সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুদের পাসপোর্ট সংগ্রহের হিড়িক

মো. হোসেন আলী, সাতক্ষীরা
  প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০২৪, ১৪:০০
অ- অ+

সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের পাসপোর্ট তৈরি নবায়নের হিড়িক পড়েছে। এখানে প্রতিদিন এক-দেড় হাজার মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে এই উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়ান পাসপোর্ট গ্রাহক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইনও লম্বা হতে থাকে। প্রচণ্ড ভিড়ে অফিসের বারান্দা থেকে রাস্তায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ১৮টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৭টি। মাত্র ১১ জন জনবল দিয়ে পাঁচটি বাই স্টেশনের ধারণক্ষমতা প্রতিদিন ৬০ জন করে মোট ৩০০ জনের। আর যদি রাত পর্যন্ত কাজ করেন তারা, ৪০০ থেকে ৫০০ জনের সেবা দেওয়া সম্ভব। এর মধ্যেই বিরতিহীনভাবে গ্রাহককে সেবা দিচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের দু-তিন গুণ আবেদনকারী পাসপোর্টের জন্য সকাল থেকে ভিড় করতে শুরু করেন। নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। -পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশ, ছবি তোলা ও স্বাক্ষর নিতে হয়। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ-সাত মিনিট সময় লাগে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও সংকট তৈরি করে মাঝে মাঝে।

পাসপোর্ট নবায়ন করতে আসা গ্রাহক সদ্বীপ কুমার বলেন, ‘সামনে পূজা। আর দেশের বর্তমান অবস্থায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছি। কিন্তু পাসপোর্ট করতে পারব কি না বুঝতে পারছি না। লাইন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

গ্রাহক অপর্ণা রানী বলেন, ‘চাপা ভয়ে পাসপোর্ট করে রাখছি, যাতে কোনো সমস্যা হলে ভারতে যেতে পারি।’

কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে অপর্ণা বলেন, ‘না, আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি।’ সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বলে জানান তিনি।

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনুপা রাণী। গতকাল একবার এসে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন,আজও এসে দেখি দীর্ঘ লাইন। জমা দিতে পারব কি না জানি না। বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাচ্চা কান্নাকাটি করছে, তবুও দাঁড়িয়ে আছি। কিছু করার নেই।’

কী কারণে এমন জরুরিভাবে পাসপোর্টের জন্য এসেছেন জানতে চাইলে অনুপা বলেন, ‘আমরা সব সময় ভারতে যাই। ওখানে আত্মীয়স্বজন আছে। বাসার সবার পাসপোর্ট আছে, শুধু আমারটা নবায়ন করতে হবে।

সবাই মিলে বেড়াতে যাব আর কি।’

তবে ভোগান্তি কমাতে দূর-দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকদের সেবা দিতে খোদ সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান নিজে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় অসুস্থ, বয়স্ক নারী-পুরুষ শিশুদের তিনি অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা দেন দায়িত্বে থাকা সবাইকে।

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই অফিসে প্রতিদিন ৫টা বাই স্টেশনের মাধ্যমে ৩০০ জনকে সেবা দেওয়া যায়। রাত পর্যন্ত কাজ করলে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষের সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু গত কয়েক দিনে প্রতিদিন পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। জনবল সংকটের কারণে একজন কর্মকর্তাকে দু-তিনজনের কাজ করতে হয়। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সেবা দিতে, যাতে কেউ ভোগান্তির শিকার না হয়।’

কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য পুরো পাসপোর্ট অফিসের সিসি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক সচল থাকছে জানিয়ে সহকারী পরিচালক আরও বলেন, আবেদনকারীদের ভোগান্তি কমাতে কিউ (ইলেকট্রনিক কিউ) টোকেন স্লিপ দেওয়া হয়। কোনো সেবাপ্রত্যাশী যাতে দালালের খপ্পরে না পড়ে তার সর্বোচ্চ নজরদারি করা হয় বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/মোআ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যুবদলের মালয়েশিয়ার জহুরবারু শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ রুদ্ধদ্বার আলোচনা
শান্ত আছে, মিরাজ নেই: যা বললেন লিপু
আওয়ামী লীগের প্রতি সরকারের সহমর্মিতা বাড়ছে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা