মানবিক উদ্যোগে বন্যার্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে রাবি শিক্ষার্থীরা

‘রাজশাহীতে আসার পর একটি ব্যাংকে পাঁচ টাকার পয়সা জমানো শুরু করি। একটা স্বপ্ন ছিল যে, অনার্স শেষে এই ব্যাংক পূর্ণ হয়ে যাবে তখন মাকে সারপ্রাইজ দেব। আম্মা হয়ত অনেক খুশিতে কান্না করে দিবেন। কিন্তু আজ দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের জন্য কিছু করতে মন পুড়তেছে। নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারছি না এই ভেবে, আমি মানুষের জন্য কিছুই করতে পারছি না। আজ এই ব্যাংকের পুরো টাকা বন্যার্তদের কল্যাণে দান করে দিলাম।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বিল্লাল হুসাইন। শুধু বিল্লালই নয়। এভাবে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট, রেলগেট স্কয়ার, লক্ষ্মীপুর, আই-বাঁধ, টি- বাঁধ ও ভদ্রাসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বন্যা কবলিত মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ করছেন। কেউ রিকশায় হ্যান্ড মাইক নিয়ে, কেউ ট্রাকে করে বা হেঁটে কাপড়, খাবার ও অর্থ সংগ্রহ করছেন।
বিল্লাল আরও জানান, মাকে না হয় একদিন অন্যকিছু উপহার দেয়া যাবে। এই মুহূর্তে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। ব্যাংকটাতে সম্ভবত এখন ১০/১২ কেজির পাঁচ টাকার কয়েন আছে যেটার টাকার পরিমাণ হয়ত চার বা পাঁচ হাজারের কম বেশি হবে। কিন্তু এমন সংকটকালে এই অর্থ অতি সামান্য। তবু টাকাটা বন্যার্তদের কল্যাণার্থে দান করলে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগ্রহকৃত গণত্রাণ কর্মসূচির বিভিন্ন সামগ্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে এনে জড়ো করা হচ্ছে। এই সংগ্রহ তহবিলে রাজশাহী নগরীর শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে শুকনো খাবার, চাল, স্যালাইন, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, শুকনো জামাকাপড় ও শিশুর খাবার দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের ত্রাণ সংগ্রহ মনিটরিং ও সমন্বয় করেছেন ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, জেলা ভিত্তিক ও বিভিন্ন সংগঠন ভিত্তিক ত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা চাই সকল ত্রাণ তহবিল একত্রিত করে একসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে যেন পৌঁছাতে পারি। এতে আমাদের পরিবহণ খরচসহ অন্যান্য খরচ কম হবে।
জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। যেখানে তরুণ সমাজের নেতৃত্বে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একটা স্বৈরশাসনের পতন ঘটাতে পেরেছে। জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে কাজ করেছে। একইভাবে জাতির যেকোনো সংকটেও এরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জায়গা থেকেই সর্বস্তরের মানুষ আজ জাতির আরেক সংকটে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। আমরাও ছোট্টো একটা বিভাগ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২-৩ দিনে আমরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনলাইন ও সশরীরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়িতে প্রায় ৪৮ হাজার টাকা অনুদান দিতে পেরেছি। তাছাড়া আমরা বন্যা পরবর্তী সময়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্যেও একটা মোটামুটি অ্যামাউন্ট ফিক্সড করে রেখেছি ৷ যা আগামীতে ফান্ডের ওপর কমবেশি হতে পারে। এছাড়াও আমরা আরও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী।’
মুক্তাঙ্গন পাঠচক্রের সদস্য ফুয়াদুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পর্যন্ত সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। অন্যদিকে একাধিক সংস্থার ত্রাণ আহ্বানের পরেও পেশাজীবী মানুষ বিরক্ত হচ্ছেন না, অনেকে একাধিকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান মানুষের আত্মকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্বকে ভেঙ্গে দিয়েছে। সবাই এখন দেশ ও দশের কল্যাণে শরিক হতে উদগ্রীব। এই বাংলাদেশকে হতাশ হতে দেওয়া যাবে না, এই বাংলাদেশ রক্ষা পাক।’
এছাড়া রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমরা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছি। কয়েকজন সমন্বয়কারী কক্সবাজার থেকে নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করেছে।’
তিনি আরও জানান, তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। যারা বন্যার্তদের সাহায্য করতে চান তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জমা দিতে পারবেন।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষক এই তহবিলে তাদের বেতনের একাংশ দিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসছেন বলে জানা যায়।
(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/পিএস)

মন্তব্য করুন