সালথা-নগরকান্দা
কৃষকের হাসি পাটখড়িতে

ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দায় এবার পাটের ফলন ভালো হয়নি। আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন না কৃষক। তবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার বাড়ায় ও ভালো দাম হওয়ায় পাটখড়ি পুষিয়ে দিচ্ছে পাটের লোকশান।
পাটখড়ি ভালো রাখতে যত্ন নিতে ভুলছেন না কৃষক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটখড়ির পেছনে শ্রম দিচ্ছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। তাদের পরিশ্রমের দৃশ্য চোখে পড়ে ওই দুই উপজেলায়।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান প্রধান সড়ক ও গ্রামগঞ্জের রাস্তাগুলোর দুই পাশে এবং নদ-নদী আর খাল-বিলের পাড়ে নানা আঙ্গিকে সাজানো পাটখড়ির আটি। শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করা হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, পানির অভাবে ও তীব্র খরার কারণে এবার পাটের ফলন অর্ধেকও হয়নি। তাই পাট আবাদের ক্ষতি পাটখড়ি দিয়ে কিছুটা পোষাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা।
শুকনা পাটখড়ির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে কৃষকরা বলছেন, পাটখড়ি শুকানোর আগেই বিভিন্ন কার্বন ফ্যাক্টরির লোকজন কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছেন। এতে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি।
সালথার পাটচাষি হিরু শেখ ও হারুন মিয়া বলেন, এবার পাটের বীজ বপনের পর থেকে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। শ্যালো মেশিন দিয়ে গভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যায়নি। তাই পাটের গাছ যেমন বেশি বড় হয়নি, তেমনি আঁশ ভালো হয়নি। প্রায় জমিতে ফলন হয়েছে অর্ধেক। তার ওপর বাজারে পাটের দাম কম।
তারা আরও বলেন, পাটের ফলন ভালো না হওয়ায় পাটখড়িও কম পাওয়া গেছে। প্রতি বিঘায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ আঁটি পাটখড়ি মিলেছে। প্রতি আঁটি ৬ থেকে ৭ টাকা দরে বিক্রি করে প্রতি বিঘায় ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার পাটখড়ি বিক্রি করেন বলে জানান তারা। এতে পাটের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে গেছে।
নগরকান্দার পাটচাষি আবুল বাসার বলেন, ‘দেশে অসংখ্য কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠায় পাটখড়ির চাহিদা বেড়েছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। বাণিজ্যিকভাবে পাটখড়ির ব্যবহার বাড়ায় আমরা লাভবান হচ্ছি।’
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, গ্রামাঞ্চলে পাটখড়ির প্রচুর ব্যবহার আছে। মাটির চুলায় রান্নার প্রধান জ্বালানি পাটখড়ি। বসতবাড়ির প্রাচীর ঘিরে রাখার কাজেও পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে পাটখড়ি। পরে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
দেশে পাটখড়ি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারিসহ নানা পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। এটা চলমান থাকলে পাটখড়ির চাহিদা বাড়বে, কৃষকেরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/মোআ

মন্তব্য করুন