আলফাডাঙ্গায় বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে মধুমতিপারের মানুষ

ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা অতি ভারী বৃষ্টির পানি ও দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয় চলছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুরে। এই ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার আগেই ভারতের ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয়ার খবরে নতুন করে উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। বিশেষ করে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে নদীতীরের এলাকাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পদ্মাপারের জেলা ফরিদপুরের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তো আছেই। পদ্মার শাখানদী মধুমতিপারের মানুষের মধ্যেও বন্যাভীতি ছড়িয়েছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ, গোপালপুর, বানা ও পাচুড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা একটু বেশিই আতঙ্কিত।
টগরবন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, সেখানকার ধানচাষি, মৎস্য ও সবজি চাষিদের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় মহিনুর মহিন জানান, চরডাঙ্গা উত্তরপাড়া ও চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম নদীভাঙন কবলিত। পাড়ে জিও ব্যাগ ফেললেও পানির তোড়ে তা নদীতেই বিলীন হচ্ছে। শিকারপুর নিচ পানাইল চরধানাইড় বন্যার ঝুঁকিতে। দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষও দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় পার করছেন।
মধুমতির কাতলাসুর অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে জানিয়ে গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর গ্রামের ধানচাষি মোহাব্বত বলেন, এভাবে চললে আশ্রয়ণ প্রকল্প স্বপ্ননগর বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখন যদি বন্যা আসে, তাহলে ধান, সবজি, ড্রাগন, পেয়ারা বাগান সব শেষ হয়ে যাবে।
বন্যা মোকাবেলায় তারা সচেতন ও প্রস্তুত আছেন বলে জানান গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম। বন্যার আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কে ইউএনও তাদের সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের ড্রাগন, লেবু ও পেয়ারা চাষি জাহিদ বলেন, ‘এই প্রজেক্টে দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। বন্যা হলে ড্রাগন, লেবু, পেয়ারার গাছ নষ্ট হয়ে যাবে৷’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ভ্যানচালক মিলন মোল্যা বন্যার কথা শুনে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ভেঁজা কণ্ঠে বলেন, ‘ভিটেমাটি হারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইছি। একদিকে মধুমতির ভাঙন, আবার যদি বন্যা আসে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাব?’
শরতের এই সময়ে বন্যা আঘাত করলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে মরিচ চাষি সাইফার মোল্যার। তিনি বলছিলেন, ‘মরিচ ও বেগুন পানির নিচে তলালে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ যেন এমন কিছু না করে।’
বুড়াইচ ইউনিয়নের টিকরপাড়ার মৎস্য চাষি আশরাফুজ্জামান লাবু। ৪০ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন মাছের ঘেরের পেছনে। পাশেই মধুমতি। বন্যার পানি ঘেরে ঢুকলে সব শেষ হয়ে যাবে তার। এমনই বলছিলেন তিনি।
বানা ইউনিয়নের চর বেলবানা গ্রামে বর্ষার সময় এমনিতেই অনেক বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। যাতায়াতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের ৷ বন্যার পানি ঢুকলে বাড়িঘর ও ফসলের ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা এই গ্রামে।
পাঁচুড়িয়ার দেউলির বাসিন্দা মুরাদুল্লাহ মুরাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই ইউনিয়নের বাঁশতলা বাজার, দেউলি, পশ্চিম চর নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনঝুঁকির মুখে। গত বছরের ভাঙনে বাঁশতলা ঈদগাহ ও মাদ্রাসা নদীগর্ভে চলে গেছে।েএকন বন্যার সৃষ্টি হলে বাড়িঘর, ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি।
যদিও ভাঙন এড়াতে জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু এতে ভাঙন খুব বেশি রোধ হবে বলে মনে করেন না স্থানীয়রা।
সাধারণ মানুষ বন্যা আতঙ্কে থাকলেও ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার তেমন সম্ভাবনা দেখছে না। গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানির প্রবাহ কমেছে ১২ সেন্টিমিটার।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াসমীন।
(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/মোআ

মন্তব্য করুন