন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এবার সুলতানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। এমনকি সুলতান জীবিত থাকাকালীনও এই হিসেবে জন্মবার্ষিকী পালিত হতো। সুলতানের সমাধি, বিভিন্ন বইপত্র, পত্রিকাসহ সব ধরণের তথ্য-উপাত্তেও সুলতানের জন্মসাল ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট। কিন্তু এ ধরণের তথ্য-উপাত্ত ও নিয়ম উপেক্ষা করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গত বছর সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুলতানপ্রেমীরা। তারা প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি।

বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্মসাল নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করতে নতুন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন নড়াইলবাসী।

উল্লেখ্য, বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান তার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাঁকে। আছেন এসএম সুলতান।

এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে না সুলতান মেলা: চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবদ্দশায় ১৯৯২ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলে আনুষ্ঠানিকভাবে তার জন্মবার্ষিকী পালন শুরু হয়। এর পর ২০০১ সালে গঠিত হয় এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন। সেই থেকে জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ চত্বরে প্রতি বছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এবার দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মেলা বন্ধ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/পিএস)